Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। সোমবার , ২৭ নভেম্বর, ২০১৭:বছর ঘুরে আবারও চলে এসেছে শীতকাল। আর এই শীতের সময়টাতে সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয় শিশুরা। সাধারণত আমাদের দেশের অপুষ্ট কম ওজনের শিশুরাই বিভিন্ন রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। আর দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা সুষম খাদ্য এবং যত্নের অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভোগে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে। এ সময়ে শিশুরা কি ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় এবং কীভাবে প্রতিকার পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।

শীতে শিশুদের রোগসমূহ ও প্রতিকারের উপায়: মূলত এ সময় শিশুরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা, কাশি, সর্দি এ্যাজমায় সিজোনাল জ্বর এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর: শিশু অস্বস্তিবোধ করে, কান্নাকাটি করে। খেতে চায় না। এ জন্যে ডাক্তারী পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে সঙ্গে সঙ্গে আদার রস, লেবু, তুলসি পাতার রস মধু মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ালে বেশ ভাল উপকার পাওয়া যায়।
টনসিলে প্রদাহ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেলে টনসিল দুর্বল হয়ে ফুলে যেতে পারে। বিশেষ করে ঠান্ডা জনিত কারণে টনসিল বাড়তে পারে যা থেকে বাত জ্বর হতে পারে। ফলে জ্বর ও গলা ব্যথা হতে পারে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে শিশুকে গড়গড়া করাতে হবে। গরম কাপড় জড়িয়ে শিশুর গলা উষ্ণ রাখতে হবে।

হুপিং কাশি: হুপিং কাশি একটি সংক্রামক রোগ। ঠান্ডা লাগা থেকে শিশুর হুপিং কাশি হতে পারে। কাশি মারাত্মক আকার ধারণ করলে শিশু বমি করতে পারে। চোখ, মুখ লাল বর্ণ ধারণ করে। হুপিং কাশির ফলে অপুষ্টি, মস্তিকের ক্ষতি হতে পারে। তাই, এসব লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন ও সুষম খাবার খাওয়াতে হবে।

নিউমোনিয়া: ০-৫ বছরের শিশুদের বেশি হতে দেখা যায়। শ্বাস গ্রহণে কষ্ট, শব্দ হওয়া, কাশি সেই সঙ্গে হালকা জ্বর দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় শিশুকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে। আক্রান্ত শিশু যদি খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং নিস্তেজ হয়ে পড়ে তখন বুঝতে হবে শিশুর অবস্থা বিপজ্জনক ।

তড়কা বা খিঁচুনী: সাধারণত চার মাস থেকে ছয় বছরের শিশুদের প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ শিশুর খিঁচুনী জ্বর হয়। এ সময় জ্বরের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে। এ অবস্থায় শিশুর গায়ের পোশাক খুলে একপাশে কাত করে রেখে অনতিবিলম্বে শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

জিব ও মুখের কোণায় ঘা: খাদ্যে ভিটামিন বি-২ ও আয়রণের ঘাটতি হলেই ঠোঁটের কোণায় ও মুখে ঘা হয়ে থাকে। এসব উপসর্গ দেখা দিলে বেশি পরিমাণে শাকসবজি ও ফল খাওয়ানো উচিত। এছাড়া মুখের ঘায়ের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

হাঁপানি: অনেক সময় পারিবারিক সূত্রে অথবা প্রসবকালীন জটিলতার কারণে শিশুদের হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের ঠান্ডা, এলার্জি আছে শীত ঋতুতে এর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। আক্রান্ত শিশুকে মাথা উঁচু করে আলো বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে রাখতে হবে। এলার্জি হলে ঠান্ডা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।

হাত- পা ফেটে যাওয়া: শীতের সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকে। এ সময় শিশুদের বা বড়দেরও হাত-পায়ের চামড়া কুঁচকে যায় এবং ফেটে যায়। এ অবস্থায় শিশুকে অতিরিক্ত ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে এবং পিউর ভেজলিন ও গিøসারিন ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

খোস পাঁচড়া: বিশেষ করে বস্তি এলাকা ও ঘনবসতিপূর্ণ, নিম্নস্তরের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়ে থাকে। শীতে সব ধরনের চর্ম রোগ বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় আক্রান্ত শিশুর ব্যবহার্য কাপড় ও বিছানা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুর গোসলের সময় পানিতে স্যাভলন মিশিয়ে গোসল করাতে হবে। শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।

সতকর্তা অবলম্বন: শিশু রোগমুক্ত, সুস্থ-সবল থাকবে এই প্রত্যাশা সবাই করেন। তাই শিশুকে সুস্বাস্থ্য ও নিরোগ রাখতে শুরু থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। সঠিক সময়ে টিকাদান ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। তারপর পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, নিরাপদ পানি এমনকি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। তাহলে আমাদের শিশুকে রোগব্যাধি থেকে অনেকাংশে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে।