খােলা বাজার২৪।শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮: জন্ম হোক যথা-কর্ম হোক ভালো। জন্মের উপর মানুষের কোন হাত নেই। যে কারো জন্ম যে কোন জায়গায় হতে পারে। জন্ম নিয়ে অহংকার করারও তেমন কিছু নেই। জন্ম যেখানেই হোক, কর্ম হতে হবে ভালো। কর্ম গুণেই মানুষ চিরদিন এ ধরার মাঝে বেঁচে থাকে, ইতিহাসে লেখা থাকে তার নাম, তিনি হন অমর-অম্লান। ঠিক তেমনি একটি নাম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
বগুড়া জেলার গাবতলী থানার বাগবাড়ীর লচিপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারী সবার মুখ আলোকিত করে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জিয়াউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল ‘কমল’। জিয়াউর রহমান এর পিতার নাম মনসুর রহমান-পেশায় তিনি ছিলেন একজন কেমিস্ট, মাতার নাম জাহানারা খাতুন রানী-পেশায় গৃহিনী এবং একজন সংগীত শিল্পী ছিলেন। জিয়াউর রহমান'রা ছিলেন পাঁচ ভাই এবং তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। জিয়াউর রহমান কলকাতার হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পিতার চাকুরি সূত্রে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের করাচিতে যান এবং ‘করাচি একাডেমী স্কুল’ থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন করাচির ডি. জে কলেজে। কলেজে পড়া অবস্থায় জিয়াউর রহমান ১৯৫৩ সালে সেনাবাহিনীতে ‘অফিস ক্যাডেট’ হিসেবে চাকুরি জীবন শুরু করেন।
মা-মাটি, দেশ-জাতির জন্য জিয়াউর রহমান এর দেশপ্রেম ছিল প্রবল। সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর জিয়াউর রহমান লক্ষ্য করলেন সেনাবাহিনীর ভিতর তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের সেনা সদস্যদের খুব ছোট চোখে দেখা হয়। শুধু তাই নয় সে সময় পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা সদস্যদের মধ্যে অহমিকা আসল। একপর্যয়ে তারা পূর্ব-পাকিস্তানী সেনাদের শিক্ষা দিবেন বরে ভাবলেন এবং মুষ্ঠিযুদ্ধের আয়োজন করলেন। পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের মধ্যে আব্দুল লতিফ এবং পূর্ব-পকিস্তানী সেনাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান অংশগ্রহণ করলেন। সেখানে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডে পশ্চিম পাক-সেনাকে জিয়াউর রহমান পরাজিত করলেন এবং সেনাবাহিনীর ভিতরে জিয়াউর রহমান পূর্ব-পাকিস্তানীদের বিজয় এনে প্রবল মনোবল বেড়ে দিলেন। সেই সাথে সেনাবাহিনীতে এক চমকও তিনি সৃষ্টি করলেন।
দেশ ভাগের পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানীদের শুধু সেনাবাহিনীতে নয়, সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনেতিক-চাকুরিতে নিয়োগ তথা প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য করে থাকে এবং দিনকে দিন এ বৈষম্য বেড়েই চলছে। এ বৈষ্যম্যের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ও রাজনৈতিক দলসমূহ সোচ্চার হতে থাকে এবং প্রতিবাদস্বরপ পূর্ব-পাকিস্তান থেকে জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রথম ‘আস্-সালামুআলাইকুম’ বলে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিদায় জানান। পশ্চিম পাকিস্তানীরা শাসন-শোষণের এক পর্যায়ে Legal frame work order (এল এফ ও) বা আইনগত কাঠামো আদেশ জারি করে ১৯৭০ এর নির্বাচন জারি করে। Legal frame work order (এল এফ ও) বা আইনগত কাঠামো আদেশ পাকিস্তান স্বার্থসিদ্ধির দলিল বিধায় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন না এবং শেখ মুজিব নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ Legal frame work order(এল এফ ও) বা আইনগত কাঠামো আদেশ মেনে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয় লাভ করে। শেখ মুজিব নির্বাচনে জয়লাভ করে নিজেকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাবতে থাকে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানীরা এক জোট হয়ে শেখ মুজিবকে ক্ষমতা দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং এক পর্যায়ে ২৫ শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের লোকজনের উপর ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ চালিয়ে গণহত্যা করে সে রাতেই শেখ মুজিবকে বন্দী করে নিয়ে যায় পাকিস্তানীরা। সেই ‘৭১ এর ২৫ মার্চ জাতির সামনে যেন কালো আঁধার নেমে আসে। এ প্রেক্ষিতে তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতারাও কেউ কেউ আত্মগোপন করে থাকে এবং অনেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। জাতির এ দুর্যোগময় মহুর্তে আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে আসেন মেজর জিয়াউর রহমান। মা-মাটি, দেশ-জাতির সংকটময় সেই মহুর্তে কা-ারী ভূমিকায় অবর্তীণ হন মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে প্রথমে রিভোল্ট ঘোষণা করেন এবং ধীরে ধীরে সেনা সদস্যদের সংগঠিত করে ২৬ শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, তৃতীয় খ-ে বর্ণিত জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাটি নি¤œরূপ-
Dear fellow freedom fighter's-
I, Major Ziaur Rahman, Provisional President and commander-in-chief of liberation Army do hereby proclaim independence of Bangladesh and appeal for joining our liberation struggle. Bangladesh is independent. We have waged war for the liberation of bangladesh. Everybody is requested to participate in the liberation war with whatever we have. We will have to fight and liberate the country from the occupation of pakistan Army.
