খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: প্রতারণার অভিযোগে পাঁচ নাইজেরিয়ান ফুটবলার ও দুই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রাজধানীর বসুন্ধরা ও খিলখেত লেকসিটি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ৫ নাইজেরিয়ান হলেন- ওগোখোয়া ওনোচি (৩২), মরিস (৩৪), ওবিনা (৩৫), হ্যানরি ওরফে শর্ট হ্যানরি (২৪), এন্থপ্নি কেজিতো অ্যারেঞ্জি (২৬)। এছাড়া গ্রেফতার দুই বাংলাদেশি হলেন মো. কাউসার আহমেদ ও রাইসুল ইসলাম আসাদ। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই প্রতারণার টাকা সংগ্রহ করতো বিদেশি প্রতারক চক্রটি।
গতকাল সোমবার সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার ৫ নাইজেরিয়ান ফেনী সকার ক্লাবের ফুটবলার। এছাড়া এরা মোহামেডন ও আবাহনীর পক্ষেও ফুটবল খেলেছেন। তবে বর্তমানে এরা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি নাদিরা আক্তার নামে এক চিত্রশিল্পী ইংল্যান্ডের একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ছবি পাঠান। প্রতারকরা নাদিরার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে তাকে ফোন করে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানায়। তারা বলে, মূল্যবান পুরস্কারের ৩ লাখ পাউন্ডের (বাংলাদেশি প্রায় ৩ কোটি টাকা) পার্সেলটি তার নামে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ পার্সেলটি স্ক্যান করে পাউন্ড আছে বলে আটকে দিয়েছে। এর কয়েকদিন পর প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে নাদিরাকে ফোন দিয়ে পার্সেলটি ছাড়িয়ে নিতে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিতে বলেন। পরবর্তী সময়ে নানা কথা বলে আরা ২ লাখ টাকা আদায় করে। ওই কথিত কর্মকর্তা একদিন নাদিরাকে ফোন করেন এবং পার্সেল ছাড়িয়ে নিতে অবৈধ উপায় অবলম্বন করার কারণে ফেঁসে যেতে পারেন বলে ভয়ভীতি দেখান। নাদিরা মামলার ভয়ে এবং কোটি টাকা পুরস্কারের লোভে কয়েক দফায় সব মিলিয়ে মোট ১ কোটি ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা প্রদান করেন। টাকা পরিশোধের পর থমাস কিং নামে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নাদিরাকে পার্সেলটি আর পাওয়া যাবে না বলে জানান এবং নানা ধরনের হুমকি দেন। এরপর প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে নাদিরা রাজধানীর বনানী থানায় একটি মামলা করেন।
মোল্যা নজরুল জানান, গ্রেফতারকৃতদের একই অভিযোগে এর আগেও বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে; কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবারও প্রতারণায় লিপ্ত হন তারা। তাদের পাসপোর্টগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জমা আছে বলে জানিয়েছে তারা। মোল্যা নজরুল বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ১২টি নামে ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার টাকা সংগ্রহ করেছে। সেসব অ্যাকাউন্টধারীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করা ওই নারীর প্রসঙ্গে মোল্যা নজরুল বলেন, ওই নারী গ্রেফতারকৃতদের গার্লফ্রেন্ড কিংবা তাদের মধ্যে কারো স্ত্রী হতে পারেন। ওই নারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, প্রতারক চক্রটি প্রথমে অবস্থা সম্পন্ন একজনকে টার্গেট করে। পরে টর্গেটকৃত ব্যক্তির বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর নাইজেরিয়ানরা নিজেদের ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান বলে ওই দুই দেশের ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে একাউন্ট খুলে। পরে বন্ধুত্ব তৈরি করে বিশ্বস্ততা অর্জনের পর বিভিন্ন উপায়ে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। এসব বিদেশিকে বাংলাদেশি সহযোগীরা ভুক্তভোগীদের ব্যাংক একাউন্ট নম্বর সংগ্রহ করে। এই সহযোগিতার বিনিময়ে যার নামে ব্যাংক একাউন্ট এবং যে নাইজেরিয়ানদের কাছে একাউন্ট নম্বর ও টাকা পৌঁছে দেয় তারা প্রতিটি একাউন্টে জমা হওয়া টাকার ৫ শতাংশ করে পেয়ে থাকে। এভাবে সুকৌশলে চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতরণা করে আসছে। এ ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হবে বলে জানিয়েছেন মোল্যা নজরুল ইসলাম। সূত্র : ইত্তেফাক