খােলা বাজার২৪। রবিবার, ১৭ডিসেম্বর, ২০১৭: ২০০০ সাল থেকে গাইবান্ধার বিভিন্ন স্থানে শাখা খুলে ব্যবসা শুরু করে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ১২ থেকে ১৫ বছর মেয়াদি পলিসিতে এসব শাখা থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আদায় করে বীমা কোম্পানিটি। কিন্তু পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার বছর দেড়েক আগে থেকে গাইবান্ধার শাখাগুলো বন্ধ করতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে নীলফামারী জেলায়ও। সেখানে পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিজেদের সব গ্রামীণ শাখা বন্ধ করে দিয়েছে আরেক বীমা কোম্পানি সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
শুধু প্রগ্রেসিভ বা সানফ্লাওয়ার নয়, জীবন বীমা খাতের অন্য কোম্পানিগুলোও একের পর এক শাখা বন্ধ করছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে না জানিয়েই। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বলছে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শাখাগুলোই বন্ধ হচ্ছে বেশি। এ ধরনের দুই শতাধিক শাখা বন্ধের অভিযোগ রয়েছে সংস্থাটির কাছে।
এ বিষয়ে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এমএ করিম বলেন, আগে নিয়ম ছিল না, তাই শাখা বন্ধ করার জন্য নোটিস দেয়া হতো না। নতুন করে নিয়ম করা হলে এক্ষেত্রে অবশ্যই নোটিস দিয়ে শাখা বন্ধ করা হবে।
এদিকে শাখা বন্ধ করার প্রবণতা বেশি এমন দুর্বল জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও বেশি। ২০১৬ সালে সানফ্লাওয়ার ১৩ কোটি ২৭ লাখ, প্রগ্রেসিভ ১২ কোটি ৫২ লাখ, গোল্ডেন লাইফ ১০ কোটি ৯৬ লাখ ও ট্রাস্ট লাইফের ৫ কোটি ৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ব্যবস্থাপনা বাবদ। যদিও কোম্পানিগুলোর গ্রামীণ শাখা আগের চেয়ে কমেছে।
একের পর এক গ্রামীণ শাখা বন্ধ হলেও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আইডিআরএ আশঙ্কা করছে, কোম্পানিগুলো বন্ধ হওয়া শাখারও ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখাচ্ছে। তাই জীবন বীমা খাতে কতগুলো শাখা অফিস বন্ধ হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট শাখার গ্রাহকদের অবস্থা কী, তা জানতে চেয়ে বীমা কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিআরএ। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জীবন বীমা কোম্পানিতে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হবে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএর সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন বীমা কোম্পানির শাখা একের পর এক বন্ধ হচ্ছে। এসব শাখার গ্রাহকদের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। অসহায়-দরিদ্র মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতেই নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কোম্পানিগুলোর বন্ধ শাখা ও সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি শাখা অফিস বন্ধ রেখেও ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখানো হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করে দেখা হবে।
বীমা কোম্পানিগুলোর গ্রামগঞ্জে কত শাখা রয়েছে, তার সঠিক কোনো হিসাবও নেই আইডিআরএর কাছে। কারণ এসব শাখার অধিকাংশেরই অনুমোদন নেয়া হয়নি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা থেকে। অনুমোদনহীন এসব শাখায় পলিসি করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেক গ্রাহক। অনেক সময় যাচাই-বাছাই না করে নামসর্বস্ব কোম্পানিতে বীমা করার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক গ্রাহক তাদের শেষ সঞ্চয়টুকু খুইয়েছেন।
১৯৯৯ সালে বীমা কোম্পানির লাইসেন্স পায় গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এর পরের বছর থেকেই ব্যবসা শুরু করে কুষ্টিয়া জেলার সাত উপজেলায়। কিন্তু পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হলে লাভ তো পরের কথা, জমানো টাকাও ফেরত পাননি এ অঞ্চলের কোনো গ্রাহক। গত ১৭ বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম হিসেবে সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া অঞ্চলের শাখা অফিসগুলো বন্ধ করেছে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
গ্রাহককে টাকা না দিয়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাখা অফিস বন্ধ করছে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। তারাও গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়নি। শুধু তাই নয়, কোম্পানিটি তাদের অনিয়ম লুকাতে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করছে গ্রাহকের সঠিক তথ্যও। গ্রাহকের সঞ্চিত অর্থ কী কাজে বা কোন খাতে ব্যবহার হয়েছে, তারও কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দিতে পারছে না কোম্পানিটি।
২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়ার পরের বছরই সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলে হাসিনা ভিলার দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে অফিস খোলে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। জেলার বিভিন্ন এলাকায় নেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির আরো ছয়টি অফিস। বর্তমানে জেলার অধিকাংশ অফিসই বন্ধ। কোথাও অফিস থাকলেও কার্যক্রম নেই। এ অঞ্চলের গ্রাহকরাও খুঁজে পাচ্ছেন না কোম্পানিসংশ্লিষ্ট কাউকে। শুধু সাতক্ষীরা নয়, টাঙ্গাইলেও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএর সাবেক সদস্য সুলতান উল আবেদীন মোল্লা বলেন, কোম্পানিগুলো বন্ধ শাখারও ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখাচ্ছে কিনা, তা যাচাই করে দেখতে এর আগেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। কোনো নোটিস ছাড়া শাখা অফিস বন্ধ করা যায় কিনা, এটাও একটা প্রশ্ন।