খােলা বাজার২৪। বৃহসপতিবার, ১৯অক্টোবর, ২০১৭: ১৩৭তম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলনে ইমারজেন্সী আইটেম হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি গৃহীত হয়েছে। আজ বিকেলে আইপিইউ সম্মেলনের সাধারণ সভায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত হয়।
এর আগে সোমবার আইপিইউ সম্মেলনে ইমারজেন্সী আইটেম হিসেবে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত রোহিঙ্গা ইস্যুটি ভোটাভুটিতে ১০২৭ ভোট পেয়ে গৃহীত হয়। এর বিপরীতে মিয়ানমার পায় মাত্র ৪৭ ভোট। সংসদ সচিবালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গণসংযোগ শাখার সহকারি পরিচালক স্বপন কুমার বিশ্বাস স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইপিইউ সাধারণ সভায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি গৃহীত হবার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহল খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্পদ্রায়ের ওপর চলমান মানবিক ট্রাজেডি বন্ধে অবিলম্বে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও মানবাধিকার পরিষদের হস্তক্ষেপ চেয়েছে আইপিইউ। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে সদ্য সমাপ্ত ১৩৭তম অধিবেশনে এ আহ্বান জানিয়েছে আন্ত-সংসদীয় এই ইউনিয়ন। সৃষ্ট সঙ্কট আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য হুমকি উল্লেখ করে আইপিইউ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের প্রতিও একই আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, খাবার, ও চিকিৎসা সেবা দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়। বৈশ্বিক সংসদীয় এই জোটে ১৭৩ টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা, তাদের জন্য মানবিক সহায়তার পরিধি বৃদ্ধি করা এবং রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় সামিল হওয়ার জন্য এবারের অধিবেশনে সকল সদস্য পার্লামেন্টকে আমন্ত্রন জানানো হয়। রাখাইনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানায় আইপিইউ। অধিবেশনে গৃহীন প্রস্তাবে, সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার পার্লামেন্টের নিরব ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করা হয়। প্রস্তাবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের ভেতরে সেফ জোন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরালো আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে, জাতিসংঘের চাইতে বয়সে পুরনো, সারা বিশে^র ১৭৩ টি দেশের ৬৫০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল সর্ববৃহৎ সংসদীয় ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুটি গৃহীত হবার বিষয়টি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিশ^জনমতের প্রতিফলন বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, আইপিইউ সম্মেলনে ইমারজেন্সী আইটেম হিসেবে বাংলাদেশের কোন প্রস্তাবনা গৃহীত হবার ঘটনা এবারই প্রথম। আজ সমাপ্ত আইপিইউ সম্মেলনে ২০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া।
এদিকে আইপিইউ সম্মেলন চলাকালে বাংলাদেশ সংসদীয় দলের সঙ্গে রাশিয়ার সংসদীয় দলের এক দ্বি-পক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ.স.ম. ফিরোজসহ অন্যান্য সংসদ সদস্যবৃন্দ। রাশিয়া সংসদীয় দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার ইলিয়াস উমা খান। আলোচনাকালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মায়ানমারের জাতিগত নিধনের ভয়াবহতা রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের কাছে সবিস্তারে তুলে ধরেন। মানবিক এ সমস্যার সমাধানে রাশিয়া ভূমিকা রাখবে বলে রাশিয়ার ডেপুটি স্পিকার বাংলাদেশ সংসদীয় দলকে আশ্বস্ত করেন।