Sun. May 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: শিক্ষার সব অনিয়ম-দুর্নীতি ধরতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য গঠন করা হয়েছে সমন্বিত মনিটরিং। এই সেলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাখাতের আর্থিক, প্রশাসনিক, নিয়োগ, এমপিও, টিউশন ফি এবং উপবৃত্তিসহ বড় ৩০ ধরনের অনিয়ম ধরা পড়বে। পুরো কাজটি করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং’(এমইডব্লিউ)। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে এক বৈঠকে নতুন এ সেলের অনুমোদন দেয়া হয়। একই দিনে মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং-এর জন্য ৩১টি পদ সৃজন করে নতুন জনবল কাঠামোর অনুমোদন দেয় সচিব কমিটি।
কর্মকর্তারা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে সনাতন পদ্ধতিতে ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক প্রতিবেদন দেয়া হবে।

পর্যায়ক্রমে শিক্ষার সব কার্যক্রমকে একটি ওয়েবসাইডের মাধ্যমে তা মনিটরিং করা হবে। এজন্য সব প্রস্তুতি শেষ। আগামী জুনের মধ্যে সব কার্যক্রম অনলাইনে মনিটরিং করা হবে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অসাধারণ, অতিউত্তম, উত্তম, চলতি মান ও চলতি মানের নিম্নে এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে র‌্যাঙ্কিং করা হবে। নতুন নীতিমালায় সনাতন পদ্ধতি বদলে নতুন ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেশের প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমন্বিত মনিটরিং এ অন্তর্ভুক্ত হবে। এ কর্মসূচির মধ্যে আরো থাকছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষা অফিস পরিদর্শন, শিক্ষার সমতা নিশ্চিতকরণ, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়ন, কর্মপদ্ধতি, কর্মপরিবেশ ও সেবার মানোন্নয়ন, দক্ষতা ও নৈতিকতার উন্নয়ন, তথ্য অধিকার বাস্তবায়ন জোরদার, আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণ। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে এই উইং নতুন ৩১ জন জনবল দেয়া হয়েছে।

এরমধ্যে একজন পরিচালক, দুইজন উপ-পরিচালক, ৪ জন সহকারী পরিচালক, ৪ জন পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এবং নন ক্যাডার প্রথম শ্রেণির চারজন প্রোগ্রামারসহ মোট ১৮টি প্রথম শ্রেণির পদ থাকবে। বাকি ১৩টি পদ বিভিন্ন ক্যাটাগরি পাবে এই উইং। মাউশির সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পর এই উইং কর্মকাণ্ড কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং পরিচালক প্রফেসর সেলিম মিয়া বলেন, শিক্ষাপ্রশাসনে একটি বিপ্লবিক নীতিমালা পাস হলো। এর ফলে আমাদের কাজের পরিধি কয়েকগুণ বেড়ে গেল। নতুন নীতিমালায় দুর্নীতি, অনিয়ম বন্ধসহ শিক্ষার মানন্নোয়নে সব প্রকল্পগুলোতে এক ছাতার নিচে মনিটরিং হবে। এতে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আরো সহজ হবে। সব তথ্য এক জায়গা পাওয়া যাবে। এই নীতিমালা শিক্ষা প্রশাসনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।

এমইডব্লিউ কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার সকল দপ্তর, পরিদপ্তর, উন্নয়ন প্রকল্পসহ শিক্ষা প্রশাসনের সব জায়গায় দুর্নীতি ধরতে নতুন জাল পাতা হবে। নতুন এ নীতিমালা বাস্তবায়নে যাওয়ার পর শিক্ষা প্রশাসনের আর্থিক, প্রশাসনিক ও শিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা অনেক সহজ হবে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও সমন্বয়হীনতা দূর হবে। এছাড়াও অ্যাপসের মাধ্যমে দেশের সব মাল্টিমিডিয়ার ক্লাস রুম মনিটরিং করার জন্য আলাদা একটি প্রকল্প চলমান। প্রধানন্ত্রীর কার্যালয়ে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি সারা দেশে কাজ করছে। দেশের ৯টি অঞ্চল, ৬৪টি জেলা, ৫১২টি থানা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা সুপার ভাইজারগণ স্ব স্ব অধীনস্থ দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান সাধারণত সরজমিনে পরিদর্শনের মাধ্যমে পরিবীক্ষণ কাজ করে থাকে।

কর্মকর্তারা জানান, এই নীতিমালার ওপর একাধিক কর্মশালা হয়েছে। তারপর এটি চূড়ান্ত হয়েছে। এখন থেকে মাউশির আওতাধীন সকল উইং, আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা, উপজেলা, থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, উন্নয়ন প্রকল্প, র্কমসূচি এবং সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম এ উইং-এর আওতায় চলে আসলো। এর ফলে মনিটরিং কার্যক্রম এক জায়গা থেকে বাস্তবায়ন হবে। শিক্ষার মানন্নোয়নে নেয়ার সব প্রকল্প, কর্মসূচি প্রকল্পগুলোতে কঠোর নজরদারিতে আসবে। শিক্ষার সব তথ্য এক জায়গায় পাওয়া যাবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, মনিটরিং জোরদার করতে প্রাথমিকভাবে ম্যানুয়াল পদ্ধতি সমন্বতি ত্রৈমাসিক পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন ও বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হবে। তবে পর্যায়ক্রমে আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা, উপজেলা এবং থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, উন্নয়ন প্রকল্প, কর্মসূচি ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানকে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করা হবে। সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি যথাসম্ভব কম সময়ের মধ্যে উইং এ একটি ডবন ইধংবফ গড়হরঃড়ৎরহম ঝুংঃবস করা হবে এবং ইএমআইএস সেলের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়ার কাজ করা হবে। এ মনিটরিং বাস্তবায়ন করতে সেমিনার, কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সঙ্গে নিয়মিত, দপ্তর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরজমিন, কখনো তাৎক্ষণিক পরিবীক্ষণ করা হবে।

শিক্ষার প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে কী না, না হলে কী কী কারণে হয়নি, বাস্তবায়ন কৌশল সঠিক ছিল কী না এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি, প্রকল্প হাতে নেয়ার প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ মূল্যায়ন প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিবে এই উইং। আর্থিক বরাদ্দ ব্যয় নিশ্চিত করা এবং প্রাক্কলিত ব্যয়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সহায়তা করবে তারা।

এ ব্যাপারে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর মাহাবুবুর রহমান বলেন, এই নীতিমালায় শিক্ষার কাজের মূল্যায়নের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে মাউশি অধিদপ্তরসহ আঞ্চলিক, জেলা এবং উপজেলাসহ সব পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা, চলমান ও শেষ হওয়ার প্রকল্পের মূল্যায়ণ কার্যক্রম নজরদারিতে আসবে। এতে পর্যায়ক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। মানবজমিন