অনুসন্ধানী প্রতিবেদন-১: মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের দোসর দুর্নীতিবাজ ও মাফিয়া অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশের বিরুদ্ধে এবার ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ তার কলেজের আয়া সাগরিকা বেগম মনিকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বারবার ধর্ষণ করেছে। ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার ধলাইচর গ্রামের মধ্যবয়সী এই নারী মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক আয়া সাগরিকা বেগম মনি (৩৫) গত ২৮-১০-২০২৪ইং তারিখে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং -২ ঢাকা মামলা করেন। মামলা নং- ৯৯/২০২৪ ধারা নারী ও শীশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধিত ২০০৩) এর (১)।
আদালতে অভিযোগে বলেন অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ তাঁকে একাধিকবার জোর করে ধর্ষণ করেছেন এবং ধর্ষণের গোপন ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন এবং রাজধানীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়ের সুযোগ নিয়ে জুলাই মাসের ১৭ তারিখেও কলেজের এই আয়াকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভিক্টিম।
২০১২ মৌখিকভাবে মাস্টার রোলে মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজে আয়া হিসাবে যোগদান করেন ধর্ষণের শিকার এই নারী। ২০১৭ সালের ২৭ শে সেপ্টেবর তাঁর চাকুরী স্থায়ীকরণ হয়।
মোস্তফা কামাল খোশনবীশ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথমে প্রধান হিসাবে যোগ দেন ২০১৯ সালে। ২০২১ সালে অধ্যক্ষ হিসাবে মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজে যোগদানের পরেই এই আয়াকে কারণে অকারণে মোস্তফা কামাল খোশনবীশ তাঁর অফিসে ডেকে বিভিন্ন ইঙ্গিতপুর্ণ এবং অশ্লীল কথাবার্তা বলতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুযোগ পেলেই কলেজের কাজের ফাঁকে তার স্ত্রী অসুস্থ থাকার অজুহাতে আয়াকে মোস্তফা কামাল খোশনবীশ তাঁর ঘরের কাজ করাতেন। আয়া সাগরিকা বেগম মনিকে ১০ হাজার টাকা দামের শাড়ি কিনে দেয়ার লোভ দেখায়। ওই সময়ে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে তাঁকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে বলে আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে।
ধর্ষিতা আয়া সাগরিকা বেগম মনি তাঁকে ধর্ষনের কথা সবাইকে বলে দিতে চাইলে মোস্তফা কামাল খোশনবীশ আয়া সাগরিকা বেগম মনিকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাঁর কথা না শুনলে পরিণতি ভয়াবহ হবে হুমকি দিয়ে বলে ‘তুই যদি আমি বলা মাত্রই না আসোস, তাহলে আমার মোবাইলে ধারণকৃত তোর ধর্ষনের খারাপ ভিডিও সবাইকে দেখাই দিব।’
মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের পিওন লিটন অধ্যক্ষ কর্তৃক আয়া সাগরিকা বেগম মনি ধর্ষণের বিষয়টি জেনে ফেলায় মোস্তফা কামাল খোশনবীশের নির্মম ভাবে পিওন লিটন এর উপরে অত্যাচারে করতে থাকে। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের এই দোসর দুর্নীতিবাজ-মাফিয়া মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ স্থানিয় আওয়ামী লীগের এমপি ইলিয়াস মোল্লার সহযোগিতায় কলেজের পিয়ন লিটনকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়। এই ঘটনায় মিরপুরে তোলপাড় শুরু হলে স্থানিয় আওয়ামী লীগের এমপি ইলিয়াস মোল্লা তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং ধর্ষিতা আয়া সাগরিকা বেগম মনিকেই উল্টো কলেজে ডেকে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক চাকুরীচ্যূত করেন। অধ্যক্ষের হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তাঁর চাকুরি রক্ষা হয়নি।
মিথ্যা কথা বলে আয়াকে ডেকে নিয়ে কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারীর সামনে তাঁর কথা রেকর্ড করে কতগুলো কাগজে স্বাক্ষর নেয় অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ ।
পরবর্তীতে ভিক্টিমকে ফোন দিয়ে বলে মোস্তফা কামাল খোশনবীশ তাঁর নতুন বাসায় তাঁর মেয়েকে স্কুলে নিয়ে আসার কাজ এবং অসুস্থ স্ত্রীকে দেখাশোনা করলে আয়াকে তাঁর আগের চাকুরীতে পুনরায় নিয়োগ দিবে। আর তাঁর কথা না শুনলে ধর্ষণের ভিডিও সবার কাছে ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়।
এমতাবস্থায় জুলাই মাসের ১৭ তারিখে দুপুর তিনটায় মোস্তফা কামাল খোশনবীশের স্ত্রী ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমানোর অবস্থায় আয়াকে আবারো জোরপূর্বক ধর্ষণ করে বলে আয়া গত ৩১ শে অক্টোবর অভিযোগ করেছে আদালতে।
মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের পিওন লিটন এর ভাই রহিম গত ১৬-০৮-২০২৪ইং তারিখে বিজ্ঞ সি, এম, এম এর আদালতে মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশকে ১ নং আসামী করে একটি পিটিশন মামলা করেন।
আদালতে অভিযোগে পিওন লিটন এর ভাই রহিম বলেন আয়া সাগরিকা বেগম মনিকে মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের পিওন লিটন অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ নিয়মিত আয়া সাগরিকা বেগম মনিকে জোর করে ধর্ষণ করতো এই ঘটনা আমার ভাই লিটন দেখে ফেললে প্রথমে আয়া সাগরিকা বেগম মনিকে দিয়ে আমার ভাইকে মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকদের সামনে আয়া সাগরিকা বেগম মনিকে দিয়ে জুতাপিটা করে।পরে মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ জানতে পারে আয়া সাগরিকা বেগম মনিকে যে তিনি জোর করে ধর্ষণ করতো তার ভিডিও আমার ভাই লিটনের কাছে আছে। এই খবর পাওয়ার পরে মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ ও স্থানিয় আওয়ামী লীগের এমপি ইলিয়াস মোল্লার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ০৮ জুলাই ২০২২ইং তারিখে আমার ভাই লিটনকে হত্যা করে।
এবিষয়ে মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার বিরুদ্ধে আনা এ সব অভিযোগ মিথ্যা।
(মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ’র আরো অনেক নারী কেলেংকারী, কোচিং এর নামে বাণিজ্য, বই বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য জানতে চোখ রাখুন আমাদের ধারাবাহিক আগামী পর্বে….)