খােলা বাজার২৪। বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮: গণতন্ত্র চর্চায় বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় এদেশে আমি দেখেছি পার্লামেন্টে বিরোধী দলে যারা ছিল বিশেষ করে বিএনপি যখন ছিল তখন এই পার্লামেন্টে যে সমস্ত অশালীন কথা বলা হতো যা ভাষায় উচ্চারণ করা যায় না। যে আচার আচরণ করতো কোন গঠনমূলক আলোচনা করতো না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে বর্তমানে আমাদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এখানে গঠনমূলক দায়িত্ব পালন করছে। অত্যন্ত গঠনমূলক আলোচনা করছে, গঠনমূলক সমালোচনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যতগুলো বিল আসছে সেগুলো তারা দেখছেন সেখানে সব ধরনের সংশোধনী নিয়ে আসছেন। সেই সংশোধনী আমরা গ্রহণ করছি। গণতান্ত্রিক চর্চাটা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে করা যেতে পারে তার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে এই সংসদে। এজন্য বিরোধী দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
এর আগে জাতীয় পার্টি সরকারি না বিরোধী দল এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে দলটির সম্মান বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন রওশন এরশাদ। দলের তিন এমপিকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে এখনও সরকারে ধরে রাখায় কিছুটা ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বিরোধী দলটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
প্রসঙ্গত, রওশন এরশাদ তার বক্তব্যে সংসদে নিজেদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী তার এক ঘণ্টার বক্তব্যে ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। বরং সংসদে জাতীয় পার্টির ভূমিকার প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও বক্তব্য প্রদান করেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। চুক্তিও আমরা করেছি। তাদের থাকার জন্য ভাসানচরে বাসস্থান নির্মাণ শুরু করে দিয়েছি। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যাচ্ছে। তাদের যাতে মানবেতর জীবন-যাপন করতে না হয়, যতদিন তারা নিজ মাটিতে ফিরতে না পারে ততদিন যেন ভালোমতো থাকতে পারে সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিক আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। তাদের আমরা ইতোমধ্যে আইডি কার্ডও করে দিয়েছি। মিয়ানমার আর কোনোদিন অস্বীকার করতে পারবে না এরা তোদের লোক নয়। যখনই আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে তখনই তাদের পরিচয়পত্র করে দিয়েছি। আমরা মানবিক কারণে তাদেরকে সহযোগিতা দিয়েছি। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বিশ্ববাসী সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
এ বক্তব্যে সশস্ত্র বাহিনী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, কেউ আক্রমণ করলে পাল্টা জবাবে দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা শান্তি চাই কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। কিন্তু কেউ যদি আমাদের আক্রমণ করে আমরা যাতে তা মোকাবিলা করতে পারি, উপযুক্ত জবাব দিতে পারি তার জন্য সমস্ত বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করেছি।
সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আমরা নতুন নতুন সরঞ্জামাদি কিনে দিচ্ছি। তাদের আবাসন সমস্যার সমাধান করছি। ফোর্সেস গোল ২০৩০ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
জঙ্গি দমন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদ বন্ধ করেছি। সবার কাছে আহ্বান জানাই—তারা যেন তাদের ছেলে-মেয়ে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন তাদের শিক্ষার্থীরা কী করে, কোথায় যায়; খোঁজ রাখে। সবাই যেন সজাগ থাকে।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে সেতুর দুইটি স্প্যান বসে গেছে। এই সেতু নিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা গেছে। তবে যে অভিযোগটা আমাদের দেওয়া হয়— সেটা যে গালগপ্পো ছিল, তা কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছিলেন। এত অল্প সময়ে একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে পরিণত করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ৫ বছরে উন্নত দেশে পরিণত হতো। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে সেই সুযোগটা আমরা হারিয়েছি।
এছাড়াও সংসদে সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে সরকার প্রধানমন্ত্রী।