খােলা বাজার২৪।সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮: মো: রাসেল মিয়া নরসিংদী প্রতিনিধিঃ শীতের মৌসুমে নরসিংদী জেলার সদর, পলাশ, মনোহরদী, বেলাব, রায়পুরা উপজেলা গ্রামের গাছিরা এখন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলার বিভিন্ন গ্রামে ইতিমধ্যে গাছ তোলার কাজ শেষ হয়েছে। জিনারদী, লেবুতলা, বাঘাব, সাপমারা, আমলাব, পাইকারচর, পারুলিয়া ইউনিয়নসহ কাঠালিয়া গ্রামগুলোতে প্রচুর সংখ্যক খেজুর গাছ লক্ষণীয়। এসব এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে, জমির আইলে, রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যায়। বর্তমানে এসব এলাকায় বাণিজ্যিকভাবেও খেজুর বাগান গড়ে তুলছেন অনেকে। শীতের সাথে খেজুর রসের রয়েছে এক অপূর্ব যোগাযোগ। শীত যত বাড়তে থাকে খেঁজুর রসের মিষ্টতাও তত বাড়ে। এ সময় গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতিক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে পুরোদমে শুরু হয় পিঠা, পায়েস ও গুড় পাটালী তৈরির ধুম। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যায়। খেজুর রসের পায়েস, রসে ভেজানো পিঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারেরতো জুড়িই নেই। সদর উপজেলার চিনিশপুর গ্রামের গাছি বাছির উদ্দিন জানান, তার প্রায় ২৭টি খেজুর গাছ রয়েছে। তিনি প্রতি ১ লিটার খেজুর রস ৬০/৭০ টাকা বিক্রি করছেন। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা আয় হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ বছর খেজুর রসের ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি। শীত মৌসুমে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গাছিরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ও বিক্রি করতে দেখা যায়। অপরদিকে অনেক গাছিরা গাছ হতে খেজুর রস সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। চিনিশপুর গ্রামের এক গাছি জানান, এ বছর তিনি ২০টি খেজুর গাছ কেটেছেন। এক সপ্তাহ পর থেকেই গাছ থেকে রস পাওয়া যাবে। সরেজমিনে গিয়ে সদর উপজেলার চিনিশপুর, আমলাব, পাইকারচরসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ভোরে গাছিরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়িতে আনছেন। পরিবারের সবাই রস জালানো, কলস পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে সহযোগিতা করছেন। আবার দুপুরেই গাছিরা দা, হাসুয়া, ঠুঙি, দড়ি ও মাটির কলস (ভাড়) নিয়ে ছুটে চলেছেন মাঠে। তবে সঠিকভাবে পরিচর্যা না করা ও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ির কারণে খেজুর গাছ আজ বিলপ্তির পথে। ইটভাটা গুলোতে খেজুর গাছ পোড়ানো আইনত নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ভাটা মালিকরা নির্বিচারে খেজুর গাছ দিয়ে ইট পুড়িয়ে যাচ্ছে। ইট ভাটায় জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করার কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে দ্রুত খেজুর গাছ ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদীসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে কিছু কিছু এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর গাছ থাকলেও সঠিকভাবে তা পরিচর্যা না করা, নতুন করে গাছের চারা রোপণ না করা এবং গাছ কাটার পদ্ধতিগত ভুলের কারণে প্রতি বছর অসংখ্য খেজুর গাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া এক শ্রেণির অসাধু ইটভাটার ব্যবসায়ীরা জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করার কারণে ক্রমেই কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা।