খােলা বাজার২৪।বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১৮: স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মহান শহীদ কমরেড তাজুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, শহীদ কমরেড তাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে ব্যক্তিগত ভোগ বিলাস পরিত্যাগ করে এদেশের শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির জন্য নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। মজুরি শ্রমিক হিসেবে আদমজী পাটকলে শ্রমিকদের সংঘটিত করেছিলেন। এরশাদ স্বৈরাচারের দোসররা তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। কমরেড তাজুল নিজের মতাদর্শগত চেতনায় এবং পার্টির নির্দেশে স্বৈরাচারবিরোধী হরতাল সফল করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু এক মহান মৃত্যু। কিন্তু তাঁর জীবন সংগ্রাম আরো মহান।
৩৪তম শহীদ তাজুল দিবসে আজ ১ মার্চ মুক্তিভবনের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদেনের পর অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কমরেড সেলিম এসব কথা বলেন। আরো বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মো. শাহ আলম। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক জলি তালুকদার ও শ্রমিকনেতা আসলাম খান।
কমরেড সেলিম আরো বলেন, কমরেড তাজুলের আত্মদান আজও প্রাসঙ্গিক। তাজুলের মত এক ঝাঁক শিক্ষিত তরুণ নিজের ব্যক্তিগত জীবন তুচ্ছ করে সমষ্টির মুক্তির জন্যে ঝাপিয়ে পরবে এটাই যুগের দাবি। একটা শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লড়াইকে এগিয়ে নিতে তিনি তরুণ সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
কমরেড মো. শাহ আলম বলেন, কমরেড তাজুল শোষকশ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। আজকে মালিকদের শ্রমিক শোষণের নির্মমতা অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তিনি কমরেড তাজুলের ন্যায় মালিকশ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পার্টি সদস্য-সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান।
শহীদ তাজুল স্মৃতি বেদিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন
বিভিন্ন দল, সংগঠনের পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের মধ্য দিয়ে শহীদ তাজুলের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদি ফুলে ফুলে ভরে যায়। আজ সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। প্রথমে সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজেকুজ্জামান রতনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), আনিসুর রহমান মল্লিকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, শফিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), পার্থ সারথি চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), অ্যাড. এস এম এ সবুরের নেতৃত্বে ঐক্য ন্যাপ, আইয়ুব খান ফারুকের নেতৃত্বে গণফোরাম, স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতৃবৃন্দের পক্ষে শফি আহমেদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি), জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশ, জাতীয় শ্রমিক জোট, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ট্যানারি শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস্ শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, হকার্স ইউনিয়ন, প্রাইভেট কার ড্রাইভার্স ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন, সিপিবি’র নারী সেল, সিপিবি-ঢাকা কমিটি ও শাখাসমূহ, বিশেষ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী, সাপ্তাহিক একতাসহ বিভিন্ন দল, সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
উল্লেখ্য, কমরেড তাজুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পাঠ শেষে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সিদ্ধান্ত অনুসারে শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির সংগ্রামকে অগ্রসর করার মহান ব্রত নিয়ে আদমজী মিলে বদলি শ্রমিকের চাকরি নেন। আদমজীতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তোলার কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন সিপিবি’র আদমজী শাখার সম্পাদক ও আদমজী মজদুর ট্রেড ইউনিয়নের নেতা।
১৯৮৪ সালের ১ মার্চ দেশব্যাপী আহূত শিল্প ধর্মঘট ও হরতালের সমর্থনে আগের দিন মধ্যরাতে আদমজী জুটমিল এলাকায় কমরেড তাজুলের নেতৃত্বে শ্রমিকরা প্রচার মিছিল বের করলে, তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের গু-াবাহিনীর হামলায় কমরেড তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। ১ মার্চ ভোরবেলা গুরুতর আহত অবস্থায় কমরেড তাজুলকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।