Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। রবিবার , ২৬ নভেম্বর, ২০১৭: নরসিংদী প্রতিনিধি মো:রাসেল মিয়া: নরসিংদীতে ঘরে ঘরে চলছে সুস্বাদু বাহারী পিঠার আয়োজন, বহুকাল ধরেই বাঙালীর লোক ঐতিহ্য পিঠার ইতিহাস বাংলাদেশের গ্রামীণ মানুষ শীতের ঋতুতে করে এ আয়োজন। শীতে বিভিন্ন ধরনের পিঠার গুরুত্ব এবং ভূমিকা সে তো ইতিহাসের কালজয়ী সাক্ষী। গ্রামীণ মানুষদের কাছে পিঠা ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, পিঠার এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় শহরের সবখানে এখন ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ অন্য ঋতুর চেয়ে শীতঋতু আসলেই যেন খুব বেশী পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। যুগ যুগ মানুষেরা সুস্বাদু উপাদেয় পিঠা খাদ্যদ্রব্যে উৎসব পালন করে আসছে। হেমন্ত আসতে না আসতেই বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন। চলে পিঠা বানানোর প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে গ্রামেগঞ্জে তৈরিও হচ্ছে নানান স্বাদের পিঠা। শুধুই যে গ্রামে তা নয়, নরসিংদী শহরের আনাচে কানাচে গড়ে ওঠে বিভিন্ন পিঠার দোকান।

এই দোকানেও পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায় গ্রামের মানুষদের মতো। তবে গ্রামীণ জনপদের মানুষ যে ভাবে পিঠা তৈরী করে শহরের মানুষ ততটা ভালো পারে না। গ্রামই তো পিঠা তৈরি করার শিকড় স্হান। শীতকালের আমেজে খেজুর গুড় আর রস ছাড়া তো পিঠা তৈরীর পূর্ণতা কখনই উৎকৃষ্ট হয় না। খেজুরে রস দিয়ে ভাপা পিঠা, পুলি, দুধ চিতই পায়েস যাই হোক না কেন শীতঋতু আর খেজুর গাছ ছাড়া অসম্ভব। শীতঋতুতে গ্রামে গঞ্জে খেজুর রস আর শীতের হরেক রকম পিঠা নিয়েই তো হয় উৎসবের আমেজ। বাড়িতে তাদেরই নিজ আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত করে পিঠা খাওয়ানো ও জামাই মেয়েদের বাড়িতে নিয়ে এসে নতুন কাপড় চোপড় উপহার দেওয়ার যেন হাজার বছরের রীতি।

উনুনের পাশে বসে গরম গরম ধোঁয়া বা ভাপ উঠার ভাপা পিঠা খেজুর গুড় বা গাঢ় খেজুর রসে চুবিয়ে খাওয়ার ষোলকলা পূর্ণ হয় না শীতঋতু ছাড়া। শুভ সকালে সারারাত্রির বাসি, ঠান্ডা ভাপা পিঠা খেজুর রসে চুবিয়ে খেতে মন্দ লাগে না। মজার বেপার হল শীতকালের এই অমৃত ভাপা পিঠা শুধুই যে গ্রামের মানুষের কাছে প্রিয় তা কিন্তু নয়। শহরের অলিতে গলিতেও দেখা যায় অনেক ভাপা পিঠার দোকান। নারিকেল আর খেজুর গুড়ের সমন্বয়ে চালের আটা মিশ্রণে ভাপা পিঠা তৈরীও হয়। তবে বিভিন্ন বয়সের মানুষ হুমড়ি খেয়েই সেগুলো পিঠা খায়। বলতেই হয় গ্রামই পিঠা তৈরীর শ্রেষ্ট স্হান। এলাকা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নাম করনে চিহ্নিত পিঠা বা আলাদা গঠনে নকশাকৃতির পিঠা লক্ষনীয়।

গ্রামীণ জনপদের মানুষ অগ্রহায়ণ মাসে সাধারণতঃ নতুন ধান উঠার পর পরই যেন পিঠা তৈরির আয়োজন শুরু করে। যেমন:- নকশি পিঠা, ভাঁপা পিঠা, ছাঁচ পিঠা, রস পিঠা, দোল পিঠা, পাকান পিঠা, চিতই পিঠা, মুঠি পিঠা, ছিট পিঠা, পাতা পিঠা, খেজুরের পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, ডিম চিতই পিঠা, জামদানি পিঠা, ভেজিটেবল ঝাল পিঠা, সরভাজা পিঠা, ছিটকা পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, চাঁদ পাকন পিঠা, মালপোয়া পিঠা, কাটা পিঠা, তেজপাতা পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, মালাই পিঠা, নারকেল পিঠা, আন্দশা পিঠা, পুুুডিং পিঠা, মুঠি পিঠা, সুন্দরী পাকন পিঠা, রসফুল পিঠা, মেরা পিঠা, সেমাই পিঠা, দুধরাজ পিঠা, ঝিনুক পিঠা, ঝুড়ি পিঠা, ফুল পিঠা, কলা পিঠা, ক্ষীর কুলি, কুশলি পিঠা, ফিরনি পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি পিঠা, নারকেল জেলাফি পিঠা, চিড়া মোয়া পিঠা, নারকেল নাড়– পিঠা এবং কাউনের মোয়া পিঠা ইত্যাদি নাম অঞ্চল ভেদে পিঠা হিসেবেই বিবেচক্য।

এদেশের হতদরিদ্র গাঁ গেরামের মানুষ পিঠার আদলেই ধরে কিছু কিছু খটকা লাগা উপরোউলে­খিত পিঠা নামক খাবার সামগ্রীকে। কারণ, তাদের সাধ ও সাধ্যের বাহিরেই তো পরিচালিত হয় জীবন। শীত আয়োজনে সত্যিই এমন ধরণের পিঠা গুলোকে ধনী, গরীবের পার্থক্যে নিয়ে না এসে নজরুল ইসলাম তোফা গ্রামীণ সকল বাঙালির রসনা বিলাসের উপাদেয় পিঠার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে। গ্রামীন বাঙালির পিঠা উৎসবের রসনা বিলাসী দিক হয়তো পৃথিবীতে আর নেই।