Sun. May 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: প্রশ্নফাঁস নিয়ে প্রায় প্রতিযোগিতায় নেমেছে কিছু অসাধু কর্মকর্তারা। চলছে একের পর এক প্রশ্নফাঁস। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে পাবলিক পরীক্ষা, ভর্তি, নিয়োগ পরীক্ষা বাদ যাচ্ছে না কোনোটিই। প্রতিযোগিতামূলকভাবে পরীক্ষায় নিয়মিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ফাঁস ঠেকাতে একের পর এক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই প্রশ্নফাঁস থামানো যাচ্ছে না। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এখনি পদক্ষেপ নেয়া হলেও থামছে না। এসব ঘটনার দায় কার এ নিয়ে চলছে বিতর্ক।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বত্র এখন বাণিজ্যকরণ। এর চাপ পড়েছে পাবলিক পরীক্ষায়। কোচিং সেন্টার, নোট গাইড ব্যবসায়ী এখন প্রশ্ন ফাঁসের মূল হোতা। আর সৃজনশীলের এমসিকিউ পদ্ধতি প্রশ্ন ফাঁসের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। এজন্য সৃজনশীল পদ্ধতি বাদ দিয়ে ভিন্ন কোন পদ্ধতিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। এক কথা উত্তর না দিয়ে লিখিত উত্তর দেয়ায় ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো না গেলে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে অনেকেই পড়াশুনা না করে প্রশ্নপত্রের পিছনে ছুটছে আবার কেউ তেমন পড়াশুনা না করে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র পেয়ে ভালো ফল করে ফলে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছে।
গতকাল রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের সামনে গিয়ে অভিভাবদের মধ্যে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়। আসমা নামের এক অভিভাবক বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে আমরা সবাই জানি। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা কাজ করছে। কেউ প্রশ্ন পেয়ে ভালো ফলাফল করবে। আবার কেউ খারাপ করবে তা তো হয় না। তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে তসবিহ হাতে বসে থাকতে দেখা গেল এসএসসি পরীক্ষার্থীর এক অভিভাবককে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্ন ফাঁসের এই প্রবণতা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এক বড় হুমকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। সর্বশেষ চলমান এসএসসি পরীক্ষার শুরু থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে আসছে। প্রথম দুই দিনের প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর রোববার নজিরবিহীনভাবে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এ ঘোষণার পরের দিনও ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া যায় পরীক্ষা শুরুর দুই ঘণ্টা আগে। যা পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এ অবস্থায় প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অভিভাকরা জানান, ওই চার পক্ষের মধ্যেই অপরাধী আছে এবং তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নিলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু সরকার এই চারটি গ্রুপের কাউকে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি। এজন্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, ফেসবুকে কেউ রাজনৈতিক পোস্ট দেয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে ধরে ফেলা হয়। আর কত কত জঙ্গি ধরছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু প্রকাশ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য মিডিয়ার একটি প্রচার করে প্রশ্ন বিক্রি করলেও তাদের ধরার কেউ নেই। যেসব ফেসবুক গ্রুপে প্রশ্ন পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই বিনা খরচে পাওয়া যায়। টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র দেয়া হয় হোয়াটস অ্যাপ, ইমো বা ভাইবারের মতো অনলাইন অ্যাপসগুলোতে। ফেসবুকে দিয়ে এই গ্রুপটি বাজার তৈরি করে। এর ফলে পরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের জন্য আরো নতুন গ্রাহক পাওয়া যায় তবে কেউ কেউ এদের প্রতারণারও শিকার হন তাহলে তাদের কেন ধরতে পারছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি’র সচিব সরওয়ার আলম বলেন, প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আমাদের বড় একটি টিম কাজ করছে। আশা করি তাদের এবার ধরা সম্ভব হবে।

গত ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের তিনটি পরীক্ষার প্রশ্নই ফাঁস হয়েছে। এবার প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে হাজির বাধ্যতামূলক করা হয়। পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে থেকেই দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ, কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্রে আর কাউকে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে না দেয়া, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নেয়া নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু কোন কিছুই কাজে আসেনি। গত কয়েক বছরের মতো এবারও হচ্ছে প্রশ্নফাঁস। প্রথম দু’টি পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর প্রশ্নফাঁস চক্রকে ধরতে পারলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারে চারটি পক্ষ। প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী, ছাপার কাজে যুক্ত, প্রশ্নের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা এবং বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবহন ও বিতরণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। এই চারটি গ্রুপ ছাড়া কারো পক্ষে প্রশ্নফাঁস করা সম্ভব নয়। শিক্ষা সচিব নিজেও সেটি মনে করেন। তিনি বলেন, প্রায় ১০ হাজারের মতো ব্যক্তি এই পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ প্রশ্ন ফাঁস করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চারপক্ষের বাইরে যারা থাকেন তারা মূলত ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের ব্যবসা করেন।

২০১২ সাল থেকে ব্যাপক আকারে প্রশ্নফাঁস শুরু হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই তা অস্বীকার করে আসছে। এই অস্বীকার করার প্রবণতায় ক্রমে এটি মহামারি আকার ধারণ করেছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, প্রশ্নফাঁস পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। কিন্তু কেউ দায় নিচ্ছেন না।

বিটিআরসি’র কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে কখনও শিক্ষা মন্ত্রণালয় অমাদের বিষয়টি জানায়নি। তারা অস্বীকার করেই দায় সেরেছে। এজন্য এই গ্রুপ দেদারসে ফেসবুকে প্রচার করে প্রশ্ন বিক্রি করছে। এবার সরকারের সর্ব্বোচ মহল থেকে আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে যদি পরীক্ষা দেয় ছাত্র-ছাত্রীরা তবে তারা ভবিষ্যতে দেশ গড়ার কারিগর না হয়ে বোঝায় পরিণত হবে। প্রশ্ন ফাঁসকারীদের গ্রেপ্তার অসম্ভব নয় উল্লেখ করে এ শিক্ষাবিদ বলেছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু রটালে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আটক করা হচ্ছে কিন্তু যারা প্রশ্ন ফাঁসকারীদের আটক করা হচ্ছে না। প্রথম আলো, বাংলা ট্রিবিউন, মানবজমিন