খােলা বাজার২৪। সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৮: রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর ড.চক্রবর্তী রঙ্গরাজন বলেন, মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি যদি এক মুখী না হয় তখন তা অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই একটা অর্থনীতিকে সুচারুরূপে কার্যকরী রাখার জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে গভীর সংলাপ ও সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) এ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়ক এক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বিআইবিএম গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ফজলে কবিরের সভাপতিত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বিতীয় গভর্নর এ কে এন আহমেদের স্মরণে এ একক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ড.চক্রবর্তী রঙ্গরাজন আরো বলেন, প্রায় সমস্ত দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তবে অধিকাংশ সরকারই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামতকে গুরুত্ব দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো যুক্তি হলো আর্থিক স্থিতিশীলতা যা কিনা আধুনিক দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য অত্যাবশ্যক, সেটা কেবল কিছু দক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী মুদ্রানীতি তৈরী ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্ভব।
ড. রঙ্গরাজন মূল্যস্ফীর্তি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা নিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথেষ্ট ইনস্ট্রুমেন্টস আছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যখন অতিরিক্ত চাহিদা হতে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয় তখন এ মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতাকে মেনে থাকে। তবে যখন সরবরাহ সংকট থেকে এ মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা সম্পর্কে কিছু সন্দেহের জন্ম দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মত দেশসমূহ যেখানে কৃষিজ উৎপাদন অনেকটা প্রকৃতির খামখেয়ালির উপর নির্ভরশীল সেখানে এ জাতীয় সরবরাহ সংকট অহরহ দেখা যায়। যখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়, তখন মূদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি যৌথভাবে ভূমিকা রাখতে হয়। যখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ হয় এবং এটা যখন মূল্যস্ফীতির গ্রহণযোগ্য মাত্রা অতিক্রম করে তখন মুদ্রানীতিকে অবশ্য এভাবে পরিচালনা করতে হবে যাতে করে আর্থিক সম্পদের রিটার্ন প্রকৃত পক্ষে ধনাত্বক হয়।
উন্নত বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসমূহ সাধারণত: মুদ্রা বিনিময়ের হারকে মার্কেটের উপর ছেড়ে দেয়। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। যেমন উন্নত বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকসমূহ মুদ্রা বিনিময় হারকে স্থিতিশীল করার জন্য কখনও এককভাবে, আবার কখনও সম্মিলিতভাবে বাজারে হস্তক্ষেপ করে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পূর্ব পর্যন্ত আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং মুদ্রানীতির সম্পর্কটি খুব একটা পরিষ্কারভাবে অনুভূত হয়নি। উন্নয়নশীল দেশসমূহের ক্ষেত্রে বর্তমানে মূল্যস্থিতিশীলতা অর্জন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য হলেও বিশ্বায়নের ফলশ্রুতিতে মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তার লক্ষ্যের ব্যাপারেও আরও স্বচ্ছ ও বহির্মূখী হতে হবে। তবে যেটা বেশী প্রয়োজন তা হলো প্রচলিত নিয়ম ও বিচারিক বিচক্ষণতার একটা সুন্দর সমন্বয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের লক্ষ্য যেমন মূল্য স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ইত্যাদির মধ্যে মূলস্থিতিশীলতার লক্ষ্যটি বেশী জোরালো হতে হবে। মূল্যস্ফীতির টার্গেটিং এক্ষেত্রে সহায়ক হবে। সাধারণ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলে এর অন্য লক্ষ্যসমূহও মধ্যমেয়াদে অর্জিত হবে।
উল্লেখ্য,ড.চক্রবর্তী রঙ্গরাজন রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ১৯তম গভর্নর ছিলেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং রাজ্য সভার সদস্যও ছিলেন।