খােলা বাজার২৪। রোববার, ০৪ মার্চ, ২০১৮: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান অহিংস আন্দোলন তৃণমূলের ওর্য়াড পর্যায়ে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবে বিএনপি। যাতে করে দেশের একেবারেই প্রত্যন্তঞ্চলের সাধারণ মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা ও বর্তমান সরকারের নানা দুর্নীতির বিষয়ে অবহিত হতে পারে। এসব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে লিফলেট, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নেওয়া হবে গণস্বাক্ষর আর গ্রাম পর্যায় থেকে উঠান বৈঠক, মানুষকে অবহিতকরণসহ উপজেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সরকারের নানা কর্মকান্ডের সমালোচনা করে জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
দলটির নীতিনির্ধারকরা দেখেছেন, খালেদা জিয়ার কারাবাসের পর থেকে দলের পক্ষ থেকে যে অহিংষ কর্মসূচি ধাপে ধাপে এবং ধারাবাহিকভাবে দেওয়া হচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষসহ রাজনীতি ও কূটনৈতিক পর্যায়ে এবং দেশ বিদেশে প্রশংশিত হচ্ছে। তারা মনে করছেন এসব কর্মসূচিতে সরকার যেমন বাধা দেওয়ার পথ খুজে পাচ্ছে না অন্যদিকে কর্মসূচিগুলো সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।
তাই খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চলতি বছরে জাতীয় নির্বাচন এবং বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে রেখে নতুন নতুন কৌশল নির্ধারণে দলের নীতিনির্ধারকরা একক ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে দলের দায়িত্বশীল নেতা, মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই আন্দোলনের নয়া কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিকালে গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, গণস্বাক্ষর, লিফলেট ও জনসভার মাধ্যমে বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। প্রতিটি ঘরে ঘরে খালেদা মুক্তি আওয়াজ তুলে ধরবে বিএনপি। বিভাগীয় শহরে জনসভা বাস্তবায়ন। রাজধানীতে বৃহৎ জনসভা। জেলা ও উপজেলায় ও এ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জনসম্পৃক্তা বাড়াতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ড আলোচনা সভা ও বিভিন্ন পেশাজীবিদের সঙ্গে মতবিনিময় করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এ বেঠকে। আর উপজেলা সমাবেশের আয়োজন করবে জেলার স্থানীয় বিএনপি। এছাড়াও বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে ৭ বিভাগে জনসভার পাশাপাশি দেশে বড় বড় জেলাগুলোতে জনসভা করবে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই লড়বে বিএনপি। বৈঠক শেষে খুলনার জনসভায় খালেদা জিয়ার সাজা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য জালিয়াতি একটা কাগজের ওপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র রাজনীতি থেকে দূরে সরানো জন্য, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য তাকে সাজা দিয়েছেন। তিনি বলেন, তারা জানেন যে, তাদের পক্ষে কখনো একটা সুষ্ঠু নির্বাচন তাদের পক্ষে নেয়া সম্ভব হবে না। সেজন্য এটা (সাজা) দিয়েছেন।
বিকাল সাড়ে ৪টায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের যৌথ বৈঠক করেন। বৈঠকে খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্ব ও চলমান কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও জানান মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রীর জামিন না হওয়ায় নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নেত্রী মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। পরবর্তি কর্মসূচি আমরা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসমাবেশেসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসুর মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকৃ, শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মীর নাসির, রুহুল আলম চৌধুরী, আমিনুল হক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে উকিল আবদুস সাত্তার, এজে মোজাম্মদ আলী, লুৎফর রহমান খান আজাদ, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, মনিরুল হক চৌধুরী, মশিউর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, মাহবুবুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, জয়নাল আবেদিন ভিপি, আবদুর রশিদ, জিয়াউর রহমান খান, তাজমেরী ইসলাম, সাহিদা রফিক, গোলাম আকবর খন্দকার, আবদুল হাই, কবীর মুরাদ, ফজলুল রহমান, আতাউর রহমান ঢালী, সিরাজুল ইসলাম, সুকোমল বড়ুয়া, আবদুল কাইয়ুম, বিজন কান্তি সরকার, তৈমুর আলম খন্দকার, মান্নান তালুকদার, অধ্যাপক আব্দুল বায়েস ভুঁইয়া, ময়নুল ইসলাম শান্ত, মোহাম্মদ শাহজাদা মিয়া, এসএম ফজলুল হক, আবদুল কুদ্দুস, মামুন আহমেদ, ফরহাদ হালিম ডোনার, মুক্তাদির হোসেন, শামসুল আলম, আবদুল হাই শিকদার যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ ছিলের। প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী ও সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুও ছিলেন বৈঠকে।