খােলা বাজার২৪। শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮: তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এখনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। ফলে এখনো সই হয়নি বহুল প্রত্যাশিত ওই চুক্তি। তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশ অপেক্ষায় আছে সেই ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় থেকেই। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে আলোচনার সময় তিস্তার প্রসঙ্গ উঠেছে। ভারত প্রতিবারই বলেছে, তিস্তা চুক্তি সই করার বিষয়ে নয়াদিল্লি অঙ্গীকারবদ্ধ। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য কাজ করছে ভারত।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারতের প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে গত বছরের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের সময় তিস্তা নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে অঙ্গীকার করেছিলেন তার ওপর আস্থা রাখছে ঢাকা। গত বছরের ৮ এপ্রিল নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘মহামান্য শেখ হাসিনা, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কেবল আমার সরকার ও আপনার সরকারই তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়ে দ্রুত একটি সমাধান খুঁজে পেতে পারে।’
বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বছর চলছে। ভারতে মোদির বর্তমান সরকারের মেয়াদও শেষ হবে আগামী বছর। নরেন্দ্র মোদি তিস্তা নিয়ে তাঁর অঙ্গীকারের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমার ইঙ্গিত করেছেন কি না সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা। তাঁরা বলেছেন, শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যেই তাঁদের অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁদের অঙ্গীকার সুস্পষ্ট।
মোদির ওই অঙ্গীকারের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গত অক্টোবর মাসে ঢাকা সফরের সময় আনুষ্ঠানিক বৈঠকেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি তুলেছে বাংলাদেশ। বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা তিস্তা ইস্যু নিয়ে কাজ করছি। তবে আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না। কূটনীতিতে কোনো কিছু ঘটার আগে বিস্তারিত বলা যায় না।’
ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ ব্রিফিংয়ে সুষমা স্বরাজ তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘আমরা অনিষ্পন্ন কিছু ইস্যু সম্পর্কেও অবগত। আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি।’
তবে মোদির অঙ্গীকারের প্রায় ১০ মাস এবং সুষমা স্বরাজের সফরের দুই মাস পরও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। নয়াদিল্লির সূত্রগুলো বলছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্মতি নিয়েই ভারত ওই চুক্তি করবে বাংলাদেশের সঙ্গে। ভারত বাংলাদেশের প্রত্যাশার বিষয়টি বোঝে। একইভাবে ভারতও প্রত্যাশা করে তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও জটিলতার বিষয়টিও বাংলাদেশ বুঝবে। অনেক দেরিতে হলেও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত সমস্যার সমাধান করেছে। সময় লাগলেও সবাইকে নিয়ে ভারত তিস্তা সমস্যারও সমাধান করতে চায়।
সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা বলছেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি এখন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রতীকী ও আবেগী ইস্যু হয়ে উঠেছে। দুই দেশের অনেক অর্জনের বিপরীতে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়াটা ভিন্ন এক দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। আর এটি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।