খােলা বাজার২৪। শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের পাওনা টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগ প্রায় নৈমিত্তিক ঘটনা। চলতি প্রিমিয়ার লিগে ‘প্লেয়ার বাই চয়েজ’ পন্থায় পারিশ্রমিকের এ সংকট কাটবে বলে মনে করছে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস (সিসিডিএম)। তবে সংকট দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের ওপর ট্যাক্স কেটে রাখা হলেও তার কোনো প্রমাণপত্র দেয়া হচ্ছে না।
সিসিডিএম সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ক্লাব আইকন ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ১২ শতাংশ ও অন্যান্য গ্রেডের ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে ট্যাক্স কেটে রাখছে। কিন্তু ট্যাক্সের বিপরীতে কোনো রসিদ বা প্রমাণপত্র দেয়া হয়নি।
বণিক বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্লাবগুলো ক্রিকেটারদের কাছ থেকে তাদের পারিশ্রমিকের ৫০ শতাংশ (প্রথম কিস্তি) টাকার ১০-১২ শতাংশ ট্যাক্স হিসেবে কেটে রেখেছে। কিন্তু এ-সংক্রান্ত কোনো প্রমাণপত্র দেয়নি।
এ ব্যাপারে সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ বলেন, ‘এ ট্যাক্স অবশ্যই সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষ যদি এ টাকা নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমাদানের নামে কোনো জালিয়াতি করে, তবে আমরা অবশ্যই বিষয়টি দেখব।’
এ বিষয়ে টুর্নামেন্ট কমিটির অর্থ বিভাগে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের পিএস তৌহিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের কাছে বিভিন্ন ক্লাব কিছু ক্রিকেটারের পারিশ্রমিক প্রদানের প্রমাণস্বরূপ চেক দিয়েছিল। আমরা সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারদের ওই টাকা হস্তান্তর করেছি।’ ট্যাক্সের টাকা বিষয়ে তার ভাষ্য, ‘লিগ শেষে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে কেটে রাখা ট্যাক্সের টাকা কর অফিসে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। এ জমার বিষয়ে যদি কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয়, তা বোর্ড খতিয়ে দেখবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্রিকেটার বলেন, সিসিডিএম ও ক্লাব কর্তৃপক্ষ ট্যাক্সের হিসাবপত্র তাদের দেয়নি। ট্যাক্সের টাকা শেষ পর্যন্ত রাজস্ব অফিসে জমা পড়বে কিনা, এ নিয়েও নিশ্চিত নন ক্রিকেটাররা। ট্যাক্সের টাকার বিষয়ে স্বচ্ছতা চান তারা।
এদিকে ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট লিগের ২০১৭-১৮ মৌসুমে প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে ১২ ক্লাবে নিবন্ধন করা ক্রিকেটারের সংখ্যা ২২৭। দলবদলে ক্লাবগুলোর মোট খরচ ২০ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যেখানে ক্লাব কর্তৃপক্ষ ক্রিকেটারদের কাছ থেকে কর বাবদ ২ কোটি ৬১ লাখ ৫ হাজার টাকা আদায় করেছে।
লিগে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা খরচ করে শীর্ষে আবাহনী। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স খরচ করেছে ২ কোটি ৫০ হাজার টাকা। ক্রিকেটারদের কর বাবদ তারা কেটে রেখেছে ২০ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের খরচ ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। কর বাবদ কাটা হয়েছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আবাহনী ট্যাক্স হিসেবে কেটেছে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের খরচ ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর তাদের কর হিসেবে কাটা হয়েছে ২০ লাখ ২১ হাজার টাকা।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের খরচ ১ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কর বাবদ কাটা হয়েছে ১৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের খরচ ১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কর হিসাবে রাখা হয় ১৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের খরচ ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ক্রিকেটারদের কাছ থেকে কর কাটা হয়েছে ১৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। ব্রাদার্স ইউনিয়নের খরচ ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কর উত্তোলন ১৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির খরচ ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তাদেরও কর উত্তোলন ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা। নবাগত শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের খরচ ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। কর উত্তোলন ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের খেলোয়াড় কেনার খরচ ১ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ক্রিকেটারদের কাছ থেকে কর আদায় করা হয়েছে ১৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সূত্র : বণিক বার্তা