খােলা বাজার২৪। সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: প্যারামেডিক্যাল শব্দের অর্থ চিকিৎসা সহায়তা। এই কোর্স সম্পন্ন করে চিকিৎসকের সহায়তাকারীর যোগ্যতা অর্জন করা যায়। এর বেশি কিছু না। কিন্তু এই কোর্স করে এক ব্যক্তি প্রাইভেট হাসপাতাল খুলে বসেছেন। অস্ত্রোপচারও করছেন।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনেই অনুমোদন ছাড়া চলছে রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল হাসপাতালটি। স্বাস্থ্য বিভাগ ও কয়েকজন সরকারি চিকিৎসককে ম্যানেজ করে তরিকুল ইসলাম নামের এক প্যারামেডিক দাপটের সঙ্গে চালাচ্ছেন এই হাসপাতাল। একই প্রতিষ্ঠানে ‘প্যারামেডিক্যাল ও নার্সিং ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’ নামের আরো একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে গোপনে সেখান প্রশিক্ষণ কোর্স করাচ্ছেন। অথচ শুধু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। একটির অনুমোদন নিয়ে তিনি একই ভবনে চালাচ্ছেন তিনটি প্রতিষ্ঠান। খবর কালের কণ্ঠ’র।
করিতকর্মা এই তরিকুল ইসলাম গাংনী উপজেলার মাইমারি গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে। তিনি ঢাকার দ্য মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল থেকে ২০১২ সালে ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) নামের একটি তিন বছরের কোর্স করেন। মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০-এ বলা হয়েছে, এ ধরনের কোর্স করে সাধারণত চিকিৎসকদের সহকারী হিসেবে কাজ করতে পারবেন। তাঁরা নির্ধারিত প্রাথমিক কিছু রোগের চিকিৎসা ছাড়া কোনো জটিল রোগের চিকিৎসা করতে পারবেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর মেয়াদি প্যারামেডিক্যাল কোর্স সম্পন্ন করে ভিজিটিং কার্ডে ডা. তারিকুল ইসলাম লিখে চিকিৎসক হিসেবে জাহির করছেন। ভিজিটিং কার্ডে তিনি ‘রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ ও ‘প্যারামেডিক্যাল অ্যান্ড নার্সিং ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং পরিচালক উল্লেখ করেন। বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসাও দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তরিকুল তাঁর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেন। নাকের পলিপাসের মতো জটিল রোগের চিকিৎসা করেন। বিষাক্ত এক ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করে দ্রুত পলিপাসকে পুড়িয়ে রোগ সারিয়ে তোলেন। এ জন্য তিন দফায় ছয় হাজার টাকা নেন। এমন চিকিৎসায় রোগীরা ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, তাঁর নাকের পলিপাস চিকিৎসা করানো হয়েছে। তরিকুল নাকের ভেতর তিন দিন তিনটি ইনজেকশন দিয়েছেন।
গত ১৮ জানুয়ারি তাঁর প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, একটি তিনতলা ভবনের নিচতলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যারামেডিক্যাল সেন্টার এবং দ্বিতীয় তলায় প্রাইভেট হাসপাতাল স্থাপন করেছেন। নিচতলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি কক্ষে তিনি চিকিৎসা করেন। এ সময় তিনি প্যারামেডিক্যাল ও নার্সিং ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশে তিন মাসের কোর্স করান বলে স্বীকার করেন। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুমোদনের কাগজ তিনি দেখাতে পারেননি। ওই দিনই বিকেলে অনুমোদন না পাওয়া সত্ত্বেও রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। এই তথ্য গোপন রেখে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দোয়া মাহফিল হয়েছে।’
হাসপাতালের বাইরে সাইনবোর্ডে বিভিন্ন চিকিৎসকের নাম লেখা রয়েছে রোগীদের আকৃষ্ট করার জন্য। চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. এম এ সালাম, ডা. নুরুন্নাহার, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. রিচার্ড সরেন, পিজিটি সার্জারি ডা, শফিকুল ইসলাম, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এম কে রেজা এবং চিকিৎসা কর্মকর্তা বি ডি দাস।
প্রতিষ্ঠানটি শুধু ডায়ানস্টিক সেন্টারের নামে স্থানীয় পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স ও পরিবেশের ছাড়পত্র পেয়েছে। যদিও পৌরসভা পরিবেশের ছাড়পত্র দিতে পারে না। এ ছাড়া বাকি দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন ট্রেড লাইসেন্স নেই।
এই প্রাইভেট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎকের দায়িত্বে আছেন চিকিৎসক রিচার্ড সরেন। তিনি মুজিবনগর উপজেলার কুদরত ই খুদা ক্লিনিকের আবাসিক কর্মকর্তা। কুদরতি খোদা ক্লিনিকের মালিক কামরুল হাসান চান্দু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রিচার্ড সরেন বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে রবিউল ইসলাম মেডিক্যাল হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তার দায়িত্বের পাশাপাশি অন কলে বিভিন্ন ক্লিনিকে কাজ করছি।’ তিনি স্বীকার করেন, একসঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠানে আবাসিক কর্মকর্তা হিসেবে থাকা যায় না বলে প্রয়োজনমাফিক দায়িত্ব পালন করছেন।
কালের কণ্ঠ’র তথ্যমতে প্রতিষ্ঠানটিতে অ্যানেসথেসিয়ার দায়িত্ব পালনকারী গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এম কে রেজা স্বীকার করেন, প্রতিষ্ঠানটি এখনো অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। সিভিল সার্জন প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে অডিট (নীরিক্ষা) করে গেছেন।
মেহেরপুরের সিভিল সার্জন জি কে এম সামসুজ্জামান বলেন, ‘অডিট করেছি কি না, মনে নেই। তার পরও অডিট করলেই লাইসেন্স পাবে, এমন কোনো কথা নেই। প্রতিষ্ঠান সরকারি অনুমোদন না নিয়ে চালু করা যাবে না।’