খােলা বাজার২৪। বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রায় শেষের পথে। আজ বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নামছে বইমেলার পর্দা। গোটা ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলা এই মেলায় দর্শক ও ক্রেতা সমাগম ছিল আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। বই বিক্রির পরিমাণ আগের চেয়ে বেশি হওয়ায় প্রকাশকরা সন্তোষ জানাচ্ছেন। বাংলা একাডেমিও মনে করছে, এবারের বইমেলায় বই বিক্রির পরিমাণ আগের সব বছরকেই ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের বইমেলায় মোট বিক্রি হয়েছিল ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই। এর মধ্যে বাংলা একাডেমির বই বিক্রির পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩০০ টাকা। এর বিপরীতে এ বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেড় কোটি টাকার বই বিক্রি করেছে একাডেমি। ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি যে পরিমাণ বই বিক্রি হবে, তাতে এ বছরে বাংলা একাডেমির বই বিক্রির পরিমাণ গত বছরের চেয়েও বেশি হবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ।
মেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বইয়ের বেচাবিক্রিতে তারাও খুশি। মেলায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা আগের চেয়ে বেশি হওয়াকেও তারা ইতিবাচক মনে করছেন।
মেলায় অনুপম প্রকাশনী, অন্যপ্রকাশ, সময় প্রকাশন, প্রথমা, কাকলী প্রকাশনী, অন্বেষা, সেবা প্রকাশনী, ভাষাচিত্রসহ কয়েকটি প্রকাশনা স্টলে কথা বলে জানা যায়, এবারের বই মেলায় দর্শনার্থী সমাগম ও বিক্রি— দু’টিই বেশ ভালো। তবে কেউ কেউ বলেছেন, এখনও লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়নি। তাই মেলার শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন অনেকেই।
এ বছর মেলা চলাকালীন কোনও রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকাকে মেলায় দর্শনার্থী সমাগম ও বই বিক্রি বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ মনে করছেন প্রকাশকরা। মেলায় সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েও সন্তোষ জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া, মেলায় কোনও বই বা প্রকাশনা সংস্থা নিয়ে আপত্তি না থাকায় স্বস্তির কথা জানিয়েছেন তারা।
অনুপম প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মিলন নাথ বলেন, ‘বিক্রি বেশ ভালো। মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই দর্শনার্থীদের সমাগম বাড়তে থাকে। তবে এবারের বইমেলায় একটি বিষয় ছিল লক্ষণীয়, অনেকেই মেলায় ঘুরতে ও বই কিনতে এসেছেন পরিবার নিয়ে। আবার অনেকেই নিজে বই কিনে পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য বই কিনে নিয়ে গেছেন। নব্বইয়ের দশকে আমরা এরকম দেখতাম। মাঝখানে অনেক বছর এমন দেখিনি। বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে— এটা দেখে খুব ভালো লেগেছে।’
অন্যপ্রকাশের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘এবারের মেলায় পাঠকের সাড়া পেয়েছি। পাঠক সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে।’ কী ধরনের বইয়ের বিক্রি বেশি ছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। যারা নেন, তারা বেশিরভাগই নতুন প্রজন্মের পাঠক। তারা হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে জানতে চান।’
মেলায় অনেকেই এসেছেন পরিবার নিয়ে (ছবি- ফোকাস বাংলা)ভাষাচিত্রের ব্যবস্থাপক তানভির জানান, তাদের বিক্রিও বেশ ভালো। তবে তাদের প্রত্যাশা সোমবারের বিক্রি পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকেই বই মেলার সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায় বইপ্রেমীদের। ফুটপাথে বসে কিংবা মেলার প্রবেশপথে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তারা। এর মধ্যে বড় একটি অংশ ছিল বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এছাড়া মেলায় বিভিন্ন স্কুলের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম থেকে সরাসরি মেলায় নিয়ে আসতেও দেখা গেছে।
উত্তরা থেকে বই মেলায় এসেছেন ফারহান শিকদার। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মেলায় এসেছেন বই কিনতে। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, বইমেলায় বন্ধের দিন আসা গেলেও একটু শান্তিমতো দেখে-শুনে বই কেনার উপায় থাকে না। কারণ ছুটির দিনগুলোতে ভিড় থাকে অনেক বেশি। তাই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে এসেছেন তিনি।
মেলার গেট খোলার আগে থেকে অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন ফুটপাথেএদিকে, বইমেলা শেষ হওয়ার দুই দিন আগের হিসাবেই এ বছরে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আগের বছরকে ছাড়িয়ে গেছে। মেলার ২৬ দিনে নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে মোট চার হাজার ৩৩৬টি। গত বছর মেলায় নতুন বই এসেছিল ৪ হাজার ১২টি।
গত বছর মেলায় নতুন বই প্রকাশে শীর্ষে ছিল কবিতার বই। এ বছরও চিত্রটি একই। এখন পর্যন্ত মেলায় কবিতার বই এসেছে এক হাজার ২৯২টি। এরপরই রয়েছে ছোট গল্পের বই— ৬১৩টি, উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে ৫৭৮টি। এ ছাড়া, মেলায় ২৪১টি প্রবন্ধ, ৯১টি বিজ্ঞান, ৯৭টি ছড়ার বই, ৯৪টি ইতিহাস, ২১৩টি শিশুতোষ এবং ৭০১টি অন্যান্য বিষয়ের নতুন বই এসেছে মেলায়। সোমবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৭টি।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান বলেন, মেলায় প্রতিবছর কয়েকশ নতুন লেখকের প্রথম বই প্রকাশ পায়। এবারও একই অবস্থা দেখা গেছে। মেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে প্রায় আড়াইশ লেখকের বই ছিল তাদের প্রথম বই। বাংলাট্রিবিউন