Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭: পরিচালনায় ব্যর্থতা ও দুর্নীতির দায়ে নতুন প্রজন্মের আরেক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) অপসারণের শেষ পর্যায়ের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার ফারমার্স ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নির্বাহী একেএম শামীমের গতকাল শুনানি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি। এর আগে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডিকে একই প্রক্রিয়ায় শুনানি করে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।তারল্য সংকটে পড়া ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে সম্প্রতি পদত্যাগে বাধ্য করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা ও ঋণ সংক্রান্ত অনিয়মের দায়ে এমডিকে কেন বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে নোটিশ দেওয়া হয় ২৬ নভেম্বর।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নতুন ঋণ বিতরণের বিষয়ে নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি ফারমার্স ব্যাংকের এমডি একেএম শামীম। এ জন্য গতকাল এমডিদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী কমিটিতে তাকে ব্যক্তিগত শুনানিতে ডাকা হয়। কোনো ব্যাংকের এমডিকে অপসারণের আগে এটি চূড়ান্ত পর্যায়। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী কমিটি তাকে প্রায় তিনঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের
গভর্নর ফজলে কবির।
শুনানিতে একেএম শামীম বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের খারাপ অবস্থার জন্য পরিচালনা পর্ষদ দায়ী। ব্যাংকটির দৈনন্দিন কার্যক্রমে পর্ষদ হস্তক্ষেপ করত। পর্ষদের এখতিয়ায়ের বাইরে ছিল এটি। ফলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি।প্রধান নির্বাহী ব্যাংকটির সার্বিক ব্যর্থতার দায় নিতে চাননি।
তিনি কমিটিকে বলেন, ফারমার্স ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর আগে থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের আগে থেকে অফিস ভাড়া দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেওয়া হয়। তখন অবশ্য তিনি এমডি ছিলেন না। এভাবে পর্ষদ শুরু থেকে নানা অনিয়মের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ব্যবহার করেছে। এখানে এমডিসহ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কাজের স্বাধীনতা পায়নি। ফলে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি চাইলেও রোধ করা যায়নি।
শুনানিতে এমডি কমিটিকে জানান, পরিচালকরাও অনেকে নিয়মিত অফিসে আসতেন। পর্ষদের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি শাখা পর্যায়েও যোগাযোগ করতেন। শাখা ব্যবস্থাপকদের দিকনির্দেশনা দিতেন। ফলে তারা অনেক সময়ই আমার নির্দেশনাও মানতে চাইত না।নিজেকে নির্দোষ দাবি করে শামীম বলেন, এর আগে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পেরে ব্যাংকটির এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চাকরি ছেড়ে অন্য ব্যাংকে গিয়ে যোগ দিয়েছেন। তিনিও পর্ষদের কাছে জিম্মি ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
তারল্য সংকটের দায় প্রধান নির্বাহী এড়াতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নে ফারমার্স ব্যাংকের এমডি বলেন, এখানেও তার নিজের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ছিল না। তিনি সব কিছু পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যানের নির্দেশে করেছেন।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নতুন ঋণ বিতরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে এক পর্যায়ে জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিছু ভয় থেকে তা করতে পারেননি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনকারী দলকে তিনিই এ তথ্য দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ ৬ ডিসেম্বর এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার ক্ষেত্রে ৯ মাস সময় নিলেও একেএম শামীমের ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করতে চায় না বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ৩১ ডিসেম্বর একেএম শামীমের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই সম্ভব হলে এ প্রধান নির্বাহীকে অপসারণ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকটি পরিচালকদের একটি অংশ তার অপসারণ ঠেকাতে নানা মহলে জোর তদবির করছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরুকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার নিয়োগের অনুমোদন নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে; বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে গত ২৭ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও একই সঙ্গে পরিচালক পদ ছেড়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীকেও পদত্যাগ করতে হয়েছে। তাদের পদত্যাগের আগের দিন ২৬ নভেম্বর একেএম শামীমকে এমডির পদ থেকে কেন অপসারণ করা হবে না। জানতে চেয়ে নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পর স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে যে কোনো ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে গত বছরের ৩০ জুন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদ এবং ২০১৪ সালের ২৫ মে বেসিক ব্যাংকের এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়।আমাদের সময়।