খােলা বাজার২৪। রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলার রায়ে সাজা হলে খালেদা জিয়ার বদলে কে দলের হাল ধরবেন? এ ব্যাপারে বিএনপির নেতারা বলেন, দলের গঠনতন্ত্রেই এর সমাধান রয়েছে। যে কোনো কারণে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারায় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তির মর্যাদা দিয়েছে। চেয়ারপার্সনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটির সভা ডাকাসহ চেয়ারপার্সনের অন্য সব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালানায় এ দু’জন ছাড়া অন্যদের কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। কেননা, এ দু’জনের বাইরে কেউই দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক ডাকতে পারেন না। আর এই বৈঠক না হলে কোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদন পায় না।
গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারায় বলা হয়েছে, সিনিয়র ভাইস চেয়াম্যান দায়িত্ব পালনে চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করবেন। চেয়ারম্যান কর্তৃক অর্পিত যে কোনো দায়িত্ব পালন করবেন। চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে চেয়াম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। যে কোনো কারণে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান চেয়ারম্যানের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। দশ বছর আগে জরুরি অবস্থার মধ্যে দুদকের দায়ের করা এ মামলায় দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ২৫ জানুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান রায়ের এই দিন ঠিক করে দেন। অরফানেজ দুর্নীতি মামলায় খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানও আসামি। মুদ্রা পাচারের দায়ে সাত বছর কারাদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে পালিয়ে আছেন দেশের বাইরে। এ মামলাতেও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এমতাবস্থায় রায়ে শাস্তি হলে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের দায়িত্ব পালন করবেন কারা তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দল পরিচালনায় কোনো সমস্যা হবে না। এই নেতারা মনে করেন, যে মামলায় খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। তবু রাজনৈতিক কারণে চেয়ারপার্সনকে জেলে নেয়া হলে দল কিভাবে পরিচালিত হবে, সে ব্যাপারে একটা ধারণা শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আছে। বিএনপির এই নেতারা বলছেন, মূলত লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের পরামর্শে দল পরিচালিত হবে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি ও মহাসচিব তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে করণীয় নির্ধারণ করবেন। এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া বিদেশে অবস্থানের সময় স্থায়ী কমিটি ও মহাসচিব তার সঙ্গে পরামর্শ করে দল পরিচালনা করেন। এখন চেয়ারপার্সন অনুপস্থিত থাকলে দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা তারেকের পরামর্শে চলবে, এটাই স্বাভাবিক।
তবে দলীয় চেয়ারপার্সনের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী কমিটির মধ্যকার কয়েক সদস্যকে নিয়ে একটি প্যানেল করা হবে, যারা দেশের বাইরে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়াম্যানের পরামর্শ মোতাবেক দল পরিচালনা করবেন। তারা হচ্ছেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। আর যদি হয়, তাহলে আমরা স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সমষ্টিগতভাবে আলোচনা করে আমাদের দল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেব।
রায়ের দিন সারাদেশে রাজপথে অবস্থান নেবেন নেতাকর্মীরা: দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে রাজপথে অবস্থান করবেন নেতাকর্মীরা। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাতীয় নির্বাহী কমিটির রুদ্ধদ্বার যে কর্মঅধিবেশন হয় তাতেই এ আহ্বান জানানো হয় বলে একাধিক সদস্য জানিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর খিলক্ষেতের লা মেরিডিয়ান রেস্টুরেন্টে দলটির নির্বাহী কমিটির এই রুদ্ধদ্বার সভা দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত চলে। খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে ৫ নারী নেত্রীসহ ৪২ জন নির্বাহী কমিটির সদস্য বক্তব্য রাখেন। তৃণমূল নেতারা তাদের বক্তব্যে সাংগঠনিক, রায়ের দিন শীর্ষ নেতাদের মাঠে অবস্থান করা, আগামী একাদশ নির্বাচনে অংশ নেয়া, দলের চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে সরকার কর্তৃক সাজা হলে পরবর্তী সময়ে দলের কে দায়িত্ব পালন করবেন, কাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হবে, কীভাবে হাসিনার অধীনে ছাড়া নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করা হবে ইত্যাদিসহ নানা বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন।
মঞ্চে উপস্থিত দলীয় প্রধান বেগম জিয়া নেতাদের বক্তব্য মনোযোগসহকারে শ্রবণ করেন। সবার বক্তব্য শেষ হলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্টির অবস্থান, মামলার রায়ে সাজা হলে কী করণীয়, আন্দোলন ও কর্মসূচির সময় দলীয় নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা ইত্যাদি বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন বলে জানা গেছে।
নেতারা বলেন, নির্বাহী কমিটিতে আরো সিদ্ধান্ত হয় নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপি আগামীতে নির্বাচনে অংশ নেবে না। দলের সব নেতাকর্মীকে সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর মামলার রায়ে সাজা হলে পার্টির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান ও আমীর খসরু মাহম–দ চৌধুরী খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দলের দেখভাল করবেন। এ ছাড়া সারাদেশে বাকি জেলা কমিটিগুলো আগামী দুই-একদিনের মধ্যে ঘোষণা করার কথা জানানো হয়। মানবকণ্ঠ