Inshallah, victory is ours.
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সহযোদ্ধা ভাইয়েরা,
আমি, মেজর জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট ও লিবারেশন আর্মি চীফ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ স্বাধীন। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে নেমেছি। আপনারা যে যা পারেন সামর্থ্য অনুযায়ী অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে এবং পাকিস্তানী বাহিনীকে দেশ ছাড়া করতে হবে।
ইনশাল্লাহ, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
মেজর জিয়াউর রহমান এর স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে দিশাহারা, নেতৃত্বহারা এ জাতি যেন নেতা খুঁজে পেল এবং তার আহ্বানে সারা দেশে যে যার-যার অবস্থান থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই শুধু ক্ষান্ত হননি। তিনি নিজে যুদ্ধ করেছেন, অন্যদের যুদ্ধের জন্য অনুপ্রাণিত ও সংগঠিত করেছেন। জিয়াউর রহমান যুদ্ধকালীন সময়ে ১নং সেক্টরের (চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ফেনীর একাংশ নিয়ে ১ নং সেক্টর) সেক্টর কমা-ারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুদ্ধকে আরো গতিশীল করে চুড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে তিনটি র্ফোস গঠন করা হয়। তার মধ্যে জেড-ফোর্সে’র দায়িত্ব পালন করেন মেজর জিয়াউর রহমান। মেজর জিয়াউর রহমান ০৭ জুলাই হতেই ‘জেড-ফোর্সে’র নেতৃত্বে সমগ্র সিলেট, ময়মুনসিংহসহ কুড়িগ্রামের কিয়দংশ ও আরো অন্যান্য অংশে অর্থাৎ কামালপুর, বাহাদূরাবাদ ঘাট, দেওয়ানগঞ্জ থানা, চিলমারী, ছোটখাল, আলি ময়দান, হাজীপাড়া, টেংরাটিলা, গোবিন্দগঞ্জ, সালুটিকর বিমান বন্দর, ধলাই-চা বাগান, ধামাই চা-বাগান, গোয়াইন ঘাট, দেওয়ানগঞ্জ, এম সি কলেজ, ভানুগাছ, কানাইয়ের ঘাট, বয়মপুর, ফুলতলা চা-বাগান, বড়লেখা, লাতু, সাতারনাল চা-বাগান ইত্যাদি স্থানে বীরত্বের সঙ্গে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন।
অতঃপর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হয় স্বাধীনতার স্বাক্ষর-আসে চুড়ান্ত বিজয়। দেশ স্বাধীন হয়। শেখ মুজিব দেশ স্বাধীনের পর ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন দেশে ফিরে আসেন এবং ১২ জানুয়ারী ১৯৭২ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সদ্য স্বাধীন দেশে মেজর জিয়াউর রহমানও যুদ্ধ শেষে স্ব-পদে সেনাবাহিনীতে ফিরে যান।
শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে স্বাধীন দেশের সরকার পরিচালিত হতে থাকে। ১৯৭৪ এ নেমে আসে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। অনেকের মতামত দুর্নীতি-লুট-পাটের কারণেই ১৯৭৪-এ ভয়াবহ দুর্নীতি নেমে আসে। শেখ মুজিবুর রহমান এর একটি উক্তি থেকে দুর্নীতি ও লুটপাটের চিত্র ফুটে ওঠে-‘সাত কোটি মানুষের আট কোটি কম্বল, আমার কম্বল গেল কই’। এর মাঝেও সে সময়ে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদল-বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক লীগ-বাকশাল গঠন করেন। ফলে আওয়ামীলীগ দল হিসেবেও বিলুপ্ত হয়ে বাকশাল নাম ধারণ করে। আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরাও বাকশাল নেতা হয়ে যান। রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যায়। ফলে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নেমে আসে ১৫ আগস্ট। শেখ মুজিব আত্মীয়-পরিজনসহ পরিবারবর্গ নিয়ে (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা ব্যতীত) নিহত হন। ক্ষমতা গ্রহণ করেন খন্দকার মোশতাক। রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকেই যায়। আসে ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি যা ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ নামে পরিচিত। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির মাঝে নেতৃত্বে চলে আসেন জিয়াউর রহমান।
