Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: একুশে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের জনগণের জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন। আমাদের জাতীয় জীবনের সকল চেতনার উৎস হচ্ছে এই একুশে ফেব্রুয়ারী। মায়ের মুখের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার দিন এটি। এর পিছনে রয়েছে এক মর্মন্তুদ ইতিহাস। পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যবহিত পূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপচার্য ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। ১১ শ্রাবণ ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ পূর্ববঙ্গ থেকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন। আর তখন থেকেই ভাষা আন্দোলনের সুত্রপাত হয়। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ-ভাগ হয়। আমরা পূর্ব- পাকিস্তান নামে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে থাকি। সেই পাকিস্তানের মোট জনগণের প্রায় ৫৬% লোকের মুখের ভাষা ছিল বাংলা আর মাত্র ০৪% লোকের মুখের ভাষা ছিল উর্দু। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান সুষ্টির পর থেকেই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার হীন চক্রান্ত চলতে থাকে। ও দিকে পূর্ব পাকিস্তানও ধীরে ধীরে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করতে থাকে। ১৯৪৭ সালে ০১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অধ্যাপক কর্তৃক গঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠন “তমদ্দুন মজলিশ” প্রথম প্রতিবাদ করে। এতে পশ্চিম পাকিস্তান না থামিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে তাদের শাসন-শোষণ ও ভাষা সংত্রান্ত সিদ্ধান্ত চালিয়ে যেতে থাকে। তারপরও রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে গঠিত হয় “স্টুডেন্ট’স অ্যাকশন কমিটি”। এভাবেই তৎকালীন সময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে এদেশের জনগণ সোচ্চার ছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তে অটল ছিল। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও তদানিন্তন পাকিস্তানের প্রথম গর্ভনর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভায় ঘোষণা দেন b "Urdu only, and Urdu shall be the state language of pakisthan." তার এ বক্তব্যের সাথে সাথে ময়দানেই এর প্রতিবাদ হয়। এর তিনদিন পর ২৪ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে “স্টুডেন্ট’স রোল ইন নেশন বিল্ডিং” শিরোনামে একটি ভাষণ দেন এবং সেখানেও তিনি একই কথা অথার্ৎ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলেন। আর তখন বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও জিন্নাহ এতে কর্ণপাত করেননি। কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিকগণ তাদের লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে থাকে এবং পরবর্তীকালে গোটা দেশবাসী এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। ফলে ছাত্রসমাজের মনোবল আরো বেড়ে যায় এবং তারা দিগুন উৎসাহে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সম্মুখে এগিয়ে যায়। ১৯৫১ সালে "The Dhaka University State Language Movement Committee" গঠিত হয় এবং রাষ্ট্রভাষা রাংলার দাবি জানাতে থাকে। ১৯৫০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এবং ১৯৫২ সালে ২৬ জানুয়ারী পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পল্টন ময়দানের সমাবেশে ঘোষণা করেন-কেবলমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। সাথে সাথে সমাবেশ স্থলেই ছাত্রসমাজ তুমুল উত্তেজনায় ফেটে পড়ে। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ ২৮ জানুয়ারী বিক্ষোভ করে এবং ৩০ জানুয়ারী সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়। ৩১ জানুয়ারী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের নিয়ে “সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ” গঠিত হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারী সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ ধর্মঘট আহবান করে। এর পরিপেক্ষিতে পাকিস্থান সরকার ২১ ফেব্রুয়ারীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু দেখা যায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর সেই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের গেটের পাশে সমাবেশ স্থলে ছাত্র-ছাত্রীরা জমায়েত হয়-এতে হাজার হাজার জনতাও স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নেয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ও মিছিল নিয়ে পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের অর্ন্তগত) দিকে যাবার উদ্যোগ নেয়। এ সময় পুলিশ পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে  লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে ঘটনাস্থলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মার্স্টাস এর ছাত্র আবুল বরকতসহ রফিক উদ্দিন, আব্দুর জব্বার নামে তিন তরুণ শহীদ হন এবং অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হন। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আব্দুস সালাম হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া শফিক, কিশোর অহিউল্লাহও শহীদ হন। এরপর বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারী সেইসব শহীদ ভাইদের স্মরণে ১৯৫৩ সালে শহীদ মিনার স্থাপন করে বি-ন¤্র শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো হয়।

  

আর ২১ ফেব্রুয়ারীর এই চেতনার ফলেই ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট বিজয় লাভ করে। ফলে যুক্তফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে ১৯৫৪ সালে ০৭ মে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৫ সালে ০৩ রা ডিসেম্বর  বাংলা একাডেমী আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৫৬ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান জাতীয় সংসদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান পাশ করে এবং ০৩ মার্চ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলা কার্যকর হয়।

