খােলা বাজার২৪। সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইয়েমেন ও তিউনিসিয়ায় দেয়া সহায়তা ব্যাপকভাবে কমিয়েছেন। এসময় ব্রিটেন ইয়েমেনে সৌদি আরবের যুদ্ধের জন্যে অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি করেছে ৫’শ গুণ। আর সৌদি আরব সফরের সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেশটিতে ১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির আশ্বাস পান। অথচ ২০১৬ সালে সালে তিউনিশিয়ায় মার্কিন সহায়তা ছিল ১৪১ মিলিয়ন ডলার যা আগামী বছর কমে দাঁড়াচ্ছে ৫৪ মিলিয়ন ডলারে। মিডিল ইস্ট মনিটর
ইয়েমেনে সৌদি আরবের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে অবকাঠামো ধসে পড়েছে, কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে ৫ লক্ষাধিক মানুষ ও দুভির্ক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও দেশটিতে মার্কিন সহায়তা ২০১৬ সালে যেখানে ছিল ২০৩ মিলিয়ন ডলার সেখানে তা ৮২ ভাগ হ্রাস পেয়ে আগামী বছর নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৩৫ মিলিয়ন ডলারে। তবে ইসরায়েল দেয়া মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থিতিশীল থেকে ২০১৬ ও ২০১৮ সালের মধ্যে তা দাঁড়িয়েছে ৩.১ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য মিসরে দেয়া এধরনের সামরিক সহায়তা কমেছে ১.৪ থেকে ১.৩৮ বিলিয়ন ডলারে।
নরওয়ের শরণার্থী পরিষদের সমর্থন ও নীতি উপদেষ্টা সারা টেসোরিয়েরি মিডিল ইস্ট মনিটরকে বলেন, এ বছর চারটি দেশে দুর্ভিক্ষময় পরিস্থিতি চলছে। এসব দেশের মধ্যে ইয়েমেনের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও নাইজেরিয়া দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করছে। যেসব দেশ মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকে তারা এরচেয়ে অন্য বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে মানবিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বছরের শুরুতে জাতিসংঘ ও তার অংশীদার দেশগুলো ইয়েমেনে ১২ মিলিয়ন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ২.১ বিলিয়ন ডলার সাহায্য প্রত্যাশা করে। কিন্তু পাওয়া যায় প্রত্যাশিত সহায়তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ। এ ফলে ইয়েমেন পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়ছে। এ বছরের শুরুতে দেশটিতে ১৮ মিলিয়ন মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন ছিল যা এখন ২০ মিলিয়নে পৌঁছেছে। দেশটির ৭ মিলিয়ন মানুষ জানে না কখন তারা কি খাবে। দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অর্ধেকই অকার্যকর হয়ে গেছে। দিনে ৭ হাজার মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে যার অধিকাংশই শিশু।
সারা আরো জানান, ইয়েমেনে দ্বন্দ্ব নিরসনের কোনো লক্ষণ নেই বরং তা আরো তীব্র হচ্ছে। একটি যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার জন্যে তারা অর্থ খুঁজে পায় কিন্তু কলেরা বা দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে নয়। দেশটিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অন্যত্র ছুটে গেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও ইয়েমেন এমনিতেই গরিব দেশ ছিল।
ইয়েমেনের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু হাদিকে পুনরায় দেশটির ক্ষমতায় বসাতে সৌদি আরবের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে দেশটির জঙ্গি বিমানগুলোর বোমা বর্ষণে এপর্যন্ত ৮ হাজার মানুষ মারা গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু। বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ১২ সহ¯্রাধিক।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে অন্য দেশকে দেয়া দেশটির সহায়তার ৩২ ভাগ অর্থাৎ ১৯ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। রেড ক্রসের ইন্টারন্যাশনাল কমিটির মুখপাত্র ইয়ান ওয়াটসন আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘর্ষের মত ট্রাজেডির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। ইরাকে মসুল মুক্ত হওয়ার পরও দেশটির পুনর্গঠনে বিপুল অর্থ সহায়তার প্রয়োজন এবং এজন্যে বহু বছর লেগে যাবে। ২০১৬ সালে বাগদাদ ৪০৫ মিলিয়ন ডলার মার্কিন সহায়তা পেলেও আগামী বছর ৩৪৭ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে তিনি মার্কিন সরকার ও করদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, জীবন-রক্ষাকারী মানবিক সাহায্যের জন্যে তাদের এ দান উদারতার প্রতীক হিসেবে দেখতে পাচ্ছি। ইউএস এইডের বৈদেশিক সহায়তা বিভাগের পরিচালক জেরেমি কনিডিঙ্ক গত মে মাসে গার্ডিয়ানে লেখা এক নিবন্ধে বলেন, মানবিক সহায়তা হ্রাস করা মানে এর জন্যে প্রয়োজনীয় মানুষকে হত্যা করা। এসব সহায়তার প্রতিটি ভগ্নাংশ হ্রাসে লাখ লাখ মানুষের ক্ষতি হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু রিপাবালিকান সহকর্মী বাজেট বরাদ্দে এধরনের সহায়তার কাটছাটের সমালোচনা করেছেন। রিপাবলিক সিনেট সাবকমিটির চেয়ারম্যান লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন এধরনের সহায়তা হ্রাসে বিশ্বের অনেক মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়বে।
২০১২ থেকে ২০১৫ সালে তিউনিসিয়াকে মার্কিন প্রশাসন দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এধরনের ঋণ যাতে কাটছাট না হয় সেজন্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইয়োসেফ ছায়েদ ওয়াশিংটন সফর করছেন।