খােলা বাজার২৪। বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহতসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সম্ভাব্য যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্রুত মোকাবেলা করতে পায়রা নদীর লেবুখালী তীরে সরকার ঘোষিত ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ এর আওতায় আন্তর্জাতিক মানের সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ৩১তম নতুন `শেখ হাসিনা সেনানিবাস’ এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের উদ্বোধন শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে বসেই বেলা এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত পটুয়াখালী জেলার ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও একটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হচ্ছে-পটুয়াখালীতে ৫০শয্যা বিশিষ্ট ডায়াবেটিক হাসপাতাল, মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী ও বাউফল উপজেলার সাবুপুরা এলাকার ১০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, পটুয়াখালীর সরকারী শিশু পরিবার (বালিকা) এর নবনির্মিত হোস্টেল ভবন, কাজী আবুল কাশেম স্টেডিয়াম, দশমিনা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, কলাপাড়া উপজেলার পশ্চিম চাকামইয়া, পূর্ব ডালবুগঞ্জ, বাউফল উপজেলার হোগলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টার ও বাউফল উপজেলার ধানদি মডেল হাইস্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টার, কলাপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, গলাচিপা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কমপ্লেক্স, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডিজিটাল পাবলিসিটি স্ক্রীন ও শহীদ শেখ কামাল স্মৃতি কমপ্লেক্স (অডিটোরিয়াম)। এছাড়া গলাচিপা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ ও হলরুম নির্মানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
পরবর্তীতে ২ টা ৪৫ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বসেই ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হচ্ছে-বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর একাডেমিক ভবন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল একাডেমিক ভবন, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, বঙ্গবন্ধু হল, শেখ হাসিনা হল ও শেরে বাংলা হল। বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন সরকারি শিশু পরিবার বালিকা (দক্ষিণ) বরিশালের নিবাসীদের নবনির্মিত ডরমিটরী ভবন, বরিশাল সদরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণ শীর্ষক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, বরিশাল বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ প্রকল্প, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, বাবুগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন (বি-টাইপ), মেহেন্দিগঞ্জ থানা কমপ্লেক্স ভবন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, বাকেরগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, গৌরনদী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, উজিরপুর উপজেলার হারতা-বানারীপাড়া বর্ডার রাস্তায় ২৮০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রীজ, বানারীপাড়া উপজেলার চৌমোহনা জিসি-বানারীপাড়া হেড কোয়ার্টার ভায়া বিশারকান্দি, ওমারেরপাড় রাস্তায় নান্দুহার নদীর উপর ২৯০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রীজ, মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া-কালীগঞ্জ ব্রীজ, গৌরনদী উপজেলার ৪নং মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন ও মুলাদী ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন।
জেলা পরিষদের আওতাধীন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতায় বরিশাল সদরের লাকুটিয়ায় অবস্থিত তিন হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণাগার, বান্দ রোড এলাকায় দুই হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আলু বীজ হিমাগার। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন বরিশাল নগরীর রুপাতলী এলাকায় ১৬ এমএলডি শোধন ক্ষমতা সম্পন্ন সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ৩১শয্যা বিশিষ্ট মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন নগরীর কাউনিয়া এলাকার শহীদ আরজু মনি ও রুপাতলী এলাকার শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পৃথক সাততলা দুটি একাডেমিক ভবন, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, হিজলা ডিগ্রী কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, হিজলার সংহতি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া মোজাফ্ফর খান ডিগ্রী কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আওতায় বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম ভবন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় বরিশাল সদরের কড়াপুর ১০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের উদ্বোধন করা হবে।
ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো হচ্ছে-বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন বরিশাল পুলিশ সুপার (এসপি) অফিস নির্মাণ, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স নির্মাণ, নারী কারারক্ষীদের বাসভবন নির্মাণ, বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় নির্মাণ, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতর ভবন, গৌরনদী উপজেলায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট নির্মাণ, গৌরনদীতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণ, মুলাদী থানা ভবন নির্মাণ, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন নার্সিং হোস্টেল নির্মাণ, হিজলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস নির্মান প্রকল্প। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে আওতাধীন গৌরনদীতে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত অডিটোরিয়াম ভবন, উজিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, উজিরপুর উপজেলার সাতলা-চৌমোহনী রাস্তায় কচা নদরীর উপর ৪০৫ মিটার পিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ, বরিশাল সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মেহেন্দীগঞ্জের সায়েস্তাবাদ জিসি হিজলা উপজেলা হেডকোয়ার্টার ভায়া গাজীরহাট, কাজীরহাট জিসি, মিয়ারহাট এবং একতারহাট সড়কে ৪৪০ মিটার পিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ, হিজলার কাউরিয়া বাজার হইতে মেমানিয়া টেকেরহাট ভায়া মৌলভীরহাট রাস্তা উন্নয়নসহ গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করণ প্রকল্প, বরিশাল দিনারেরপুল-লক্ষ্মীপাশা-দুমকী জেলা মহাসড়কের ১৪ তম কিলোমিটারে রাঙ্গামাটি নদীর উপর গোমা সেতু নির্মাণ প্রকল্প। বরিশাল নগরীর রুপাতলী এলাকায় জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স ভবন নির্মান, নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন প্রকল্প, বরিশাল জেলায় আইটি পার্ক স্থাপন প্রকল্প, উজিরপুরে শহীদ স্মরণিকা ডিগ্রী কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন নির্মান, মেহেন্দীগঞ্জ মহিলা কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন নির্মান, বরিশাল সদরে শহীদ সুকান্ত বাবু শিশুপার্ক নির্মাণ, গৌরনদীর মিয়ারচর ও আগৈলঝাড়ার বাহাদুরপুরে দশ শষ্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ, বরিশাল সদর উপজেলার কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন থেকে চরবাড়ীয়া এলাকা রক্ষা প্রকল্প, বরিশাল জেলা সদরের সাথে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা সদরের যোগাযোগ ও ভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য মাসকাটা নদীর উপর ক্রসড্যাম নির্মাণ প্রকল্প, উজিরপুরের সাতলা-বাগধা প্রকল্পের পোল্ডার পুনর্বাসন প্রকল্প, হিজলা উপজেলার মেমানিয়া, হিজলা-গৌরবদী, হরিনাথপুর ও ধুলখোলা ইউনিয়নে সাবমেরিন ক্যাবল ও ৩৫০ কিলোমিটার বিদ্যুত বিতরণ লাইন নির্মাণ করে বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম, বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল এবং ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মান প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেসব দাবি তুলে ধরা হবে। দীর্ঘ ছয় বছর পর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বরিশালে আগমন অনেক গুরুত্ব বহন করছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অকুন্ঠ ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ না চাইতেই ইতোমধ্যে ব্যাপক উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখনও অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তাই এবার প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা ভোলা থেকে সরাসরি বরিশালে গ্যাস সরবরাহের জোরালো দাবি তুলবেন।
বরিশাল-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক মো. মিজানুর রহমান জানান, বরিশালবাসীর অন্যতম স্বপ্ন ছিল পদ্মাসেতু, গ্যাস, রেল ও স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়।
এরমধ্যে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ শিক্ষা কার্যক্রম ইতোমধ্যে চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর চলতি বছরেই খুলছে পদ্মাসেতুর দুয়োর। অন্যদিকে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে ভাঙা হয়ে বরিশাল থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মানে প্রথমিক কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ‘রেল যাবে বরিশাল’ বরিশালবাসীকে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বাকি রইলো গ্যাস।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন। তাই দখিণের উন্নয়নে পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্র বন্দর, রেল লাইন, কলাপাড়া আন্দারমানিক নদীর তীরে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, দশমিনায় এশিয়ার বৃহত্তম বীজবর্ধন খামারসহ অনেক কিছু দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, তার পরেও আমাদের চাওয়ার আছে। জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা বেশ কিছু দাবি তুলে ধরবো। এরমধ্যে প্রথমেই রয়েছে ভোলা থেকে সরাসরি বরিশালে গ্যাস সরবরাহের দাবি।
এছাড়া শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজকে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন, বরিশাল বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিকে উন্নীত, ইপিজেড নির্মাণ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেনারি অনুষদকে স্বতন্ত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ বলেন, বরিশালে শিল্পায়নে গ্যাস সরবরাহ জরুরি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে বরিশালের গ্যাস-টারবাইন চালানো, কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক ফোরলেনে উন্নীত করা, ঢাকা-বরিশাল নৌপথ ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর আওতায় আনা, বিএম কলেজে আলাদা পরীক্ষার হল নির্মাণ ও অর্থনৈতিক জোন দ্রুত নির্মাণ করার দাবি করা হবে।