খােলা বাজার২৪। রবিবার, ১৮ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: আগামী জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুবিধা পেতে পারে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলে যে একেবারেই বিরোধ বা কোন্দল নেই, তা নয়। তবে তা বিএনপির মতো এত তীব্র না। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দলের হাইকমান্ড শেষ পর্যন্ত যাকে মনোনীত করবে অন্য নেতারা তার পক্ষে কাজ করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কোন্দল বহু পুরোনো। আগামী নির্বাচনে এর পূর্ণ সুবিধা পাবে ক্ষমতাসীন দলটি। নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় ইতিমধ্যে নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
ডেমরা থানা, যাত্রাবাড়ী থানার ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড, মাতুয়াইল ইউনিয়ন, সারুলিয়া ও দনিয়া ইউনিয়ন এবং কদমতলী থানার একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসন।
এই আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন— বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা, তার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না, ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন— সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন, নবীউল্লাহ নবী ও অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া।
জানা গেছে, তিনবারের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার পরিবার আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত পরিবার হিসাবে পরিচিত। সে হিসাবে আবারও তার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তার কর্মী-সমর্থকরা। হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। তিনি বলেন, আমার বাবা ৬০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। এলাকায় আমাদের নামে কোনো ধরনের বদনাম নেই, সন্ত্রাস কিংবা মাদকের সঙ্গেও যুক্ত নই। সুতরাং কেন্দ্র থেকে আমরা মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাবা নির্বাচন করতে না পারলে বাবার ইমেজ এবং তৃণমূলের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে কেন্দ্র আমাকে মনোনীত করবে বলে প্রত্যাশা করছি।
তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে নিশ্চয়ই এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না যে জমি দখল, মাদক এবং সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে শতভাগ চেষ্টা চালাব।
আওয়ামী লীগের হারুনুর রশীদ মুন্নার সমর্থকরা বলছেন, দলের প্রতি আনুগত্য ও নিষ্ঠার কারণে নিশ্চয়ই দল তাকে মূল্যায়ন করবে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবার জন্য তিনি এলাকায় নিয়মিত সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
হারুনুর রশিদ মুন্না বলেন, আগের নির্বাচনের সময় সভানেত্রী প্রথম আমাকেই নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন। পরে জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমি নির্বাচন করিনি, বর্তমান এমপির পক্ষে কাজ করেছি। দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তবে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষেই কাজ করব।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাংগঠনিকভাবে হারুনুর রশিদ মুন্নার দিকে জনবল বেশি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাজও করে যাচ্ছেন। বর্তমান এমপির পক্ষেও জনবল রয়েছে। তবে অসুস্থতার কারণে তিনি এলাকার কাজে বেশি অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।
ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুও ঢাকা-৫ আসনে নির্বাচন করতে চান। তবে এলাকার নেতাকর্মীরা বলছেন, মনোনয়ন দৌড়ে এই দুজন পিছিয়ে থাকবেন।
এদিকে, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নবীউল্লাহ নবী কারাগারে রয়েছেন। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন মামলা-মোকদ্দমার কারণে প্রকাশ্যে তেমন একটা আসছেন না। এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এলাকায় ব্যাপক চাপের মধ্যে থাকলেও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ মোটেও কমেনি। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের বিরোধের জেরে কমিশনার পদে দাঁড়িয়েও হেরেছেন নবীউল্লাহ নবী। এরপর গত কয়েক বছরে তাদের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে কোনো ঐক্য দেখা যায়নি। এই বিরোধের সুবিধাটাই আগামী নির্বাচনে পাবে আওয়ামী লীগ।
স্থানীয়রা বলছেন, নবীউল্লাহ নবী গেল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশনার হিসেবেই পাস করতে পারেননি। এ অবস্থায় বিএনপি তাকে দলীয় মনোনয়ন দেবে কিনা সেটি একটি প্রশ্ন। নবীর তুলনায় সালাউদ্দিনের অবস্থান কিছুটা ভালো। তবে তিনিও দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সাধারণ নেতাকর্মীদের পাশে নেই। তাছাড়া সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তার ব্যাপারেও এলাকায় নানা সমালোচনা ছিল।
এ অবস্থায় বিএনপি তাকে মনোনয়ন দিলেও নবীর সমর্থকরা যে কমিশনার পদে হারের বদলা নিবেন— এ ব্যাপারে প্রায় সবাই একই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন। এদিকে এই দুই নেতার বিরোধের সুযোগে শিক্ষক নেতা সেলিম ভুঁইয়া বিএনপির মনোনয়ন পাবার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান এলাকাবাসী। সূত্র : ইত্তেফাক