Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কায় নিবন্ধিত পুরনো ৪০ রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম তদারকি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তদারকি করতে গিয়ে উটকো ঝামেলায় না পড়তে হয়Ñএ শঙ্কায় কমিশন উল্টোপথে চলা শুরু করেছে।

কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে এখন কমিশন বলছে, নিবন্ধনের শর্ত পালন করছে কি না কিংবা না করলে তাদের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলে নির্বাচনের আগমুহূর্তে সব কিছু এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। দল এবং ইসিতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিতে; বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় তাদের এই সিদ্ধান্ত।

অথচ দলগুলোর হালনাগাদ তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়ার আগে কমিশন থেকে শর্ত প্রতিপালন না করা দলের নিবন্ধন বাতিলের হুশিয়ারি দেওয়া হয়। হুমকি-ধমকির মধ্যে সীমাবদ্ধ কমিশন এখন পুরনো দলগুলোর বিষয়ে নমনীয়তা দেখিয়ে নতুন ৭৬ দলের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। শিগগিরই নতুন আবেদন করা দলগুলোর তথ্য খতিয়ে দেখতে বৈঠকে বসছে অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি।

পুরনো দলের মাঠপর্যায়ের অফিস পরিদর্শনের অগ্রগতি কী জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘পুরনো এবং নতুন দলের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কমিশনের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত ওই কমিটি পুরনো দলের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তাদের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী কমিশন সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর নতুন দলের বিষয়টিও ওই কমিটি তথ্য যাচাই-বাছাই করে আমাদেরকে প্রতিবেদন দেবেন।’

কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘পুরনো দলের বিষয়ে কোনো কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এমনকি আগামী নির্বাচনের আগে নিবন্ধনের শর্ত ঘাটতি থাকার কারণে ওই দলের নিবন্ধন বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া কমিশনের জন্য সমীচীন হবে না।’

তবে তিনি বলেন, ‘নতুন ৭৬ দলের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য আমাকে কমিটির আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির একটি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।’

ইসির কর্মকর্তারা বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দলের নিবন্ধন দেওয়ার বাইরে পুরনো দলগুলোর নিবন্ধনের শর্তপালন করে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে দলের হালনাগাদ তথ্য চেয়ে পত্র পাঠায়। প্রথমে ১৫ কার্যদিবস সময়ে ৪০ দলের মধ্যে ২৮টি যথাসময়ে তথ্য দেয়। জমা না দেওয়া ১২টি দলের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না ইসির এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরো দুই দল তথ্য জমা দেয়। বাকি ১০ দলকে ৩০ কার্যদিবস সময় দিলে সাতটি দল জমা দেয়। এ সময়ের মধ্যে সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনÑএ দলগুলো ইসিকে কোনো তথ্য দেয়নি।

এর আগে বিদায়ী রকিব কমিশন ৪০ নিবন্ধিত দলের তথ্য চেয়ে কমিশনে চিঠি দিলেও তা আমলে নেয়নি দলগুলো। ইসির পরিসংখ্যান বলছে, ইসির মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা ব্যর্থ হয়। বলা যায়, শুধু সাংবিধানিক সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম হুমকি-ধমকির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। কমিশনের এই দুর্বলতার সুযোগে দলগুলো দিনে দিনে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে। কারণ ৪০ দলের মধ্যে দুই দফা সময় দিয়েও সব দল তথ্য দেয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, পুরনো দলের অধিকাংশই তথ্য দিলেও তাদের মাঠ অফিস, দলীয় কার্যক্রম এবং নিবন্ধনের সব শর্ত পালন করছে কি না, সে বিষয়ে কমিশনে নথি উত্থাপনেও সংশ্লিষ্ট শাখা ভয় পাচ্ছে। কারণ কমিশনের নির্দেশনা ছাড়া নথি উত্থাপনের কারণে কমিশনের নীতিনির্ধারকদের বিরাগভাজন কিংবা রোষানলে না পড়েন ওই ভয়ে রয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে নিবন্ধন শাখার এক কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিষয়টি নাকচ করে সব ধরনের মন্তব্য করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন তিনি।

এদিকে পুরনো দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি বাদে অধিকাংশ দলের দেওয়া তথ্যের মধ্যে নানা ত্রুটি দেখা গেছে। প্রত্যেকে দায়সারাভাবে প্রতিবেদন দিয়েছে। এমনিই একটি দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দলে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বলেছে, তার দলের পক্ষে নারী সদস্য পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য দলগুলোর চিত্র প্রায় একই।

এত ত্রুটির পরও কমিশন তাদের প্রাপ্তি অনেক বলে দাবি করেছেন। নিবন্ধন শাখার অন্য একজন বলেন, দলগুলো বার্ষিক অডিট রিপোর্ট জমা দিচ্ছে এবং এবার হালনাগাদ তথ্য চাইলে জমা দিয়েছে। তাই দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা চলছে, তা ধরে নেওয়া যায়। ফলে মাঠপর্যায়ে অফিস কিংবা কার্যক্রম চলছে কি না, তা নতুন করে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন নেই।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালুর পর এ পর্যন্ত ৪২টি দল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। আর আদালতের আদেশে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ হয়।

নিবন্ধন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দলকে নিবন্ধিত করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সাবেক কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন। তাদের সময়ে ৪৩টি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে ৪১ দলই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদের ‘যোগ্যতার’ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যালয় ও কমিটি থাকার তথ্য-প্রমাণসাপেক্ষে দুটি দলকে নিবন্ধন দেয় ইসি। এগুলো হলো-বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট। সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