খােলা বাজার২৪। বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: তাসকিন আহমেদ আর সৌম্য সরকার একসঙ্গে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পাশে একাডেমি ভবনের সামনে গাড়ি থেকে নামলেন। দু’জন একসঙ্গেই জিমে চলে গেলেন। তাসকিন তার নিজস্ব মিউজিক প্লেয়ার থেকে গান ছেড়ে দিলেন। এরই মধ্যে হাসতে হাসতে সেখানে প্রবেশ করলেন আরেক তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার তিনজন মিলেই জিমে গানের তালে তালে নিজেদের ঘাম ঝরাতে শুরু করেন। এর মধ্যেই দৈনিক মানবজমিন-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনজন জানালেন নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ের কথা।
মিরাজ টেস্ট দলে নিয়মিত। একটি সিরিজ পর দলে ফিরেছেন তাসকিন। ফর্মের কারণেই দল থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। এবার সুযোগ এসেছে শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেকে ফের প্রমাণ করার। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক। এরপর একই বছর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকটাতো রেকর্ডে রাঙানো। গেল বছর তার টেস্ট খেলার স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। কিন্তু যতটা আশা ছিল এ তরুণ পেসারকে ঘিরে ১৭ টি-টোয়েন্টি, ৩২ ওয়ানডে ও ৫ টেস্টে তা পূরণ করতে পারেননি সেভাবে।
বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছেতাই। যে কারণে লঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে দলেই জায়গা হয়নি। এবার ফিরতে পেরে তাই লক্ষ্যটাও বড়। তিনি বলেন, ‘আসলে দলে টিকে থাকতে হলে পারফরম্যান্সটাই আসল। আমি চেষ্টা করছি নিজেকে প্রস্তুত করার। আমার সব সময় চেষ্টা ছিল দলের জন্য কিছু করার। কিন্তু একটা খারাপ সময় সব ক্রিকেটারেরই যায় আমিও সেটির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। শ্রীলঙ্কাতে সুযোগ পেলে চেষ্টা করবো নিজের ভুলগুলো শুধরে ভালো করার।’
কিছুদিন হলো প্রশ্ন উঠেছে তার বোলিংয়ের গতি নিয়েও। বিশেষ করে বলা হচ্ছে তাসকিন যখন বল শুরু করেন তার গতি থাকে ১৪৫ কি.মি.। আর যখন শেষ করেন তা নেমে আসে ১২৫ কি.মিতে। এমন অভিযোগ নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘আসলে বিষয়টা ঠিক না। যখন খারাপ সময় যায় তখন অনেকেই অনেক কথা বলেন। যখন ভালো করেছি তখনতো এমন কথা শুনিনি। নির্বাচকরা আমাকে দেখছেন। তারা জেনে বুঝেই দলে ডেকেছেন।’
শ্রীলঙ্কার নিজেদের মাটিতেতো আরো শক্তিশালী। তার উপর সেখানে প্রতিপক্ষ থাকবে ভারতও। দুইদলের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের সামলানো কতটা চ্যালেঞ্জ মনে করেন, ‘চ্যালেঞ্জতো অবশ্যই। আমি সুযোগ পেলে চেষ্টা করবো ভালো জায়গাতে বল করার। লাইন ও লেন্থের সঙ্গে গতিটা ঠিক রাখার।’
চ্যালেঞ্জই সৌম্যের প্রেরণা
নিজ দেশের মাটিতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই হারতে হয়েছে বাজেভাবে। ফর্মের কারণে ওয়ানডে ও টেস্ট দলে না থাকলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ফিরেছিলেন প্রতিভাবান তরুণ সৌম্য সরকার। ফিরেই তুলে নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। যদিও সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে দলকে। এবার লঙ্কার মাটিতে চ্যালেঞ্জ ভারতও। তারপরও সৌম্য ভারতকে কোনোভাবে সহজ প্রতিপক্ষ ভাবছেন না। তিনি বলেন, ‘বিরাট নেই বা ধোনি নেই তাতে কি? ওদের সেরা ক্রিকেটারেরতো অভাব নেই। আর শ্রীলঙ্কাও আছে ফুল ফর্মে। দু’টি দলের সঙ্গে আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ওদের পেসার বলেন, স্পিনার বলেন সবাই বিশ্বসেরা। তাই আমাদেরও খেলতে হবে সেরাটা দিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা হলো- আগে থেকেই ভয় নিয়ে মাঠে নামলে হবে না। সাহসটাই বড় বিষয়। আর আমি মনে করি জীবনে চ্যালেঞ্জ আছে বলেই ভালো করার ক্ষুধা আছে। চ্যালেঞ্জ না থাকলেই ভালো করা কঠিন।’
সৌম্যের প্রতি অভিযোগ তার পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা নিয়ে। এ বিষয়ে এ তরুণ ব্যাটটসম্যান বলেন, ‘আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। দলও আমাকে সুযোগ দিচ্ছে। বিশ্বের অনেক ক্রিকেটারই শুরুতে স্ট্রাগল করেছে। আমিও করছি। আশা করি নিজের ভুলগুলো শুধরে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। সবচেয়ে বড় কথা হলো নিজের উপর বিশ্বাস রাখা ও নিজের কাজটি করে যাওয়া। আমি তাই করার চেষ্টা করছি।’
মুখিয়ে আছেন মিরাজ
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে টেস্ট অভিষেকেই রেকর্ডের পাতায় নাম ওঠে মেহেদী হাসান মিরাজের। অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে সরাসরি জাতীয় দলে। তবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরমেটে সুযোগ পেলেও নিজেকে এখনো সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি এ তরুণ। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে তার বোলিংয়ের ধার যেন মিলিয়ে যায়। দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার ভয়ঙ্কর রূপ দেখেছেন। সেই লঙ্কার বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সেখানে আরেক প্রতিপক্ষের নাম ভারত। তবে মিরাজ মুখিয়ে আছেন ঘুরে দাঁড়াতে। তিনি বলেন, ‘এটি আমার প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার সুযোগ। এর আগে কোন দিন টি-টোয়েন্টিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলিনি। তাই প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে নিজের সেরটা দেয়া। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে সাকিব ভাই ছিলেন না। এবারও হয়তো দুই/একটা ম্যাচে তিনি থাকবেন না। কঠিন হলেও চেষ্টা থাকবে তার অভাব পূরণ করার। একটি কথা আমি বলতে চাই- গেল বছর কিন্তু আমরা শ্রীলঙ্কার মাটিতে সব সিরিজিই ড্র করেছি। সেখানে টেস্টও জিতেছি। আবার ওদের কিন্তু খুব খারাপ সময় যাচ্ছিল। তারপর ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ক্রিকেটে এমন হয়ই। আমি মুখিয়ে আছি ওদের মাটিতেই জবাবটা দেয়ার জন্য।’ মানবজমিন