Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

নিজেদের নিয়ে শঙ্কিত আরবরাখােলা বাজার২৪। রোববার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করায় আরববিশ্ব নিন্দা জানাচ্ছে, ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ করছে, জেরুজালেমে চলছে সহিসংতা। ট্রাম্পের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে এবং অচিরেই এসব ঘটনা অকল্পনীয় ভয়াবহতায় রূপ নিতে যাচ্ছে—আপাতদৃষ্টিতে এটাকে বাস্তব মনে হলেও কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন, জেরুজালেম ইস্যুতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা নেই।

বিশ্লেষকরা তাঁদের এমন ভাবনার কারণ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। তাঁরা খুঁটিয়ে দেখছেন ওই অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি, যা জেরুজালেম ইস্যুতে বড় ধরনের বিক্ষোভ দানা বাঁধার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মোটামুটি একটা স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থা চালু আছে, সেসব দেশের সরকার সেই স্থিতিশীলতা রক্ষার নামে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভকে বাড়তে দিচ্ছে না এবং বিক্ষোভের ন্যূনতম প্রকাশকেও তারা ধামাচাপা দিচ্ছে। কারণ আপাত স্থিতিশীল এসব সরকারের ভয়, তাদের দেশের জনগণ ট্রাম্পের জেরুজালেম সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখালে মার্কিন সরকারের অদৃশ্য কূটনীতির চালে হয়তো তারা ক্ষমতাচ্যুত হবে। এমনকি রাষ্ট্রবিহীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র সংগঠন হামাসও নির্মূল হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে ভুগছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

দেশের ভেতর নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্ষমতার পরিধি বাড়ানোর চিন্তাও মাথায় রাখছে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী সরকারগুলো। এ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে সৌদি আরব ও ইরানকে দুটি বিপরীত মেরু হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ দুটি রাষ্ট্র পাল্টাপাল্টিভাবে গোটা অঞ্চলজুড়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তৃতি নিশ্চিত করতে চাইছে। উভয় পক্ষই চায়, এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিরি ঘুচিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হোক।

আর সেটা করতে হলে তাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে, এই মুহূর্তে নিজ নিজ সরকারব্যবস্থা কোনোভাবেই যেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটচালে বিপর্যস্ত না হয় এবং কোনো পুতুল সরকার যেন ক্ষমতায় না আসে।
অস্থিতিশীল আরব রাষ্ট্রগুলোর এই মুহূর্তের আকাঙ্ক্ষা কী? সম্ভবত ইয়েমেন, সিরিয়া, লিবিয়ার মতো দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে চরম অমানবিক ভোগান্তির শিকার হতে হতে ক্লান্ত। জেরুজালেম ইস্যুতে ফুঁসে ওঠার পরিবর্তে নিজেদের শান্তি ফেরানো তাদের কাছে জরুরি।

মধ্যপ্রাচ্যে একটি অংশ ব্যস্ত নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত করতে এবং বাকি অংশ ব্যস্ত সহিসংতার ইতি ঘটাতে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে খবরদারি করা যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, চীন আর রাশিয়ার মতো বিশ্বশক্তিগুলো—এমনকি তুরস্কের মতো আঞ্চলিক শক্তিও আগ বাড়িয়ে কোনো নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করবে না, যদি না মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জেরুজালেম ইস্যুতে নিজেরা কোনো পদক্ষেপ নেয়। এই যদি হয় বিশ্বরাজনীতির সার্বিক পরিস্থিতি তাহলে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করার পরিপ্রেক্ষিতে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন ঘটার আশা নেই। সূত্র : দ্য হিল।