Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭: বড় উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের ঋণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এসব প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে নতুন নতুন শর্তের খড়গ চাপাচ্ছে চীন। এতদিন নমনীয় এবং কঠিন মিলিয়ে চীনের ঋণ সমন্বয় করা হতো। কিন্তু চীন সরকারের নতুন নীতিমালায় এটি আর থাকছে না। তাদের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, এখন থেকে ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি প্রকল্পে নমনীয় শর্তে গভর্মেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল) নেয়া যাবে না। পুরোটাই নিতে হবে কঠিন শর্তে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) হিসেবে। তবে এ ক্ষেত্রে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ ঋণ দেয়া হবে। বাকি ১৫ শতাংশ অর্থ বাংলাদেশ সরকারকেই খরচ করতে হবে। কোনো একটি প্রকল্পে দুটো অংশ এক সঙ্গে নেয়া যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে প্রকল্প ঋণ দেয়া হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে, চীনের নতুন এ শর্তের কারণে ঋণ চুক্তি প্রক্রিয়ায় অনেক দূর এগিয়ে থাকা ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্প এবং ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও বাস্তবায়নাধীন ২৭ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প জটিলতার মুখে পড়বে। পাশাপাশি চীনের অর্থায়নপুষ্ট অনেক প্রকল্পে আগে থেকেই কার্যকর ২ শতাংশ সুদের হার বেড়ে যাবে। এ ছাড়া চীনা ঋণ প্রকল্পে সরকারকে কোনো অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় না। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তে বড় অংকের অর্থের জোগান দিতে হবে। এতে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি হবে- যা যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকে বিলম্বিত করবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট সূত্র স্বীকার করেছে, চীনা অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এতে বড় বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন গতি ব্যাহত হবে। ভবিষ্যতে ঋণ নিতে হবে কঠিন শর্তে। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তিনি জানান, অক্টোবর মাসে নতুন শর্তের কথা জানানো হয়েছে বাংলাদেশকে। এ সিদ্ধান্তে এর আগে সমঝোতা হওয়া ২৭ প্রকল্পের অর্থায়ন কঠিন শর্তের আওতায় পড়বে। বর্তমানে এসব প্রকল্পের অধিকাংশই নমনীয় ঋণের আওতায় আছে। চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময় এসব প্রকল্পের অর্থায়নে প্রায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এখন নতুন শর্তে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাবে। ঋণ পরিশোধে সরকারের বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে।

সূত্র জানিয়েছে, এ ২৭টি বড় প্রকল্পে নমনীয় শর্তে গভর্মেন্ট কনসেশনাল লোনের (জিসিএল) বিষয় উভয়পক্ষে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এখন তা কঠিন শর্তে নিয়ে গেলে অর্থায়ন জটিলতা বাড়বে। এ অবস্থায় শর্ত প্রয়োগের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে ১০ নভেম্বর চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে ইআরডির পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ইআরডির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, ২৭ প্রকল্প যেন এর আওতার বাইরে রাখা হয়।
শর্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব, এশীয়া উইংয়ের প্রধান জাহিদুল হক মঙ্গলবার চীনের নতুন নীতিমালার কথা স্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন, আগস্ট মাসে তারা এ নীতিমালা করেছে। সম্প্রতি আমাদেরকে চিঠি দিয়ে তা জানিয়েছে। আমরা এ ক্ষেত্রে অতটা বিচলিত নই। তবে চীনের সঙ্গে এর আগে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে, সেখানে কোনো শর্তের কথা বলা ছিল না। এখন প্রকল্পভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে শর্ত ঠিক করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরি যুগান্তরকে বলেন, আগে সমঝোতা হয়েছিল। এখন চীন স্বাভাবিক ভাবেই চাইবে তাদের স্বার্থকে সুরক্ষা করতে। সরকারের উচিত হবে শক্তভাবে নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনার মধ্যদিয়ে সমঝোতায় আসা। মনে রাখতে হবে যে কোনো ঋণই যেন দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে না নেয়া হয়।

সূত্র জানায়, চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- গভর্মেন্ট কনসেশনাল লোন বা জিসিএলের অর্থ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চীন সরকার। আর পিবিসি ঋণের অর্থ দেয় চীনা এক্সিম ব্যাংক। যখন কোনো প্রকল্পে দুটি ঋণ এক সঙ্গে থাকে তখন সেটি প্রক্রিয়াকরণ করতে দুটি সংস্থার অনুমোদনসহ নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এতে সময় বেশি চলে যায়। এজন্য নতুন নীতিমালায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কিন্তু ইআরডির একাধিক সূত্র জানায়, এটা চীনের একটি অজুহাত মাত্র। তারা কৌশলে বেশি সুদ ও শর্তযুক্ত ঋণ চাপাতেই এ নীতিমালা করেছে। নতুন এ শর্তের কারণে ঋণ চুক্তি প্রক্রিয়ার অনেক দূর এগিয়ে থাকা ঢাকা-সিলেট ৪ লেন প্রকল্প এবং ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন না, এ দুটি প্রকল্পে দু’ধরনের ঋণই রয়েছে। সেভাবেই প্রকল্প দুটি প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে। এখন নতুন করে আবার সংশোধন করতে গেলে সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।

চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ২৭ প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ঢাকা সিলেট চার লেন হাইওয়ে প্রকল্প (প্রায় ১৬০ কোটি ডলার)। রাজশাহী ওয়াসার সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (৫০ কোটি ডলার)। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (১৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ডলার)। টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন (২০ কোটি ডলার)। জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়েল গেজ রেললাইন প্রকল্প (৭৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার। ডিজিটাল কানেকটিভিটি (১০০ কোটি ডলার)। সীতাকুণ্ড-চিটাগাং-কক্সবাজারে উপকূলীয় অঞ্চল সুরক্ষা এবং মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ (২৮৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার)। গজারিয়ায় ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ (৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার)। আখাউড়া-সিলেট সেকশনে রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ (১৭৫ কোটি ডলার)।যুগান্তর।