Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বুধবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৮: দেশজুড়ে নির্বাচনী মহাকর্মযজ্ঞে নামছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২৫ জানুয়ারি কক্সবাজারের মাতারবাড়ী সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি ৩০ জানুয়ারি সিলেট ও ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সফরে যাবেন। এ ছাড়া রংপুরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সফরে যাওয়ারও প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির। এদিকে, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা সমকালকে জানান, প্রধানমন্ত্রী ২৫ জানুয়ারি কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। পরে মহেশখালীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন তিনি।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান জানান, প্রধানমন্ত্রী ৩০ জানুয়ারি সিলেট সফরে আসবেন। সেখানে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিয়ারত এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করবেন তিনি। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এক জনসভায় ভাষণ দিতে পারেন। তবে এ জনসভার স্থান এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস এমপি জানিয়েছেন, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সফরে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন সেনানিবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করবেন তিনি। এ ছাড়া বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনার প্রধান অতিথির ভাষণ দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া জানিয়েছেন, দলের নেতাকর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাদের এলাকায় জনসভা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে যেসব এলাকায় যাননি, সেসব এলাকা সফরের ব্যাপারে ইতিবাচক আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ জন্য এখন থেকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে যেসব জেলা ও উপজেলা সফরে যাবেন, সেসব এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জনসভা আয়োজনের প্রস্তুতি থাকবে। প্রধানমন্ত্রী সেই জনসভায় ভাষণ দেবেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী এবং দলকে আরও চাঙ্গা করার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরসূচিতে পরিবর্তন :দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরসূচিতে কিছুটা রদবদল আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন নেতা। ১২ জানুয়ারি থেকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নেতৃত্বে এই সাংগঠনিক সফর শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ওই দিন থেকে ঢাকার অদূরে গাজীপুরের টঙ্গীতে তাবলিগ জামাতের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ায় সফরসূচিতে পরিবর্তন আনার কথা ভাবা হচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এ সফরসূচির দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। তবে এ মাসেই সারাদেশে সাংগঠনিক সফর কর্মসূচি শুরু হবে বলে নিশ্চিত করেছেন নেতারা।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সারাদেশে ব্যাপক নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরের মধ্য দিয়ে এ প্রস্তুতিতে আরও নতুন মাত্রা যোগ হবে। তিনি আরও বলেছেন, সফর কর্মসূচি চলাকালে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে আরও শক্তিশালী করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক ভুলত্রুটিগুলো সমাধানের চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সর্বশেষ অবস্থা জানার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি আসনের দলীয় এমপিদের অহেতুক সমালোচনা করছেন। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দল এবং সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা সফরকালে এ ব্যাপারে সংশ্নিষ্টদের সতর্ক করবেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতির সাত নির্দেশনা :আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্ভাব্য সাংগঠনিক সফরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা। তারা বলেছেন, এ সফরকে কেন্দ্র করে সাতটি বিষয়ে দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে গত শনিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে একই এলাকায় দফায় দফায় সাংগঠনিক সফর করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।

দলীয় প্রধানের দিকনির্দেশনাগুলো কার্যকর করবেন সাংগঠনিক সফরে যাওয়া কেন্দ্রীয় নেতারা। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে সর্বশেষ সাংগঠনিক অবস্থা পাওয়া যাবে বলেও নেতারা মনে করছেন। সেইসঙ্গে দলের মনোনয়ন নিয়ে বিভিন্ন আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যকার বিরোধও মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। সাংগঠনিক এ সফর শেষ হওয়ার পর প্রতিটি টিমের প্রধানরা তৃণমূল পর্যায়ে দলের সর্বশেষ অবস্থান তুলে ধরে লিখিত প্রতিবেদন দেবেন।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় সাতটি বিষয় রয়েছে। সেগুলো হলো- দলীয় এমপিদের জনপ্রিয়তা যাচাই, দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, দলীয় এমপিদের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরোধের চিত্র, দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে জড়িত নেতাদের তালিকা, দলের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদের ঘটনা, দলের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে কি-না এবং প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা পরখ করা। সমকাল