Mon. Apr 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। শনিবার, ২৮অক্টোবর ২০১৭: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক সংলাপে অংশ নেওয়া বিএনপির প্রতিনিধিদলের কাছে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করে দেশব্যাপী তর্ক-বিতর্কের কেন্দ্রে আসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা। কিন্তু দলটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপির কিছু নেতা মনে করেন, সিইসির বক্তব্যে নতুনত্ব কিংবা উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো কিছু নেই।

১৫ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসে সিইসি বলেছিলেন ‘জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা।’ এর পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর ভাষ্য ছিল, এটা বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য সিইসির কৌশল হতে পারে। তিনি বলেছিলেন, ১৮ অক্টোবর ইসির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠকে এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাইবেন। কিন্তু সংলাপ শেষে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল বলেছিলেন, ‘ব্যাখ্যা পেয়েছি, কিন্তু বলব না।’

ওবায়দুলের ওই বক্তব্যের পর ২৬ অক্টোবর সিইসি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমার কাছে আওয়ামী লীগ নেতারা কোনো ব্যাখ্যা চাননি। হয়তো আমার বক্তব্যে তাঁরা ব্যাখ্যা পেয়ে গিয়েছিলেন।’

‘জিয়াউর রহমানকে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা বলার বিষয়ে যা বলেছি, তা তথ্যভিত্তিক।’

সিইসি আরো বলেন, ‘নিজে ধারণ করি বলেই জিয়াউর রহমানকে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা বলেছি। তবে কাউকে খুশি করার জন্য বলিনি। যেটা বলেছি সেটা তথ্যভিত্তিক। আমি নিজেও এটা অউন (ধারণ) করি।’

নুরুল হুদা বলেন, ‘আগে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। তিনি (জিয়াউর রহমান) এটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ভিত্তিতেই দেশে নির্বাচন হয়েছিল এবং ওই নির্বাচনে অনেক দল অংশগ্রহণ করে।’

সিইসির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশের কিছু নেই। তিনি যা সত্য, তা বলেছেন। কমিশনের বক্তব্য সবই ভালো। সম্ভবত সাংবিধানিক নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে যা বলার কথা, সে ব্যাপারে তিনি কৃপণতা করেননি। বিএনপির অর্জন তিনি তুলে ধরেছেন।’

‘তবে তার অর্থ এই নয় যে, সহায়ক সরকার ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সমস্যা সমাধান না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সিইসি ভালো ভালো কথা বলেছেন। তবে তিনি নতুন কিছু বলেননি। তাই আমাদের মাঝে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া নেই। গণতন্ত্রে অবদানের জন্য বিএনপির প্রশংসা করেছেন। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তিনি কত দূর কী করতে পারবেন, সেটি ভবিষ্যৎ বলে দেবে।’

আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কোনো বিবৃতি না দিলেও দলের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী একটি বিবৃতিতে সিইসির বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই বক্তব্য অনভিপ্রেত এবং উদ্দেশপ্রণোদিত। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।’

এ বিষয়ে ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘ইতিহাস জিয়াউর রহমানকে কারফিউ গণতন্ত্রের প্রবর্তন বলে জানে। আদালতও তাঁর শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। সে কারণে সিইসির বক্তব্যকে জনগণ ভালোভাবে নেয়নি।’

অন্যদিকে সিইসির বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের পর প্রতিবাদ করে সংলাপ বর্জন করেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি ‘ইতিহাস বিকৃত করে’ বক্তব্য দেওয়ায় সিইসির পদত্যাগ দাবি করেন।