Sun. May 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১৮: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সহসা কারামুক্তি পাবেন কি-না তা নিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা পড়েছেন সংশয়ের আবর্তে। তিনি গত ২১ দিন কারাগারে থাকলেও জামিন ও মুক্তি নিয়ে কোন ’সুসংবাদ’ নেই। জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টে শুনানি শেষ হলেও বেগম জিয়ার অপেক্ষা এখনই ফুরাচ্ছে না। গত রবিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছেন বিচারিক আদালতের নথি এলে তা দেখে আদেশ দেবেন। তবে এ সপ্তাহে নথি আসার কোন সম্ভাবনা নেই।

বিশেষ জজ আদালত ৫ এর বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) মোকাররম হোসেন জানান, নথি কবে পাঠানো হবে সে বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে আমরা মূল নথি উচ্চ আদালতে পাঠিয়ে দেবো। খালেদা জিয়ার আইনজীবিরা বলছেন,খালেদা জিয়া যদি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনও পান তারপরও তিনি কারাগার থেকে শিগগিরই মুক্তি পাবেন কি না তা বলা কঠিন। কেননা তার আটক দীর্ঘায়িত করতে এসব মামলার মধ্যে দুই একটি মামলায় আদালতের নির্দেশনা নিয়ে শ্যেন অ্যারেস্টও দেখানো হতে পারে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি ছাড়াও আরও ৩৫ মামলা রয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষনার সম্ভাবনা রয়েছে শিগগির। আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে এই মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষ । এই মামলায় সাজা হলে আবারো কারাগারে যেতে হবে বেগম জিয়াকে।

এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেছেন, খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ করে রাখতে চায় সরকার। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়ার জামিন হতে পারতো। জামিন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। এখন বলা হচ্ছে ১৫ দিনের মধ্যে নথি পাঠাও। এদিন পাঠাও, সেদিন পাঠাও- এটা নীল নকশারই অংশ। তাকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। এই উদ্দেশ্য নিয়েই ক্ষমতাসীনরা মামলাগুলো সাজাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপি শুধু হতাশ নয়, ক্ষুব্ধও হয়েছে।

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘নিজের আইনজীবীদের ভুলের কারণে খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আইনি প্রক্রিয়ায় লড়তে পারতেন। কিন্তু তারা সেটি না করে আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে এসে সরকারকে দোষারোপ করা শুরু করেছেন। তাদের ভুলের কারণেই খালেদা জিয়া আজ কারাগারে।

গতকাল এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন,বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীর সংখ্যা অত্যাধিক এবং তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আবার তারা এতিমের টাকা আত্মসাতের কথা শুনলে ক্ষেপে যান। এটা পেশাদারিত্ব নয়। এসবের প্রভাব পড়েছে জামিনের বিষয়ে আদেশে। বিএনপির আইনজীবীরা তাদের ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্রপক্ষের ওপর চাপাতে চাইছেন।

এটর্নি জেনারেল বলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাদের ব্যর্থতার দায় আমাদের (রাষ্ট্রপক্ষ) ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কেন? এটা দুঃখজনক।‘খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে আমি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিইনি। আমি আদালতে আইনি যুক্তিতে কথা বলেছি।’ মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি লক্ষ্য করেছি এ মামলার শুনানির সময় আইনজীবীদের মধ্যে কো-অপারেশনের (সমন্বয়) অভাব ছিল। একটি মামলায় এতো আইনজীবী থাকলে কো-অপারেশনের অভাব হয়।’

‘আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য দিয়েছেন, আমরাও বক্তব্য দিয়েছি। এখন আদালত মনে করলে তাকে জামিন দিতেও পারেন। তাদের আইনজীবীরা শুধু শুধু আমাদের দোষারোপ করছেন।’ মাহবুবে আলম বলেন, তিনি আশা করছেন খালেদা জিয়া ও অন্য আসামিদের দণ্ড আপিলেও বহাল থাকবে।

এটর্নী জেনারেল গতকাল বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এবং আইনমন্ত্রী মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে একথা বলেন।

এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আইনমন্ত্রী এবং এটর্নি জেনারেলের বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে বলেছেন,’খালেদা জিয়া আইনজীবীদের ভুলে কারাগারে আছেন’-বলে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করে সরকার আবারও প্রমাণ করেছে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সরকারের নির্দেশের বাইরে কিছু চলে না। বিচার প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রনে চলছে বিচার।

খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন গতকাল বলেছেন, এই সরকার খালেদা জিয়াকে সহসাই মুক্ত হতে দেবে না, এটা সরকারের দূরভিসন্ধি। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নাই। আমরা আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা সমন্বিতভাবেই সব কাজ করছি। আমরা চাই খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে তারা (সরকার) কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না।’ তিনি বলেন,খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে সরকার অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার দৃষ্টিতে এই অপপ্রচারের পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, খালেদা জিয়া যেন আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হতে না পারেন; দ্বিতীয়ত, আইনজীবীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং তৃতীয়ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের প্রতি মানুষের বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করা। গতকাল আইনজীবী সমিতি ভবনের সভাপতির কক্ষে আয়েজিত সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল এসব কথা বলেন।

এদিকে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনের নামে কোন খেলা বা প্রহসনে যাবেনা। খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচন এদেশে হবে না। জনগন হতে দিবে না। ইত্তেফাক