Sun. May 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: নগরীতে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী মহেষখাল খননে দুই কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। কার্যাদেশ অনুযায়ী গত ৮ জানুয়ারি থেকে উত্তোলন শুরু হয় খালের মাঝ থেকে বর্জ্য ও মাটি। কিন্তু উত্তোলিত মাটি নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে না নিয়ে খালের পাশেই রাখা হয়। ফলে কয়েকদিন পর সেগুলো আবার জোয়ার ও বৃষ্টিতে নেমে আসে খালে। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা মাটি ফের ভরাট করছে খালটি। এতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে দুই কোটি টাকার প্রকল্পের সফলতা নিয়ে। পরিকল্পিত উদ্যোগ না নেওয়ায় এভাবে খালের মাটি খালে পড়ে পুরো প্রকল্পের টাকাই চলে যাচ্ছে জলে।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী প্রধান খালগুলোর একটি মহেষখাল। খালের মাটি উত্তোলনের জন্য চসিকের নিজস্ব এক্সক্যাভেটর লংবোম ও শর্টবোম রয়েছে। শুস্ক মৌসুমে একসঙ্গে খনন কাজ হলে তখন ভাড়ায় নিয়ে কাজ করতে হয়। এবার প্রায় ১০টি খননযন্ত্র ভাড়ায় এনে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। মাটি যাতে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে খালে নেমে আসতে না পারে সেজন্য নিরাপদ দূরত্বে রাখার জন্য বলা হয়েছে। তবে খাল খননে মেগা প্রকল্পটির দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) পাওয়ার পর বিষয়টি বিস্তারিত জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেজন্য আমরা খননে কাজে ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছি। সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর পুরোদমে কাজ শুরু করা হবে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, চসিকের গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী ৫৭টি খালের মধ্যে চিহ্নিত মহেষখাল, চাক্তাই খাল, হিজরা খালসহ বিশেষ অংশ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। সংস্কার কাজের সুবিধার জন্য করপোরেশনের সব ওয়ার্ডকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ৮ জানুয়ারি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন খনন কাজ উদ্বোধনের পর উত্তর আগ্রাবাদের মহেষখাল সংস্কার শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী এক্সক্যাভেটরের মাধ্যমে খনন করে লংবোম ডাম্পার ট্রাক দিয়ে আবর্জনা-মাটি মূল খাল থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে উত্তোলিত বর্জ্যসহ মাটি ফেলা হচ্ছে খালের ভেতরের অংশে, কোথাও বা খালের পাড় ঘেঁষে।

গত রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, আগ্রাবাদ চউকের ২০ নম্বর সড়ক থেকে ইসলামিয়া হাট ছোটপোল ইসলামিয়ার ব্রিকফিল্ড পর্যন্ত খালের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে ময়লাসহ মাটি অপসারণ করে খালটির প্রতিরক্ষা বাঁধের ভেতরেই স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। খালের সংযোগস্থলে অলস পড়ে আছে ড্রাম্পার ট্রাক। আবার পরদিন দেখা যায় ডাম্পার লংবোম একটি খননযন্ত্রও অলস বসে আছে।

এ সময় স্থানীয় একটি কুলিং কর্নারের স্বত্বাধিকারী মো. আরমান বলেন, গত বর্ষায় এখানে যে পরিমাণ পানি উঠেছে, তা ১৯৯১ সালের জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড়ের সময়ও দেখা যায়নি। হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে সয়লাব হয়ে যায় পুরো মহেষখাল এলাকা। খনন কাজ শুরু হওয়ার পর ভেবেছিলাম, এবার বুঝি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু যেভাবে উত্তোলিত মাটি-বর্জ্য পাড়েই রাখা হচ্ছে, তাতে অবস্থার কোনো হেরফের হবে বলে মনে হয় না। একই মন্তব্য করেছেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা সুজায়েদ ইসলাম। তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে খালের সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় এমনটা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এর সুফল নগরবাসী পাবে না।

আগ্রাবাদ হালিশহর জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সেক্রেটারি জসীম উদ্দিন বাবুল বলেন, অনেকদিন পর মহেষখাল খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাটি যেভাবে রাখা হচ্ছে তা আবারও খালে নেমে গিয়ে ভরাট হবে। বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলরকে বলা হয়েছে। এভাবে মাটি ফেলা হলে পুরো প্রকল্পের টাকাই জলে যাবে।

চসিকের খাল খনন স্ট্যান্ডিং কমিটির সাবেক সভাপতি পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাফরুল ইসলাম বলেন, সংশ্নিষ্ট প্রকৌশলীর নির্দেশনা অনুসারেই কাজটি হওয়ার কথা। যেটি প্রকল্পের কার্যাদেশে স্পষ্ট উল্লেখ থাকে। কিন্তু সেভাবে হচ্ছে বলে মনে হয় না।

দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এএইচএম সোহেল বলেন, বিষয়টি দেখার পর সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকেও অবহিত করা হয়েছে। মেয়র পরিকল্পিতভাবে খনন না হলে ‘লোক দেখানো’ কাজ বন্ধ রাখার কথা বলেছেন।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক অবশ্য বলেন, খালের মাটি নিরাপদ দূরত্বে ফেলতে বেশ কিছু এক্সক্যাভেটর ভাড়া করা হয়েছে। সেগুলো ব্যবহার শুরু হলে এ অবস্থা থাকবে না। প্রাথমিকভাবে কিছু মাটি খালের পাশে রাখা হচ্ছে। তথ্যসূত্র : সমকাল