খােলা বাজার২৪।সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭: হাইকোর্টের পৃথক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক (দাঁড়িপাল্লা) হারিয়েছে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে দলটির রাজনীতিও নিষিদ্ধের মুখে রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ ও প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তায় আছে দলটি। এরপরও জোটগতভাবে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ অথবা স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে দলটি। বর্তমানে দলের স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে গ্রেফতার-নির্যাতনের ভয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করেই দলটির এসব কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সূত্র মতে, প্রাথমিকভাবে ৮০ আসনে প্রার্থী বাছাই করেছে জামায়াত। তবে জোটের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে দলটির আসন চূড়ান্ত হবে। এক্ষেত্রে দলটির পক্ষ থেকে ৪০ থেকে ৫০টি আসন চাওয়া হতে পারে।
সূত্র মতে, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ ব্যবহার করে আসছে জামায়াত। এ প্রতীকেই একাধিকবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটি। দল নিবন্ধন আইন ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হলে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বরাদ্দসহ নিবন্ধন দেয়। কিন্তু দলটির গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণ দেখিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের ওই নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
অপরদিকে সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে গেল বছরের ১২ ডিসেম্বর ফুল কোর্ট সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে একমাত্র সুপ্রিমকোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে। অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হোক। পরে এ নির্দেশনার ভিত্তিতে ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি দেয় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।
১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক গেজেটে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০০৮-এর সংশোধনীর মাধ্যমে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বাদ দিয়ে ৬৪টি নির্বাচনী প্রতীক চূড়ান্ত করা হয়। এতে দলীয় নামে ও প্রতীকে আগামী জাতীয় নির্বাচন করা জামায়াতের জন্য সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে গেছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে এখনও দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতে ইসলামীর নাম রয়েছে। এতে বলা আছে, ‘মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রিট পিটিশন নং-৬৩০/২০০৯ এর ওপর ০১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে।’ এছাড়া দলীয় প্রতীকের স্থানে দাঁড়িপাল্লা বহাল রয়েছে।
জামায়াত সূত্র জানায়, দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে হাইকোর্টে আপিল করেছে জামায়াত। এ প্রক্রিয়ায় রায় নিজেদের পক্ষে আসবে বলে আশাবাদী দলটির নেতাদের। যদিও এ আপিলের শুনানি কবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে আগামী নির্বাচনের আগে এ আপিলের কোনো ফয়সালা না হলে বিকল্প কৌশলে অংশ নেবে জামায়াত। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
এ বিষয়ে জামায়াতের ঢাকা মহানগরের এক নেতা জানান, সুষ্ঠু পরিবেশ হলে বিএনপি জোটের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে জামায়াত। এজন্য প্রাথমিকভাবে ৮০টি আসনে দলের প্রার্থী বাছাই করে নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলোতে যেসব আসনে জামায়াতের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং বর্তমানে যেসব এলাকায় দলটির প্রভাব বেড়েছে, সেসব আসনেই মূলত আগামীতে নির্বাচনের টার্গেট করা হয়েছে। তবে জোটের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই আসন বণ্টন চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, আগামী বছর দলের নিয়মিত স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতিকে বিশেষ গুরুত্ব দেবে জামায়াত। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মীদের এ ব্যাপারে কেন্দ্রের ‘মেসেজ’ পাঠানো হয়েছে। তবে আগের চেয়ে দলটির কার্যক্রমের ওপর প্রশাসনের নজরদারি আরও বেড়েছে। তাই যথাসম্ভব গ্রেফতার-নির্যাতন এড়িয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতিসহ সব কার্যক্রম চালাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আলোকিত বাংলাদেশ