খােলা বাজার২৪। বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭: মো: রাসেল মিয়া: নরসিংদীর শিবপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে কিশোরী আজিজা বেগম (১৩) নিহতের ঘটনায় আজিজার প্রেমিক রোমানসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার ও মঙ্গলবার নরসিংদীর পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- রায়পুরার উপজেলার চর মরজাল গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে, নরসিংদী পৌর এলাকার ব্রাহ্মণপাড়া মহল্লার কাজল এর বাড়ির ভাড়াটিয়া মো: রোমান হোসেন (আজিজার প্রেমিক) (২০), তার বন্ধু সদর উপজেলার কামারগাঁও এলাকার আলম মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (২১) ও সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি এলাকার মনু মোল্লার বাড়ির ভাড়াটিয়া জহু মিয়ার ছেলে মো: রেজাউল করিম। এ সময় গ্রেফতারকৃতদের নিকট থেকে চুরি হওয়া আজিজার চাচী বিউটি বেগমের মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা আজিজাকে নরসিংদী সদর এলাকায় শ্লীলতাহানি করে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবী করেছিল বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। বুধবার (১ নভেম্বর) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম এসব তথ্য জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর বরাত জানানো হয়, ঘটনার দিন দুপুরে কিশোরী আজিজা তার প্রেমিক রোমানের মোবাইলে ফোন করে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য পরিবারের লোকজনকে কিছু না বলে নরসিংদী শহরে যায়। দেখা হওয়ার পর পরিবার জোরপূর্বক আজিজার বিয়ে ঠিক করেছে বলে প্রেমিক রোমানকে জানায় এবং তিনমাসের জন্য একটি ঘর ভাড়া করার দাবী জানায়। রোমান হোসেন ঘর ভাড়া নিতে হলে টাকা লাগবে বলে জানালে আজিজা তার কাছে ৩টি মোবাইল সেট, কিছু গহনা ও ৫ হাজার টাকা আছে বলে জানায়। পরে প্রেমিক রোমান তার বন্ধু সুজন, রেজাউল করিম ও সজীবকে খবর দেয়। তার বন্ধুরা এসে আজিজার নিকট থাকা টাকা, গহনা ও মোবাইল সেট আত্মসাতের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামতে প্রেমিক রোমান কিছুক্ষণের জন্য নরসিংদী শহরে তার এক নিকট আত্মীয়ের বাড়ীতে একটি কক্ষ ভাড়া করে সেখানে আজিজার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এসময় রোমানের সহযোগী সুজন তা মোবাইলে ধারণ করে। পরে আজিজাকে এই ভিডিও দেখিয়ে ভয় দেখানোর মাধ্যমে গহনা, টাকা ও মোবাইল সেট নেয়ার চেষ্টা করে। আজিজা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রেমিক রোমানের বন্ধু সুজন আজিজার (আজিজার সঙ্গে থাকা মোবাইল থেকে) ভাইয়ের কাছে মোবাইলে ফোন করে তার বোনকে একটি ছেলের সাথে আটক করা হয়েছে বলে দাবী করে এবং তাকে ছাড়িয়ে নিতে হলে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। অন্যথায় ইন্টারনেটে ভিডিও ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এসময় আজিজার ভাই সুজন মুক্তিপণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে আজিজার খালা তারাবানু ফোন করে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিতে রাজি হয়ে আজিজার কোন ক্ষতি না করার জন্য অনুরোধ জানান। এতে রাজি হয়ে ওই প্রেমিক চক্র আজিজার সঙ্গে থাকা মোবাইল সেট, গহনা ও টাকা রেখে দিয়ে মুক্তিপণ না দিলে আবারও ইন্টারনেটে অশ্লীল ভিডিও ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে আজিজা একাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে একা বাড়ী ফিরে। ফেরার সময় বাড়ীর পাশের বাজারের মিজান নামে একজনের দোকান থেকে ১ লিটার কেরোসিন তেল কিনে নিয়ে যায় বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। রাত নয়টার দিকে স্থানীয়রা কিশোরী আজিজাকে বাড়ীর পাশের ঝোঁপঝাড় থেকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে ঢাকা মেডিকেলে মারা যায় আজিজা। এ ঘটনায় মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে আজিজার চাচী বিউটি বেগমসহ চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩ জনকে আসামী করে শিবপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের পিতা আব্দুস সাত্তার। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় নরসিংদীর পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রেমিক রোমান ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে। আটককৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। তবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।