Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭: বর্তমানে আবাসন শিল্প নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। বিভিন্ন ধরনের কর আরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পাঁচ বছর ধরে কোম্পানিগুলো লোকবল ছাঁটাই করছে। অর্থের অভাবে ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে আবাসন উদ্যোক্তাদের ঋণ খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

শনিবার রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যৌথ সভায় এসব দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। সংগঠনের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। এ সময় রিহ্যাবের জৈষ্ঠ সহ-সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, এনবিআর সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন ও পারভেজ ইকবালসহ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

বর্তমনে ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ক্রেতারা অনেকেই নিবন্ধন করছেন না। বিভিন্ন ধরনের করের চাপে ফ্ল্যাট কেনার আগ্রহও কম তাদের। এতে সরকার বড় অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতে ফ্ল্যাট ও প্লট নিবন্ধনের মোট ব্যয় সাড়ে ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বৈঠকে রিহ্যাব সভাপতি মূল প্রবন্ধে আয়কর অধ্যাদেশ সংশোধনের চারটি প্রস্তাবসহ আটটি সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার ফ্ল্যাট বেচাকেনা হয়। ক্রেতারা ফ্ল্যাট কিনে পুরো টাকা পরিশোধ করলেও অনেকেই নিবন্ধন করছেন না। নিবন্ধনের মোট ব্যয় বেশি হওয়ায় আগ্রহ হরিয়ে ফেলছেন তারা। বর্তমানে ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন ফি ও কর সব মিলে ক্রয়মূল্যের সাড়ে ১৫ শতাংশ সরকারকে দিতে হয়। এরমধ্যে গেইন ট্যাপ ৪ শতাংশ, স্ট্যাম্প ডিউটি ৩ শতাংশ, নিবন্ধন ফি ২ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ২ শতাংশ ও ভ্যাট সাড়ে ৪ শতাংশ (দেড় থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ)। এটি কমিয়ে মোট সাড়ে ৬ শতাংশ করার দাবি জানান তিনি। এছাড়া সাইনিং মানির উপর ১৫ শতাংশ কর এখন ডেভেলপারদের দিতে হয়ে। এই কর হার সাড়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন তিনি।

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ফ্ল্যাট ও প্লট কেনার ক্ষেত্রে অর্থের উৎস ব্যাখ্যা করা থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন। এটি না হলে অর্থ বিদেশে পাচার হওয়া বাড়াবে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোমের সুযোগ থাকায় প্রচুর অর্থ বিদেশে যাচ্ছে। সেসব দেশে অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় না। এ কারণে এ দেশে আইনের সংশোধন করা প্রয়োজন। আবাসন খাতে স্বচ্ছতা ও বিনিয়োগ বাড়াতে আবাসন প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন এক কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থের উৎস্য সম্পর্কে প্রশ্ন না করার প্রস্তাব করেন তিনি।

এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, আবাসন শিল্পের রাজস্ব সংক্রান্ত জটিলতা আর থাকবে না। ভবিষ্যতে আবাসনকে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নীতিগত সহযোগিতা করা হবে। তিনি বলেন, আবাসন শিল্পের ৮টি সমস্যা চিহিৃত করা হয়েছে। এনবিআর-রিহ্যাব যৌথ ওয়াকিং কমিটির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, এনবিআর আবাসন খাতে নজর দিচ্ছে। সম্ভাবনা লাগাতে কিছু নীতি সহায়তা অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেওয়া হবে। যাতে এ শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হয়।

নজিবুর রহমান বলেন, রিহ্যাব-এনবিআর যৌথভাবে কর্মশালা বা প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। আবাসন খাতকে এগিয়ে নিতে এনবিআরের যত নির্দেশনা রয়েছে, সেগুলো একসঙ্গে করে একটি আদেশ জারি করা হবে। তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ আয়কর আইনের সংস্কার করা হচ্ছে। এটি সংশোধন করে বাংলায় নতুন আয়কর আইন করা হবে। তখন রিহ্যাবের দাবি বিবেচনা করা হবে।