নেতৃত্বে আসার পর এক পর্যায়ে ১৯৭৭ সালে ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এর কাছ থেকে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্টের দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং প্রেসিডেন্টের দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করার পর দেশকে সমৃদ্ধশালী, স্ব-নির্ভর, আধুনিক ও টেকশই উন্নতির কাতারে নিয়ে যাওযার লক্ষ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দুর্ভিক্ষ-দারিদ্র্যপীড়িত এই বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে “১৯ দফা” পেশ করেছিলেন-তা ছিল এদেশের গণমানুষের মুক্তির সনদ; দেশে আজ অবধি যতো উন্নয়ন বা উন্নতিই হচ্ছে তা সেই “১৯ দফা’রই বহিঃপ্রকাশ? ঊনিশ দফা কর্মসূচি নিচে উল্লেখ করা হলো-
১.সর্বোতভাবে দেশের স্বাধীনতা, অখ-তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
২.শাসনতন্ত্রের চারটি মূলনীতি অর্থাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি সর্বাত্মক বিশ্বাস ও আস্থা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার সমাজতন্ত্র -জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে প্রতিফলন করা।
৩.সর্ব উপায়ে নিজেদেরকে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসাবে গড়ে তোলা।
৪.প্রশাসনের সর্বস্তরে উন্নয়ন কার্যক্রমে এবং আইন শৃংখলা রক্ষার ব্যাপারে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৫.সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ তথা জাতীয় অর্থনীতিকে জোরদার করা।
৬.দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং কেহ যেন ভূখা না থাকে, তার ব্যবস্থা করা।
৭.দেশে কাপড়ের উৎপাদন বাড়িয়ে সকলের জন্যে অন্তত মোটা কাপড় সরবরাহ নিশ্চিত করা।
৮.কোন নাগরিক যেন গৃহহীন না থাকে, তার যথাসম্ভব ব্যবস্থা করা।
৯.দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা।
১০.সকল দেশবাসীর জন্যে ন্যূনতম চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা।
১১.সমাজে নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা এবং যুবসমাজকে সুসংহত করে জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ করা।
১২.দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ দান।
১৩.শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি সাধন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সুস্থ শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
১৪.সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে জনসেবা ও দেশ গঠনের মনোবৃত্তি উৎসাহিত করা এবং তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
১৫.জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ করা।
১৬.সকল বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং মুসলিম দেশগুলির সাথে সম্পর্ক জোরদার করা।
১৭.প্রশাসন এবং উন্নয়ন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা।
১৮.দুর্নীতিমুক্ত ন্যায়-নীতিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা।
১৯.ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার পূর্ণ সংরক্ষণ করা এবং জাতীয় ঐক্যে ও সংহতি সুদৃঢ় করা।
এরপর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতি, কৃষি, শিল্প-কল-কারখানা, শিক্ষা, কারিগরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন বিষয়ারলী অথার্ৎ স্বাধীন দেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ থেকে ‘ইর্মাজিং টাইগারে’ পরিণত করতে এমন কোন খাত নেই যে, অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে জিয়াউর রহমান কাজ করেন নি।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তিনি নেন যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি প্রথমে হ্যাঁ-না ভোট করে ‘গণতন্ত্রের বীজ’ বপন করেন এবং সে হ্যাঁ-না ভোটে প্রায় ৯৯% ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ০১ লা মে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উপর থেকে নিষেধাক্কা তুলে নেন এবং নির্বাসিত ও নিষ্পেষিত গণতন্ত্র, ভূলুণ্ঠিত মানবাধিকার এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ‘বাকশাল’ বিলুপ্ত করে সকল মানুষ যাতে অবাধে এবং স্বচ্ছভাবে তাদের মতামত দিতে পারে এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের সবার জন্য রাজনীতি করার নিমিত্তে ‘ বহুদলীয় গণতন্ত্র’ প্রবর্তন করেন। যা ছিল স্বাধীন দেশে গণতন্ত্রের জন্য এক অনন্য ইতিহাস। সেই সাথে যুগোপযোগী রাজনীতির অভিষেক ঘটে এ দেশে। এর ফলে যে আওয়ামীলীগ বাকশাল গঠনে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল-সেই আওয়ামীলীগও ‘আওয়ামীলীগ নাম নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ পায়।