১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে  “তমদ্দুন মজলিস” এর মাধ্যমে মায়ের ভাষার কথা বলার যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা অর্জিত হয়ে আজ ‘আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারী বিশ্বের ১৮৮টি দেশে পালিত হয়। মায়ের মুখের ভাষার সতীত্ত্ব রক্ষায় বাংলার নির্মম-মৃত্যু-ভয় নির্লিপ্ত দুর্জয় সন্তানেরা নিজ বুকের রক্ত পিচ ঢালা কালো রাস্তাকে রঞ্জিত করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা সারা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এই ২১ ফেব্রুয়ারী বা ভাষা আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্দমনীয় সংকল্পের গভীরে প্রোথিত শেকড়ে রস সঞ্চার করেছে এবং দেশকে তার কাঙ্খিত গন্তব্যে নিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশ কি আজ সেই কাঙ্খিত গন্তব্যে আছে। বুদ্ধিদীপ্ত উদীয়মান ছাত্রসমাজসহ আপামর জনগণ দেশে চলমান আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিকসহ সর্বময় অধিকারের বিষয় নিয়ে আজ একটু ভাবুন তো।

ঘরে বা ঘরের বাহিরে ধনী-গরিব, শিল্পী-সাহিত্যিক, লেখক-গবেষক, বণিক-মালিক, ছোট-বড়, ছেলে বা মেয়ে, শিশু বা মায়ের গর্ভের নবজাতক, বাবা-ভাই, মা-বোন কেউ কি আজ নিরাপদ বোধ করে ? স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া মেয়েদেরকেও হতে হয় পাশবিক নির্যাতন, ধর্ষণের স্বীকার। গামেন্ট’স নারী শ্রমিক সারাদিনে মেহনত শেষে সন্ধ্যা বা রাতে যখন পায়ে হেটে ঘরে ফেরে সে সময়ে তাকে হতে হয় ধর্ষণের স্বীকার। রাতের বেলা ফাঁকা রাস্তায় খেটে খাওয়া দিনমজুর রিক্সা চালককেও গুলি খেয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়। মানুষের নিরাপত্তার ভরসাস্থল তার নিজ বাসস্থান। সেই নিজ ঘরেও দিন-দুপুরে হত্যার শিকার হতে হয়। শুধু ঘরে নয়, একটি শিশু জন্মের পূর্বে সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত নিয়মানুসারে পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল, নির্যাতন, ঘাত-প্রতিঘাতের বৈপরিত্যে সবচেয়ে আপন নির্ভরস্থল মায়ের উদর-সেখানেও তাকে গুলি খেয়ে আহত হতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভূমিষ্ট হয়ে চোখ খোলার আগেই শৈল্য থেরাপি নিতে হয়। এভাবেই চলছে যাপিত জীবন। চলমান নিরাপত্তাহীনতার মাঝে অতিবাহিত জীবন ব্যবস্থায় কিছু কিছু সঞ্চয় দিনের পর দিন মানুষ সঞ্চয়স্থল ব্যাংকে রাখে। সেই ব্যাংক থেকেও রাঘব বোয়ালরা যোগ-সাজসে লোপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। আর দ্বায়িত্ব প্রাপ্তরা  বিবৃতি দেয় (অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত) এ সামান্য (প্রায় চার হাজার কোটি টাকা) টাকা এতে রাষ্ট্রের তেমন ক্ষতি হবে না। আবার সেই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকেও ডিজিটাল চুরির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়। রাষ্ট্রীয় কর্ণধাররা তা টেরই পান না। শেয়ার বাজার থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিযোগকারীদের কতো শতো কোটি কোটি টাকা লুট করে নেওয়া হয় তার কোন হুদিস তো মেলেই না। আর অপর দিকে উন্নয়নের নামে প্রকল্পসমূহের বাজেট কয়েকগুন বাড়িয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পথে-ঘাটে বা অফিস-আদালতে তো চলছেই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, ঘুষ-দুর্নীতি। যুব সমাজ ইয়াবা বা মাদক নেশায় হচ্ছে ধ্বংস, মাদকাসক্ত হয়ে অনেকেই কু-পথে যাচ্ছে। সরকারের যেনো সেদিকে খেয়াল নেই। উপজাতিদের উপর চলছে আঘাত, নেই পরস্পর পরস্পরের মাঝে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মানষের জীবন-জীবিকানির্বাহ আজ দুর্বিসহ। এসব বিষয় নিয়ে একেবারে মুখে কলুপ আটকিয়ে দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা স্টপ থাকে।

