খােলা বাজার২৪। সোমবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮: জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের সকালটা আরও সুন্দর করে তুললেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। বিশেষ করে তামিম।
শুরুর দিকে উইকেট যতটা ভালো মনে হচ্ছে, পরে সেটি নাও থাকতে পারে, যা করার এখনই করতে হবে—এ ভাবনায় কি না শুরুতেই তামিমের আক্রমণ। লাহিরু কুমারার ঘণ্টায় ১৪০-১৪২ কিলোমিটার গতির বলগুলো সামনের পায়ে দৃষ্টি–জুড়োনো সব ড্রাইভ সকালটা ভীষণ উপভোগ্য করে তুললেন বাঁহাতি ওপেনার। তাঁর স্ট্রোকের ঝলকানিতে প্রতিপক্ষের বোলারদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। প্রথম সেশনে পানি পানের বিরতিতে তামিম যখন ফিফটি থেকে মাত্র ১ রান দূরে, মাঠেই সতীর্থদের নিয়ে ছোট্ট একটা সভা করে ফেললেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল। সেই সভার আলোচ্য বিষয় যে বাংলাদেশের দুই ওপেনার, বিশেষ করে তামিমকে দ্রুত ফেরানো—না বললেও চলছে। বিরতির খানিক পরেই ৬ চার ও ১ ছয়ে ৪৬ বলে ফিফটি করে দর্শকদের করতালিতে অভিনন্দিত হলেন ‘লোকাল হিরো’ তামিম। কিন্তু ‘তামিম-তামিম’ কোরাসটা দীর্ঘ হলো না হলো ব্যাট-প্যাড গলে দিলরুয়ান পেরেরার বলে বোল্ড হওয়ায়। ওয়ানডের মতো টেস্টেও ফিফটির চক্রে আটকা পড়লেন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান।
টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে গত ছয় ইনিংসের চারটিতেই ফিফটি করা তামিম কেন বারবার সেঞ্চুরি হাতছাড়া করছেন, সেটি এক রহস্যই। অসাধারণ খেলেছেন, দুর্দান্ত ছন্দে আছেন। ধারাবাহিক হাসছে তাঁর ব্যাট। এই তো সময় ফিফটিকে যত বেশি সেঞ্চুরিতে নিয়ে যাওয়ার। তামিম নিজেও তা জানেন। তবু কেন যেন হচ্ছে না, বারবার ফিরছেন সেঞ্চুরি হাতছাড়া হতাশা নিয়ে।
সর্বশেষ টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন ২০১৬ সালের অক্টোবরে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে। গত দেড় বছরে ৯ টেস্টে ১৭ ইনিংসে ৬টা ফিফটি পেয়েছেন, সেঞ্চুরি করতে পারেননি একটিও। ক্যারিয়ারে যে ২৫টা ফিফটি পেয়েছেন, সেটির ১১টিতে আউট হয়েছে ৫০-এর ঘরে।
টেস্টে ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়ার ক্ষমতায় সবার ওপরে অবশ্যই ডন ব্রাডম্যান। ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপান্তর হার ৬৯.০৫ শতাংশ, ৪২টি ফিফটি পেরোনো ইনিংসের ২৯টিই সেঞ্চুরিতে নিয়ে গেছেন এ ক্রিকেট কিংবদন্তি। ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপান্তর হার ৬৬.৬৭ শতাংশ নিয়ে দুইয়ে আরেক ক্রিকেট কিংবদন্তি জর্জ হ্যাডলি। তিনে আছেন এই সময়ের বিরাট কোহলি—রূপান্তর হার ৫৬.৭৬ শতাংশ।
তামিম সেখানে কতটা পিছিয়ে, পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। টেস্টে ৩৩টি ফিফটি পেরোনো ইনিংসের ৮টি রূপ দিতে পেরেছেন সেঞ্চুরিতে। বাংলাদেশ ওপেনারের একটাই সান্ত্বনা, ওয়ানডের তুলনায় টেস্টে তাঁর রূপান্তরের হার কিছুটা বেশি। ওয়ানডেতে ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপান্তর হার ১৮ শতাংশ হলেও টেস্টে সেটি ২৪.২৪। এ পরিসংখ্যানে যদিও সন্তুষ্ট হবেন না তামিম নিজেও। অসাধারণ শুরু যদি করতে পারেন, সেটির সুন্দর পরিণতি কীভাবে দিতে হয় নিশ্চয়ই তাঁর অজানা নয়।