এরপর ১৯৭৮ সালে ০১লা সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন এবং নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করে বিজয়ী হয়।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংরাদেশের নাগরিকদের একটা নিজস্ব পরিচয় বর্হিবিশ্বে তুলে ধরেন। তা হলো-তিনি বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে সকল নাগরিকদের এক পরিচয় ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’। তিনি বাংলাদেশের বাঙালি-অবাঙালি, বেদে-সাঁওতাল, চাকমা, গাড়ো, খাসিয়া, মণিপুরি প্রভৃতি সকল জাতি-উপজাতির জনগোষ্ঠীকে ভাষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত এর সব কিছুর ঊর্র্ধ্বে সকল নাগরিকের প্রথম রাষ্ট্রীয় পরিচয় “বাংলাদেশি” পরিচয়কে তুলে ধরেন এবং দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও প্রত্যাশাকে সম্মান করে “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ” সংবিধানে প্রতিস্থাপন করেন- যেখানে আমাদের নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয় অক্ষুণœœ থাকে।
জিয়াউর রহমান এর সময় আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রেও আসে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সফলতা। তার মধ্যে অল্প কিছু নিচে উল্লেখ করা হলো-জিয়াউর রহমান এর সময় বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার মাত্র ৭ বছরের মাথায়-তার ক্যারিশম্যাটিক রাষ্ট্র পরিচালনার কারণে/ বর্হিবিশ্বে সফলভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরার কারণে ভোটের মাধ্যমে জাপানকে হারিয়ে ‘নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ’ লাভ করে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর কারণেই বাংলাদেশ তিন সদস্যবিশিষ্ট ‘আল-কুদস’ কমিটি’তে স্থান পায়। জিয়াউর রহমানই দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নেতা যিনি এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সর্বপ্রথম ‘সার্ক’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সার্ক প্রতিষ্ঠায় এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশে যোগাযোগ আরো গাঢ় করেন এবং পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করেন। জিয়াউর রহমান ইরাক-ইরান যুদ্ধে শান্তি স্থাপনে জাতিসংঘের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে সৈন্যও প্রেরণ করে বিশ্বে তাক লাগিয়ে দেন।
………………জিয়াউর রহমান এর কার্যক্রম ছিল এই মা-মাটি, দেশ জাতির জন্য। অল্প সময়ের মধ্যে জিয়াউর রহমান এর কার্যক্রম ও সুনাম শুধু দেশে নয়, বর্হিবিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ছিল। স্বাধীন দেশ গঠন ও অবকাঠামোগত টেকশই উন্নয়নে জিয়াউর রহমান দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে গেছেন এবং মানুষের সাথে হাত মিলিয়ে নিষ্কণ্ঠক, নিবিড়ভাবে একের পর এক কাজ করে গেছেন। একটা উদাহরণেই বোঝা যায়-জিয়াউর রহমান দেশের উন্নয়নে ও গঠনে নিজের হাতে খালও কেটেছেন। ফলে তার সময়ে দেশে কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছিল। জিয়াউর রহমান এর কর্মকা- এক লেখাতেই শেষ করা যাবে না।
জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দিশেহারা জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে তথা মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে যেমন সফল হয়েছিলেন, দেশ স্বাধীনের পরেও এই দেশের সকল জনগণকে এক পরিচয় ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ পরিচয় দিয়েছিলেন এবং দেশকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরেছিলেন-সেই সাথে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গিয়ে সব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। জিয়াউর রহমান এই মাটি-মা তথা দেশের জন্য অবিরাম কাজ করে হয়েছিলেন মা-মাটি, দেশ-জাতির জিয়াউর রহমান। তিনি অমর-অম্লান। ইতিহাসে রবে জিয়াউর রহমান এর লেখা নাম-যা চিরদিন বহমান।
মোঃ মিজানুর রহমান-লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।