Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার।

আজ মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি জানান, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি বেলা ১১টার দিকে ওই আদালতে পৌঁছাবেন। খালেদা জিয়া আইনসঙ্গতভাবে বেকসুর খালাস পাবেন বলেও জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।

পুরান ঢাকার বকশী বাজারের আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে অবস্থিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ঠিক করেন আদালত।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান (পলাতক), সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল (কারাগারে), ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ (কারাগারে), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী (পলাতক) ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান (পলাতক)।

অন্যদিকে রায়ে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডের প্রত্যাশা করছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে মামলাটি পরিচালনা করেছি। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের জন্য আমরা ৩২ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করেছি। আসামিপক্ষ মামলার বিভিন্ন বিষয় চ্যালেঞ্জ করে ২৫ বার উচ্চ আদালতে গিয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। তারা চার্জশিট আমলে নেওয়ার বিরুদ্ধে গিয়েছে। চার্জগঠনের বিরুদ্ধে গিয়েছে। পুনঃতদন্তের জন্য গিয়েছে। এভাবে ২৫ বার গিয়েও তারা সফল হয়নি। উচ্চ আদালত সব কিছুই সঠিক বলে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি খালেদা জিয়াসহ ছয়জন আসামির বিরুদ্ধেই দন্ডবিধি ৪০৯ ধারায় ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই দন্ডবিধির ৪০৯ ধারায় সকল আসামির বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন এবং ৫(২) ধারায় খালেদা জিয়া ও ডা. কামাল সিদ্দিকীর সাত বছর কারাদন্ড প্রত্যাশা করছি।’

তবে এ সম্পর্কে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল­াহ মিয়া বলেন, ‘দুদকের অভিযোগ হলো ট্রাস্ট সৃষ্টির পর থেকে। যদি তাই হয় তবে খালেদা জিয়া এবং কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর কোনো ভূমিকাই এখানে নেই। শরফুদ্দিন আহমেদ ট্রাস্টের কাছে জমি বিক্রেতা এবং সালিমুল হক কামাল ব্যাংকে টাকা রেখেছেন মাত্র। তাদের কোনো দায়বন্ধতাই আসে না। আর টাকাগুলোর যেহেতু কোনো অপচয় হয়নি, বরং সুদে-আসলে এখন অনেক গুণ হয়েছে তাই কোনো আসামিরই এখানে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘দুদক অভিযোগ প্রমাণের জন্য জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। তারা আদালতে ঘষা-মাজা ও সৃজনকৃত ডকুমেন্ট দাখিল করেছেন। ওই কারণে আমরা তদন্ত কর্মকর্তাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও আদালতে আবেদন দিয়েছি। তাই আশা করি শুধু ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) নয়, আমি মনে করি সকল আসামিই খালাস পাবেন। আর জাল-জালিয়াতির জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পর্যবেক্ষণ থাকবে।’

উল্লেখ্য, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট ওই কর্মকর্তাই খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

এরপর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ সকল আসামির বিরুদ্ধে ওই আদালতের তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় চার্জগঠন করেন।

এরপর ওই বছরের ৫ মে মামলাটি পুরান ঢাকার সদরঘাটের আদালত থেকে বকশীবাজারস্থ আলিয়া মাদ্রাসার মাঠের অস্থায়ী আদালতে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়ে ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।

একই বছরের ১৯ অক্টোবর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে মামলার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি। আত্মপক্ষ শুনানিতে খালেদা জিয়া নিজেকে নির্দোষ ও খালাস পাওয়ার যোগ্য বলে দাবি করেন।

২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর মামলাটিতে যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে ২৫ জানুয়ারি শেষ হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়।