Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। সোমবার,৬ নভেম্বর, ২০১৭: দেশব্যাপী ১০০ অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে ইতিমধ্যে ৭৯ টি জোনের কার্যক্রম শুরু হলেও উপেক্ষিত দেশের অন্যতম প্রধান ২ এলাকা উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল। পিছিয়ে থাকা ২ এলাকাকে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক জোন গঠনে অনেকটা হতাশ স্থানীয়রা। সেখানকার ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এবং সকলের জন্য সমান নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে প্রত্যেকটি এলাকাকে সমান সুযোগ দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের দাবি, কোন এলাকাকেই আলাদাভাবে দেখা হচ্ছে না। সম্ভাবনা অনুযায়ী প্রত্যেক এলাকায় শিল্প জোন নির্মাণ করা হবে।

বেজা সূত্র জানায়, সরকার ঘোষিত ১০০ জোনের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ৭৯টি অর্থনৈতিক জোন ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। আরো ৯ টি জোনের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কয়েকটি জোনে জমি বরাদ্ধ দেয়া শুরু করেছে বেজা। নির্মাণাধীন ও সিদ্ধান্ত নেয়া জোনগুলোর সবগুলোই এই ২ বিভাগের বাইরে। ভোলায় ১টি জোন তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করার পর ওই এলাকায় গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কারের কারণে এর কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, বিভাগ ২টিতে ১৩ জেলায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি। দেশের যে অঞ্চলগুলোতে বেশি দরিদ্র মানুষ বাস করে তার মধ্যে এই জেলাগুলো অন্যতম।

রংপুর চেম্বার অব কমার্সের এক নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী যখন এলাকাভিত্তিক অর্থনৈতিক জোন গঠন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন খুব আশাবাদি হয়েছিলাম। এখন দেখছি সেই আশায় গুড়েবালি। ইতিমধ্যে ৮৮ টি অর্থনৈতিক জোন গঠন করলো অথচ এখানে একটাও নেই। অন্যদিকে অনেক জেলায়ও ৩টি অর্থনৈতিক জোন হয়েছে। বেজা তাদের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের মত আচরণ করছে বলে মনে করেন তিনি।

মাসুম নামে বরিশালের এক ব্যবসায়ী জানান, এই এলাকায় রয়েছে গ্যাসের খনি, সস্তা শ্রম, সল্প মূল্যে জমি কেনার সুবিধা। নদী-প্রধান এলাকা হওয়ায় বরিশালে পণ্য পরিবহনের খরচও কম। এছাড়া পায়রা সমুদ্রবন্দর বরিশাল বিভাগে হওয়ায় শুধু বরিশালেই ৪ টি অর্থনৈতিক জোন হতে পারত। বেজার কথা অনুযায়ী বরিশালে সর্বোচ্চ ২ টি জোন হতে পারে। ১ কোটিরও বেশি মানুষের এলাকায় এত সুবিধা থাকার পরেও মাত্র ২ টি জোন হতাশাজনক। আমার ধারণা তারা আমাদেরকে অন্য চোখে দেখছে। এজন্য তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বেজা চেয়ারম্যান পবণ চৌধুরী বলেন, আমরা কাউকে আলাদাভাবে দেখছি না। রংপুরের নীলফামারিতে একটি অর্থনৈতিক জোনের জন্য জমি বরাদ্ধ নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আরো একটি হবে। এছাড়া ওই এলাকায় কি ধরণের শিল্প করা যায় সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। বরিশালেও ২টি জোন হতে পারে। ১৩টি জেলা অথচ মাত্র ৪টি জোন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমাদের দেখতে হবে কোন এলাকা শিল্পবান্ধব। বরিশালেতো চা বাগান করা সম্ভব না। আবার রংপুরে আমড়া বাগানও হবে না। এছাড়া এলাকাগুলোতে মানসম্মত বিমানবন্দরও নেই। আমাদেরকে সব বিষয়গুলোই ভেবে দেখতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক জোনের কার্যক্রম নিয়েই প্রশ্ন তোলা যায়। এটা একটা অগোছালো প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হচ্ছে। জোনগুলোতে সরকারের কোনো অংশীদারিত্ব রাখা হয়নি। এছাড়া যেভাবে খুশি সেভাবে জোন গঠন করা হয়েছে। বিদেশি কোনো জোনের সাথেও দেশের জোনসমূহের অংশীদারিত্ব নেই। তার মতে মানুষকে শহরমূখী ঠেকাতে এবং গ্রামাঞ্চালকে এগিয়ে নিতে প্রত্যেকটি জেলায় অর্থনৈতিক জোন করার প্রয়োজন। সেটা সম্ভবও ছিলো। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই জোন গঠনের মূল লক্ষ্য মুখ থুবড়ে পরতে পারে বলে মনে করেন তিনি।