Sun. May 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: স্বাস্থ্যবান্ধব মশা নিধন যন্ত্র আবিষ্কার করে দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলেছেন বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানী এমএ হামিদ। ‘এইচইসি মসকিটো কিলার’ (হামিদ ইলেকট্রো-কেমিক্যাল মসকিটো কিলার) নামের এই যন্ত্র আবিষ্কারের জন্য গত ৯ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার দ্য বুক অব রেকর্ডে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন এই আলোচিত বিজ্ঞানী। তার এই আবিষ্কার মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

৩৫ বছর বয়সী বিজ্ঞানী এমএ হামিদের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামে। বাবা শামসুল হক ও মা মাহমুদা খাতুনের চতুর্থ সন্তান হামিদ ১৯৯৮ সালে হাওলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০০০ সালে উপজেলার কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেলিযোগাযোগ বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি। এরপর চট্টগ্রামস্থ জেনারেল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট (যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক) থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন এমএ হামিদ।
মশা নিধন যন্ত্র আবিষ্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকে গবেষণা শুরু করি। প্রথমদিকে দুইজন মিলে কাজ শুরু করলেও পরে এককভাবে কাজ চালিয়ে যাই। ২০১৪ সালের   মাঝামাঝি যন্ত্রটি আবিষ্কারে সফল হই। ওই বছরের জুনে এই যন্ত্রের পেটেন্টের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট বিভাগে আবেদন করি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে পেটেন্ট পাই। পরে ২০১৭ মালয়েশিয়া থেকেও পেটেন্ট পাই।
এমএ হামিদ বলেন, প্রথমদিকে আমরা স্বল্প খরচে বিদ্যুত্ উত্পাদনের লক্ষ্যে গবেষণা শুরু করি। এরপরই হঠাত্ করে মশা নিধন যন্ত্র আবিষ্কারের বিষয়টি মাথায় আসে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রায় চার বছরের মাথায় যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হই। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে মশা নিধনে যেসব পণ্য বা যন্ত্র রয়েছে তা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বায়ু বা শব্দ দূষণের মাধ্যমে মশা তাড়াতে এসব পণ্য বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমার উদ্ভাবিত ইলেকট্রো-কেমিক্যাল মসকিটো কিলার যন্ত্র মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কোনোভাবেই ক্ষতিকর নয়। এই যন্ত্র মশাকে আকৃষ্ট করে। যেভাবে মানুষের প্রতি মশা আকৃষ্ট হয়।
যন্ত্রটির মধ্যে যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় তা এক ধরনের সুগন্ধি। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে যেভাবে মশা আক্রমণ করে, ঠিক সেভাবে সুগন্ধকে মানুষ মনে করে মশা ওই যন্ত্রটির সংস্পর্শে চলে আসে। এক ফুট উচ্চতা এবং ছয় ইঞ্চি প্রস্থের (টেবিল লাইটের আকৃতি) এই যন্ত্রটিতে পাঁচ ওয়াটের একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব আছে। বৈদ্যুতিক সুইচে যন্ত্রটি লাগিয়ে দিলে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে মশা নিধন শুরু হবে। দুই হাজার বর্গফুটের মধ্যে যত মশা থাকবে সব মশা এই যন্ত্রে আকৃষ্ট হবে। বিদ্যুত্ ছাড়াও ব্যাটারি দিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা চলবে যন্ত্রটি। এছাড়া সৌর বিদ্যুত্ চালিত একই ধরনের যন্ত্র বাজারে আনার ইচ্ছা রয়েছে। তিনি বলেন, সহজে বহনযোগ্য, বিদ্যুত্ সাশ্রয়ী ও স্থায়ীভাবে মশা নিধনকারী যন্ত্রটি ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া, চীন, বাংলাদেশসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ রয়েছে এমন অনেক দেশ এই যন্ত্র নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। মালয়েশিয়ার টুফ্যাম ব্র্যাদার্স কোম্পানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যন্ত্রটি বাজারজাত করবে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই যন্ত্রটি বাজারে আসবে বলে তিনি জানান। বিজ্ঞানী এম এ হামিদ বলেন, প্রায়ই মশাবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া’র মতো রোগের প্রাদুর্ভাব প্রায় দেখা যায়। সম্প্রতিকালে মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের প্রকোপ সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ‘এইচইসি মসকিটো কিলার’ যন্ত্রটি এ ধরনের অনেক রোগ ঠেকাতে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। সূত্র : ইত্তেফাক