Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: রেলের অন্যতম পুরনো লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইন রি-মডেলিং প্রকল্পটি একনেকে পাস হয় ২০১১ সালে। কিন্তু অনুমোদনের সাত বছরেও মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেললাইনটির সংস্কারকাজ শেষ করতে পারেনি রেলওয়ে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা ও রেলের তদারকি ব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে চাঁদপুর অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এ লাইন পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের ফিনিশিং কাজ প্রায় এক বছর ধরে আটকে আছে। এতে খুবই ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে ওই রুটের গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলোকে।

প্রায় একই সময়ে একনেকে অনুমোদন পাওয়া দেশের পুরনো রেলপথ দোহাজারী ও নাজিরহাট রেললাইনের সংস্কারকাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। প্রকল্পের একটি অংশের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করতে পারেনি রেলওয়ে। চট্টগ্রামের ষোলশহর থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত রেলপথের সংস্কারকাজ শেষ হলেও জিআইবিআর (প্রকল্পের কাজ পরীক্ষার পর অনুমোদন) সম্পন্ন না হওয়ায় সর্বোচ্চ গতিতে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। একই প্রকল্পের অধীনে ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার রেলপথের সংস্কারকাজে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।

রেলের এসব রুটে ট্রেন পরিচালনাকারী একাধিক লোকোমাস্টার জানিয়েছেন, প্রায় আট বছর আগে শুরু হলেও ট্র্যাক সংস্কারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় খুবই ধীরগতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ট্রেন বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েছে। নাজিরহাট পর্যন্ত রেলপথে পাথর ফেলা হলেও এখন পর্যন্ত স্টোন ট্যাম্পারিং শেষ হয়নি। ফলে ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে যে গতিবেগ দেয়া হয়েছে, সে বেগেও ট্রেন চালাতে পারছেন না লোকোমাস্টাররা। একই প্রকল্পের অধীনে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথটিতে প্রায় ৯০ শতাংশ কংক্রিটের স্লিপার বসানো হলেও পাথর বসানো হয়নি। ফলে মাত্র ৪৭ কিলোমিটার রেলপথে একটি ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগছে। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে প্রকল্পের অর্ধেক অংশের কাজ এখনো বাকি থাকায় প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

রেলওয়ের সর্বশেষ প্রকাশিত ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে (ডব্লিউটিটি), চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ষোলশহর পর্যন্ত রেলপথের ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি উল্লেখ করা হয়েছে ৫০ কিলোমিটার। কিন্তু ষোলশহর থেকে কাঞ্চননগর পর্যন্ত গতিবেগ ৩০ কিলোমিটার এবং কাঞ্চননগর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত গতিবেগ মাত্র ২০ কিলোমিটার। এছাড়া ষোলশহর থেকে ফতেয়াবাদ পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতিবেগ ৪৫ কিলোমিটার এবং ফতেয়াবাদ থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার গতিবেগ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে লাকসাম থেকে চিতশী স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনের গতিবেগ ৩০ কিলোমিটার এবং চিতশী থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত গতিবেগ ৫০ কিলোমিটার। প্রকল্পগুলো চলমান থাকায় নির্ধারিত গতিবেগেও ট্রেন চালাতে পারছেন না চালকরা।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) ও দোহাজারী-নাজিরহাট ট্র্যাক সংস্কার প্রকল্পের পরিচালক গোলাম মোস্তফা বণিক বার্তাকে বলেন, নাজিরহাট পর্যন্ত ট্র্যাকের প্রায় শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। জুনের মধ্যেই ট্র্যাকটি সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলের জন্য চালু করা সম্ভব হবে। তবে দোহাজারী থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের নতুন প্রকল্প শুরু হওয়ায় ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের একটি নতুন প্রকল্প নেয়া হবে। এজন্য দোহাজারী পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি কম হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইন রি-মডেলিং প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ১০৫ কোটি টাকায় প্রকল্পের রেললাইন স্থাপনের কাজ পায় ভারতের কালিন্দি ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় মেসার্স আজমাইন ইন্টারন্যাশনালকে সাব-কন্ট্রাক্টের দায়িত্ব দেয়। ২০১১ সালের জুন থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ২০১২ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজ শুরু করতে বিলম্ব হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় তিন বছরেও প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। সময়ক্ষেপণ হওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে ১৬৮ কোটি টাকায় উন্নীত করে রেলওয়ে। পাশাপাশি প্রকল্পের বাস্তবায়ন সময় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে ১১টি। এর মধ্যে ‘বি’ শ্রেণীর স্টেশন পাঁচটি। বাকি ছয়টি ‘ডি’ শ্রেণীর । প্রকল্পের অধীনে এসব স্টেশন রি-মডেলিং ও মেরামত করা হবে। বর্তমানে লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টায় চাঁদপুর যাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে এই রুটে রেলের গতি ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গতিসীমা ৭২-৭৫ কিলোমিটারে উন্নীত হবে। আন্তঃনগর সার্ভিস মেঘনা ও সাগরিকা এক্সপ্রেসসহ এই রুটে সর্বমোট সাতটি ট্রেন চলাচল করে।

এদিকে ষোলশহর থেকে দোহাজারী ও নাজিরহাট পর্যন্ত রেলপথ সংস্কারের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর ২০৩ দশমিক ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি পাস হয়। প্রকল্পের অধীন চট্টগ্রাম-দোহাজারী ৪৫ কিলোমিটার রুটে ১৬টি স্টেশন, প্লাটফর্ম নির্মাণ এবং ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট ২২ কিলোমিটার রুটে চারটি স্টেশন, প্লাটফর্ম ও রেলপথ নির্মাণ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের অধীনে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৫ দশমিক ৪০ কিলোমিটার এবং ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট পর্যন্ত ২২ দশমিক ২০ কিলোমিটার রেলপথ পুনঃস্থাপনের কথা রয়েছে। ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ধীরগতির কারণে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ২৩১ কোটি ৩৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা করা হয়। প্রথম দফার বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হলে ব্যয়ও বাড়বে বলে জানিয়েছেন রেলওয়েসংশ্লিষ্টরা।

লাকসাম-চাঁদপুর লাইন প্রকল্পের পরিচালক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথের কাজ প্রায় ৯২ শতাংশ শেষ হয়েছে। ফিনিশিংসহ সিগন্যালিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি, চলতি অর্থবছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সূত্র : বণিক বার্তা