এমনি পরিবেশে মানুষ সারা দিনের পরিশ্রম শেষে যখন ঘরে ফিরে একটু চিত্ত-বিনোদনের দিকে যায়। সেখানেও দেখা যায় পার্শ¦বর্তী একটি দেশের বিশেষ চ্যানেলসমূহের পারিবারিক কুট-কৌশলের মাধ্যমে সমাজের অবক্ষয়মূলক দৃশ্যপট। যা বিশেষ করে আমাদের শিশু-কিশোর ও নারী সমাজকে আরো অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পার্শ¦বর্তী দেশ এতেই ক্ষান্ত হয়নি। আমাদের কিছু লোভী লোকের যোগ-সাজসে এখন তারা বাণিজ্যের নামে চালাচ্ছে আমদের দেশীয় সিনেমা হলে ভারতীয় বাংলা সিনেমার ব্যবসা-যা ধীরে ধীরে গ্রাস করছে এদেশীয় চলচ্চিত্র-বিনোদন তথা সাংস্কৃতিক অঙ্গন। ধীরে ধীরে কৌশলে ধ্বংস করতে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। 
 
এখন পরীক্ষা এলে হচ্ছে দেদারসে প্রশ্ন ফাঁস, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সময়েই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আজ থেকে কয়েক বছর আগে প্রশ্ন ফাঁস শুরু হলে অস্বীকার করে যায় একের পর এক-বলে কোন প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, সবই গুজব। এতে বছরের পর বছর এ প্লাস বা পাসের হার বেড়ে গেলে সরকার বগল বাগিয়েছে যে, আমরা শিক্ষার বেজায় উন্নতি করেছি যা অন্য কোন সরকার দেশ স্বাধীনের পর করেননি। অথচ জনগণ জানে অতি সম্প্রতি ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত যারা বা যে সরকার দেশ চালিয়েছেন তাদের সময় কোন প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। তাহলে সে সময় সেই সরকার তার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রি বা মন্ত্রণালয় দিয়ে কিভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা সাজিয়েছিলেন-যা আজকের জন্য মাইলফলক-ফলে সে সময়ের সরকার তথা মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রশ্ন ফাঁসকে অস্বীকার করতে করতে প্রশ্রয় দিতে দিতে আজ এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে ফলে একদিকে সরকার প্রশ্ন ফাঁস হলেও অস্বীকার করায় প্রশ্ন ফাঁসকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে আরো সংগঠিত হয়ে বেপরোয়া তৎপরতা চালিয়ে বাধাহীনভাবে তাদের প্রশ্ন ফাঁস কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। ফলে যে কোন পরীক্ষা এলে প্রশ্ন ফাঁস যেনো এখন রীতি হয়ে গেছে। শিক্ষা মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন-প্রশ্ন ফাঁস হলেই পরীক্ষা বাতিল। তার এ ঘোষনা’র কিছুই হয়নি। প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে-ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষাও চলছে-কোন বাতিল নেই। প্রশ্ন ফাঁস আজ ক্যান্সারের চেয়েও মহামারি আকার ধারণ করছে। প্রশ্ন ফাঁসে কার্যকর কোন পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত সরকার না নিয়ে প্রজন্মদের কোন অন্ধকার গহ্বরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার। এটা বর্তমান সরকারের চরম ব্যর্থতা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক কিছু প্রেক্ষাপট বা অস্থিরতা।

রাজনৈতিক অস্থিরতা বা অবস্থা সে তো………………………..। বিগত নিকট অতীত নিবার্চন ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারী;সে-দিক লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। সে নির্বাচনে একমাত্র ভারত ছাড়া ছিল না কোন পর্যটক, ছিল না ৯৫% ভোটার উপস্থিত, ছিল না সংসদীয় ৩০০ আসনের প্রত্যক্ষ নির্বাচন, অনেক কেন্দ্র ছিল ফাঁকা-ভোটারবিহীন-মিডিয়া কল্যাণে দেখা যায় কুকুর ঘুমাচ্ছে। যে নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশী ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অগেই জিতিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি প্রার্থি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেও প্রার্থি জানেই না তাকে বিজয়ী করে দেওয়া হয়। সরকার গঠিত হয় । এরপরে পরবর্তীতে সিটি নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, ইউনিয়ন নির্বাচনসহ সকল স্থানীয় নির্বাচন প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততায় সরকার একই ধারায় করে নেয়। চলে ভয়-ভীতি, ভোট চুরির মহোৎসব। ভোটারের ভোটাধিকারের তেমন বালাই থাকে না। যা গণতন্ত্রকে ধ্বংসের খাদের শেষপ্রান্তেও নিয়ে যাওয়া বটে। শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকার বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁস কে অস্বীকার করে ধ্বংসের দাড়প্রান্তে নিয়ে গেছে-যা আজ মহামারি আকার ধারণ করছে ঠিক তেমনি ভয়-ভীতি প্রর্দশন, রাতে-আধারে ব্যালটবাক্স ভরাট তথা ভোটারবিহীন নির্বাচন করার-গণতন্ত্রতেও আজ মহামারি দেখা দিয়েছে। 

