খােলা বাজার২৪। শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮: রায় ঘোষণাকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনীতির ময়দান। রায় ঘোষণা হওয়ার পর দলের ভবিষ্যৎ কি এ নিয়ে শঙ্কায় বিএনপি। চলছে দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে নানামুখী আলোচনা বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। রায় ঘোষণার আগেই শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপি নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তাদের অভিযোগ সরকারের ছকেই রায় ঘোষণা হবে। দলের নেতাদের কাছে খবর, দলীয় চেয়ারপারসনের সাজা এবং তাকে বেশ কিছুদিন কারাগারে রেখে দল ভাঙার চেষ্টা হতে পারে। তাই এ মুহূর্তে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। বৃহস্পতিবার আদালতের রায় ঘোষণার তারিখ জানার পর রাতে দলের কয়েকজন নেতা পৃথক কয়েকটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকগুলোর সূত্র ধরে এসব তথ্য জানা যায়।
রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত সরকার এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশের মনোভাব জানার চেষ্টা করবে বিএনপি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত খালেদা জিয়ার মামলা ও রায়ের বিষয়টি কীভাবে দেখছে, তাদের বক্তব্য কী, তা জানতে দলের কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করেন আদালত।
তবে আগাম নির্বাচনে আগ্রহ থাকলেও নানামুখী শঙ্কাও বিরাজ করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে। দলের বড় একটি অংশ মনে করছে, সরকার বিএনপিকে প্রতিকূল অবস্থায় রেখেই আগাম নির্বাচন দেবে। সেটা ২০১৭-১৮ সালের যে কোনো সময় হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে ভাঙনের মুখে ফেলতে পারে। মামলার ফাঁদে থাকা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্যও ঘোষণা করতে পারে। অবশ্য এরই মধ্যে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কয়েকজন নেতাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই মেয়াদে কোনো নেতাই আপিল করবেন বলে মনে হয় না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র সেই ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকারও নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে, কোনো লাভ হয়নি। এবার যদি ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় নেতা খালেদা জিয়াকে ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দেয়, তা হলে দেশের জনগণ তা রুখে দেবে। সরকারকে বলব, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, দল ভাঙার যে চেষ্টা, কোনো কাজে আসবে না; বরং খালেদা জিয়া আরও জনপ্রিয় হবেন এবং তার নেতৃত্বে বিএনপির ভিত আরও শক্তিশালী হবে। দেশের মানুষের ভালোবাসা পেতে চাইলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ওয়ান-ইলেভেন সরকার বহু চেষ্টা করেও বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি। আর সরকারের জনসমর্থন তো শূন্যের কোঠায়। দলে এমন কোনো পাগলও দেখি না যে খালেদা জিয়াকে ছেড়ে বিএনপি ভাঙার কাজ করবে। আর কেউ যদি চাপে পড়ে সরকারের ফাঁদে পা দেয়, তার সঙ্গে বিএনপির কোনো কর্মী যাবে না। এ ধরনের নেতার এমন পরিণতি হবে, যা স্বপ্নেও ভাবেনি কেউ।
এদিকে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে আজ শনিবার রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন খালেদা জিয়া। রাতে তার কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল রবিবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হবে।
বিএনপি নেতাদের কাছে তথ্য আছে, দলের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় দলের সদস্যপদের অযোগ্যতার বিধান নিয়ে একটি পক্ষ বিশ্লেষণ করছেন। ওই ধারা (ক)-তে বলা আছে, ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতি আদেশ নং ৮-এর বলে দ-িত ব্যক্তি, (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।
জানা গেছে, মূলত এ বিষয়টি নিয়ে নানাভাবে বিশ্লেষণ হচ্ছে। আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর এ ধারাকে কাজে লাগিয়ে দলে বিভেদ তৈরি করা হতে পারে বলে বিএনপি নেতাদের ধারণা। যদিও দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, ষষ্ঠ কাউন্সিলের গঠনতন্ত্র এখনো ছাপানো হয়নি।
মামলার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গণমাধ্যমে বলেন, তারা খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চান। রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় রাখতে চান।
সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের বৈঠকে নেতারা একটি বিষয় বারবার বলেছেন, তা হলো দলে বিভেদ তৈরির চেষ্টা চলছে। দলের কেউ-কেউ এতে পা-ও দিয়েছেন। দল বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত। মাসখানেক আগে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে দলের নেতারা বিষয়টি তুললে তিনি বলেন, দলের ছেলেদের দায়িত্ব কী?
দলের এক ভাইস চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিএনপিকে যেভাবে গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা ধরে ভাঙার ষড়যন্ত্র হয়েছিল, এবার যাতে তা না হতে পারে, তাই নেতারা সতর্ক রয়েছেন।
সম্প্রতি এক বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতাকে দলের নেতাদের মধ্যে ঐক্য তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দলের শীর্ষপর্যায়ের দুই নেতার মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব মেটাতে তিনি কাজ করবেন। দলের বিভিন্ন গ্রুপের নেতারা একসঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত আড্ডা দেবেন। এতে তারা নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে বিএনপির মেসেজ দিতে চান। দেশের সব পক্ষ ও মহলকে বার্তা দিতে চান, ওয়ান-ইলেভেনের মতো বিএনপিতে ফাটল তৈরি সম্ভব হবে না।
দলের নেতারা মনে করছেন, আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হতে পারে। প্রধান বিচারপতি কে হবেন এবং তার বিচার-বিশ্লেষণ কী হয়, তা-ও পর্যবেক্ষণে রাখবেন তারা।
নতুন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বিষয়ে দলের নেতাদের একান্ত বৈঠকে মূল্যায়ন আগের আইজিপিদের চেয়ে একটু ভিন্ন। নেতাদের মত, অন্য যারা আলোচনায় ছিলেন, তাদের চেয়ে তিনি বেশি পেশাদার।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার সেই শুরু থেকেই বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। নানাভাবে তারা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫০ হাজারের বেশি মামলায় প্রায় ১২ লাখ আসামি করা হচ্ছে। তারা নানাভাবে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটকে ভাঙার চেষ্টা করেছে। কোনো লাভ হয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে। মানবজমিন, আমাদের সময়, ইত্তেফাক