Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: রাজধানীসহ সারাদেশে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের বিরুদ্ধে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে হঠাত্ করে এ অভিযান শুরু করায় নাখোশ হয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযানকালে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের টিমকে সহযোগিতা করেনি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। এমনকি মাদকসহ গ্রেফতার করলেও মামলা নিতে গরিমসি করেছে পুলিশ।

গত ৩১ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় এক সংসদ সদস্যের বক্তব্যে মাদক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, অভিযানের শুরুর প্রথম দিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চাঁনখারপুল, গেন্ডারিয়া, টিটিপাড়া, খিলগাঁও, পুরানা পল্টন, ভাটারা, মতিঝিল, আরামবাগ, যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ বনশ্রী, ধানমন্ডি, মিরপুর, তেজগাঁও রেলবস্তি, গুলশান, ভাটারা, উত্তরা, বেড়িবাঁধ, গাবতলী, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, কাওরানবাজার রেল বস্তি, রূপনগর, শাহআলী এলাকায় অভিযান চালায়।

 কিন্তু থানা পুলিশের কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্যের কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা আগেভাগে খবর পাওয়ায় অনেক অভিযান ব্যর্থ হয়। সূত্র জানায়, এসব অসাধু পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে ইয়াবা ব্যবসা। ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃত একাধিক আসামিও পুলিশকে টাকা দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্বীকার করেছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সাঁড়াশি অভিযানের প্রথম কয়েকদিন প্রত্যেকটি অভিযান সফল হয়েছিল। পরবর্তীতে অধিকাংশ অভিযান সফল হয়নি। এ কারণে কয়েক দিন বিরতি দিয়ে দিয়ে চলছে অভিযান। তিনি বলেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মাদক নিয়ন্ত্রণের মেট্রো টিম রূপনগর এলাকার চলন্তিকা বস্তিতে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাদের অভিযানের খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ দুপুরের পরই চলন্তিকা বস্তিতে অভিযান চালায়। কিন্তু অভিযানে পুলিশ কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার এবং কোনো মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে পারেনি।

 কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের টিম পুলিশের অভিযানের পরপরই অভিযান চালায়। এসময় গ্রেফতার হয় ৬ মাদক ব্যবসায়ী। উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। কিন্তু এ নিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ টালবাহানা শুরু করে। শেষটায় রাত ৩টার দিকে মামলা নিতে বাধ্য হয়। তিনি আরও বলেন, ওই থানাই নয়, অভিযানের ব্যাপারে নগরীর অনেক থানা পুলিশের আচরণও একইরকম।

এ ব্যাপারে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. খুরশিদ আলম বলেন, অভিযানে পুলিশ নাখোশ বলা যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে থানা পুলিশই আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে থাকে।
কিন্তু রাজধানীর রূপনগরের চলন্তিকা বস্তিসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযানকালে পুলিশ অসহযোগিতা করেছে বলে অভিযান পরিচালনাকারী টিমের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশিদ আলম কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দুটোই সরকারি সংস্থা, সুতরাং এ ব্যাপারে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে তিনি বলেন, যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। পুলিশ মাদকের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
এ দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ অনেকটা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা মাদকের মূল উত্পাটন করতে চাই। তবে এর জন্য আমাদের যে লোকবল রয়েছে তা নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানো কষ্টসাধ্য, তবে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হলে তা সম্ভব।

এ দিকে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ইয়াবা চালান বন্ধ হচ্ছে না কেন— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জামাল উদ্দিন আহমেদ  বলেন, ইয়াবা চালান বন্ধ না হওয়ার প্রাথমিক কারণ হচ্ছে, মানুষ ইয়াবা সেবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখন চাহিদা থাকলে তো জোগান আসবেই। সূত্র : ইত্তেফাক