খােলা বাজার২৪।শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭: উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাজধানীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বোর্ড ফি অনেক কম হলেও জনপ্রতি অতিরিক্ত পাঁচ হাজার ৭৯৫ টাকা আদায় করছে দনিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ। দনিয়া কলেজ থেকে ২০১৮ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার বলে জানা গেছে কলেজ সূত্রে। সেই হিসাবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত ৫ ডিসেম্বর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফি বিষয়ে দনিয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত বোর্ড পরীক্ষার ফি এক হাজার ২৩৫ টাকা, ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদপত্র ফি ১০০ টাকা, রোভার স্কাউট/গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা, কেন্দ্র ফি ৩০০ টাকা, স্টুডেন্ট গাইডেন্স ফি এক হাজার টাকা, উন্নয়ন ফি চার হাজার টাকা এবং বিবিধ ৭৯৫ টাকাসহ সর্বমোট সাত হাজার ৫০০ টাকা উল্লেখ করে একটি বিজ্ঞপ্তি টানানো হয়।
এদিকে, স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের কোনও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি বা পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেওয়া যাবে না বলে আদেশ দিযেছেন হাইকোর্ট।
গত ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত বিক্ষপ্তিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ড নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না।
কোনও কলেজ আদায় করে থাকলে এবং প্রমাণ পাওয়া গেলে হাইকোর্টের স্যুয়োমোটো রুল নং : ২৫/২০১৭/এর নির্দেশনা অনুসারে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি/গভর্ণিং বডির বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে এক বিক্ষপ্তিতে বলা হয়।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে কলেজেরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গভর্নিং বর্ডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী-ই অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ এবং বিগত চার বছর ধরে উন্নয়ন ফি বাবদ অতিরিক্ত চার হাজার টাকা ফি আদায় করা হয়ে আসছে।
কিন্তু দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি ও পরিসখ্যান বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক বলেন, তিন হাজার টাকা উন্নয়ন ফি কলেজের আগের কমিটি নির্ধারণ করে গেছে তা এখনো আদায় করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি দুইমাস হয়েছে কমিটিতে এসেছি।
এদিকে গত কদিন থেকেই অতিরিক্ত ফি বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। দফায় দফায় মানববন্ধন ও মিছিল করে আসলেও তাদের দাবি ও হাইকোর্ট এর রায় উপেক্ষা করে এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত ফি আদায় করছে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। গত ১০ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনের সড়কে একই দাবিতে মানববন্ধন করতে গেলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ-পুলিশ বাধা দেয়।
মানববন্ধনে তারা বলে, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের কথা কর্ণপাত করছে না। ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাইলেও এখন পর্যন্ত কোনও পদেক্ষপ গ্রহণ করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নেওয়ায় তারা আবারো ১৪ ডিসেম্বর প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করে এবং হাইকোর্ট নির্ধারিত নীতিমালা মেনে অতিরিক্ত ফি কমানোর দাবি জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, আমার বাবা রিক্সা চালক। নির্ধারিত ফি দেওয়াটাই আমার পরিবারের জন্য কষ্টকর, অতিরিক্ত ফি আদায় করে ফরম পূরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।