Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮: শালকে এখন নতুন ঢঙে উপস্থাপন করছেন ডিজাইনাররা। শালের সৌন্দর্য একই রকম রেখে বদলে গেছে ব্যবহারের ধরন। আলাদা পোশাক থেকে শাল এখন পোশাকের ফেব্রিকস। আস্ত শাল দিয়ে বানানো হচ্ছে কামিজ, কটি, জ্যাকেটসহ বাহারি সব শীত-পোশাক।

বিস্তারিত 

শাল ব্যবহার হতো শীত পোশাকের সহায়ক হিসেবে। এখন আলাদা করে পোশাক হিসেবেই ব্যবহার হচ্ছে শালের তৈরি শীত পোশাক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসমত আরা তূর্ণা বললেন, ‘শীত পোশাক হিসেবে প্রথম পছন্দ সোয়েটার, কার্ডিগান আর জ্যাকেট। শীতের সকালে ঘুম ভেঙে ক্লাসে আসা এমনিতেই কষ্টের। তাই ব্যবহারের ঝামেলা নেই এমন শীত পোশাক বেছে নিই। শাল সামলানো একটু ঝক্কির বলে তুলনামূলক কম কেনা হতো। বুটিক শপে কিছুদিন আগে পেলাম শাল দিয়ে বানানো জ্যাকেট আর কটি। দেখেই পছন্দ হলো। আলাদা করে ওড়না বা স্কার্ফের দরকার হয় না। পরতেও বেশ আরাম আর দেখতেও ফ্যাশনেবল। দামও সাধ্যের মধ্যে।’ তূর্ণার মতো অনেক তরুণীরই মনে ধরেছে শালের নতুন এই ট্রেন্ডি শীত পোশাক।

বাজারি হাল

গত কয়েক বছর শালের নতুন রূপ দেখা গেছে পঞ্চোতে। বাংলার মেলার ডিজাইনার শৈবাল সাহা বললেন, ‘ব্যবহারের স্বাচ্ছন্দ্য আর নতুনত্বের বিষয়টি মাথায় নিয়েই শাল দিয়ে পোশাক ডিজাইনের বিষয়টির সূচনা। ফ্যাশনপ্রেমীরা সব সময়ই নতুনত্বের খোঁজ করে। সেই ভাবনা থেকেই ঐতিহ্যবাহী শালকে পোশাকের ফ্যাব্রিকস হিসেবে বেছে নিয়েছি। নরসিংদীর তাঁতে বোনা শাল, কুমিল্লার খাদি, কাশ্মীরি ও আদিবাসী বুননের শাল দিয়ে ডিজাইন হচ্ছে কটি, জ্যাকেটসহ বিভিন্ন ধরনের শীত পোশাক। ফ্যাশনেবল আর বাহারি রঙের কারণে সবাই পছন্দ করছে নতুন এই শীত পোশাক।’ বাজার ঘুরে দেখা যায়, শাল দিয়ে বানানো পোশাকে শালের ডিজাইন ও নকশা একই রকম থাকছে। ফ্যাব্রিকস হিসেবে কখনো সরাসরি শাল ব্যবহার হয়েছে, কখনো শালের বুনন ও নকশায় ফ্যাব্রিকস বানিয়ে নেওয়া হয়েছে। কটি, জ্যাকেট, ব্লেজারের মতো শীত পোশাক যেমন তৈরি হচ্ছে শাল দিয়ে, তেমনি কামিজ বা টপসের মতো স্বতন্ত্র পোশাকের ফ্যাব্রিকস হিসেবে শাল বেছে নেওয়া হচ্ছে। দেশি তাঁতে বোনা শালের পাশাপাশি বিদেশি শালও ব্যবহার হচ্ছে শীত পোশাকের ফ্যাব্রিকস হিসেবে।

ডিজাইন বৈচিত্র্য 
শালের তৈরি এসব শীত পোশাকের বড় সুবিধা হলো, স্বচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করা যায়। ফ্যাশন হাউস বিবিয়ানার ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘পোশাকের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য আর ফ্যাশনেবল—এ দুটি বিষয় মাথায় রাখা হয়। দুটি বিষয় ভেবেই শালের পাশাপাশি লং কটি আর জ্যাকেট ডিজাইন করা। লং কটির ডিজাইনেও শালের লুক রাখতে বেশ কিছু নিরীক্ষা করেছি। সব বয়সীর কথা বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন মাপে তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া শালের বুনন, নকশার সঙ্গে ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, এমব্রয়ডারিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নতুনত্ব আনা হয়েছে।’

বেশ কিছু ফ্যাশন হাউস ঘুরে দেখা যায়, শালের তৈরি পোশাকে ছিমছাম নকশার সঙ্গে ফিউশন ডিজাইনও থাকছে। শালের নিজস্ব নকশা সমৃদ্ধ হচ্ছে অন্য সব ডিজাইন মাধ্যম সঙ্গে নিয়ে। ব্লক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, শিবুরি বা টাই-ডাই থাকছে নকশায়। আবার কখনো এসব নকশার সঙ্গে অল্প পরিসরে মেশিন এমব্রয়ডারিও ব্যবহার হচ্ছে। পোশাকের হাতা বা নিচের অংশে লেস, বোতাম বা টারসেলের দেখা মিলছে। নানা আকার ও আকৃতির পকেট ডিজাইনে ভিন্নতা এনেছে। বিভিন্ন ঝুলে ও সাইজে তৈরি হচ্ছে শালের পোশাক। শর্ট টপস থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত ঝোলানো লং কটি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। ফুল হাতা ও হাতা কাটা—দুই ধরনের কটি থাকছে।

রং বাহারি

শীত পোশাকের মূল আকর্ষণ গাঢ় রং। নতুন শালের পোশাকেও তার ব্যতিক্রম নেই। পোশাকে একরঙা শালের ব্যবহার যেমন আছে, তেমনি আছে বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের সমন্বয়ে শালের ব্যবহার। অনলাইন ফ্যাশন হাউস টগাই কাজ করছে শালের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে।

স্বত্বাধিকারী নাফিসা তাসনীম ইশরাক জানালেন, ‘শীতের শালের রং এমনিতেই খুব উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় হয়। আমরা সেই রংগুলোই ফুটিয়ে তুলেছি জ্যাকেট ও কটিতে। লাল, মেরুন, নীল, কমলা, হলুদ, বেগুনিসহ নানা উজ্জ্বল রঙের শালের শীত পোশাকের সংগ্রহ রয়েছে টগাইতে। পোশাক ডিজাইনে এমন রং বেছে নেওয়া হয়েছে যেন একটি শালের পোশাক বেশ কয়েকটি পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়।’

পেতে চাইলে

বাংলার মেলা, নিপুণ, অঞ্জন’স, রঙ, বিবিয়ানাসহ বেশ কিছু ফ্যাশন হাউসে পাবেন শাল দিয়ে বানানো কটি, জ্যাকেট আর বাহারি টপস। ডিজাইনভেদে কটি পাবেন ৮০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। জ্যাকেটের দাম শুরু এক হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা। আর হরেক নকশার কামিজ ও টপস পাবেন এক থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যেই। অনলাইন শপ টগাই, তুগুনসহ অনেকেই কাস্টমাইজড শালের পোশাক বানিয়ে দেয়। দরদাম নির্ভর করছে ডিজাইন আর নকশার ওপর।