সাধারণ মানুষ কোন কথা বলতে পারেন না, কেননা-মানুষের মনে থাকে ভয়, না-জানি কি হয়। সূধী-সুশীল সমাজ ও অন্য রাজনৈতিক দল বা নেতারা যদি  এসব বিষয় নিয়ে মুখ খোলে তা হলে নামে বা বেনামে মামলা-হামলা, জেল-জুলুম, রিমান্ড-নির্যাতন, অপহরণ-গুম-খুন বা পঙ্গুত্ব বরণের স্বীকার হতে হয়। আজো কতো শত জন গুমের স্বীকার হয়ে আছে তার হুদিস মিলছে না। কতো মায়ের বুকের আত্মর্নাদ, বাবার হাহাকার, সন্তানদের প্রতীক্ষা, স্বজন হারানোর বেদনা গুমরে গুমরে কাঁদছে। যেনো সবসময় তাড়া করছে অজানা এক ভীতি। জানা কি আছে এসব থেকে কবে হবে মুক্তি ? এই তো হচ্ছে আজ আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক অবস্থার নমুনা।
এসব থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে বৃহৎ দলের এক নেত্রী যখন ব্যাপক গণসমর্থন নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সরকার তাকে মিথ্যা, ভূয়া, জাল নথির মাধ্যমে প্রহসনের বিচার করে সাজা দিয়ে জেল বন্দী করে রেখেছে।  রাজনীতিতে এখন চলছে একক কর্তৃত্ববাদের শাসন। যেখানে একজন ৫টি মামলায় (জনগণ ভাবে মিথ্যা, মামুলি মামলা) প্রহসনের রায়ে জেল-বন্দী জীবন যাপন করছে আর অন্যজনের হত্যামামলাসহ ১৫ টি মামলা উধাও ক্ষমতায় থেকে। এ যেনো এক চরম বৈষম্য। এ বৈষম্য রোধ করবে কে ? এটাই আজ জনগণের প্রশ্ন।

তবে এ দেশে আছে বিশাল ছাত্র-যুব-ঐতিহ্য সংস্কৃতিবান্ধব সমাজ, আছে অধিকার সংগ্রামী সুবিশাল জনগোষ্ঠী। এই ছাত্র-যুব-ঐতিহ্য সংস্কৃতিবান্ধব সমাজ আর সুবিশাল জনগোষ্ঠীই ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণঅভ্যূত্থান সফল করে অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আর মহান ভাষা আন্দোলন  যদিও একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল-তা কেবল সাংস্কৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তার উত্তাপ রাজনৈতিক পরিমন্ডলেও ছিল এবং শেষ পর্যন্ত সফলকাম ছিল। আজ দেশে আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা-অস্থিতিশীলতা-ভোটাধিকার ও মানবাধিকার ভূ-লণ্ঠন, আগ্রাসনমূলক যে পরিবেশ বিরাজ করছে তা থেকে উত্তরণের জন্য অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের ছাত্র-যুব-ঐতিহ্য সংস্কৃতিবান্ধব সমাজ বা সংগঠন সর্বোপরি সূধী-সুশীল বা অধিকার সচেতন জনগোষ্ঠীকেই। বুকে লালন করতে হবে একুশের সেই চেতনা। যে চেতনা ছিল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক-বাহক ; যেখান থেকে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাজনৈতিক অধিকার। সেই চেতনা নিয়েই আজকে লড়তে হবে নিরাপত্তাহীনতা-অস্থিতিশীলতা-ভোটাধিকার ও মানবাধিকার ভূ-লণ্ঠন, আগ্রাসনমূলক পরিবেশ বিরুদ্ধে এদেশের ছাত্র-যুব-ঐতিহ্য সংস্কৃতিবান্ধব সমাজ বা সংগঠন সর্বোপরি সূধী-সুশীল বা অধিকার সচেতন জনগোষ্ঠীকেই। এই একুশের চেতনায় হোক চলমান পথ থেকে মুক্তি লাভের বাসনা। তাই আজকের এ লগ্নে এসে আমাদের যাপিত জীবনের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, সংগ্রাম-আন্দোলনের চেতনায় মুলমন্ত্র হোক “একুশে ফেব্রুয়ারী মানে মাথা নত নয়-চেতনায় আগুয়ান” এবং সবশেষে সফল হওয়া।


মোঃ মিজানুর রহমান-লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট………