খােলা বাজার২৪। সোমবার, ০৫ মার্চ, ২০১৮ : বুধবার ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল ভাঙড় বইমেলার শেষদিন। এদিন সন্ধ্যায় দক্ষ প্রশাসক ও কথাসাহিত্যিক ড. হুমায়ুন কবীরকে এবং ভাঙড়ের ভূমিপুত্র কবি ও উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদকে সম্মাননা প্রদান করল ভাঙড় বইমেলা কমিটি। এদিন ড. হুমায়ুন কবীর ও ফারুক আহমেদকে ভাঙড় থানার ওসি অশোকতরু মুখোপাধ্যায় আর ভাঙড় বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক ও বিডিও সৌগত পাত্র ব্যাচ ও উত্তরীয় পরিয়ে, মেমেন্টো আর বইমেলার স্মরণিকা হাতে তুলে দিয়ে সম্মানিত করেন। ড. হুমায়ুন কবীর সাহেব দুর্দান্ত বক্তব্য রাখেন এবং ভাঙড় বইমেলাতে এতো মানুষ এসেছেন দেখে তিনি অভিভূত হন। ভাঙড়ের সাংস্কৃতিক সংস্থা কলামন্থন একাডেমী অফ ফাইন আর্টসের নৃত্য পরিবেশন দেখে মুগ্ধ হন এবং প্রশংসা করেন।
ফারুক আহমেদ বললেন, বইমেলা কমিটির সমস্ত সদস্যদের এবং ভাঙড়বাসীকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, "এবছর বইমেলার আয়োজন সার্থক হয়েছে। এবার থেকে ভাঙড়ের প্রশাসন প্রতিবছর বইমেলার আয়োজন করবে। আশা রাখি। ভাঙড় নিয়ে ভ্রান্ত ধারনা দূর করতে বইমেলার এই শুভ বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক গোটা বিশ্বে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড. হুমায়ুন কবীর-এর লেখা উপন্যাস "ফাইনাল গাজি" কলকাতা বইমেলাতে উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বইটির প্রকাশক আনন্দ পাবলিশার। বইটি পড়ার আবেদন রইল আপাদের কাছে। আর ড. হুমায়ুন কবীর পরিচালিত সিনেমা "আলেয়া" ঈদের আগের দিন রিলিজ করছে। পারলে দেখবেন। ভাল লাগবে। আমাদের পাশের এলাকা বসিরহাটের ঘটনা নিয়ে তাঁর লেখা গল্প "আলেয়া"কে সিনেমা বানিয়েছেন তিনি।"
ভাঙড় বইমেলার শুভ উদ্বোধন করেছিলেন কথা-সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ২৫ ফেব্রুয়ারি, রবিবার। শুভ উদ্বোধনের পর বইমেলার ‘স্মরণিকা” প্রকাশ করেছিলেন কথা-সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বইমেলা চলল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ২ টো থেকে রাত্রি ৮ টা পর্যন্ত চলেছিল ভাঙড় বইমেলা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল চাঁদের হাট।
ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের মাঠে শুরু হয়েছিল ভাঙড় বইমেলা।
ভাঙড় বইমেলার মূল মঞ্চে প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি চলেছিল আলোচনাসভা। অংশ নিয়েছিলেন কবি, সাহিত্যিক ও গবেষকবৃন্দ।
বইপ্রেমীদের জন্য এই মহা আয়োজন করেছিলেন ভাঙড় বইমেলা কমিটি।
বইমেলা সফল করতে বইমেলা কমিটির সদস্যরা বেশ তৎপর ছিলেন। বহু প্রকাশনী অংশ নিয়েছিল এই ভাঙড় বইমেলাতে। এক অন্য ভাঙড়কে আবিষ্কার করেছিলেন বইমেলায় আগত বইপ্রেমীরা। বইমেলার উদ্যোগ নেওয়া কর্তারা আশা প্রকাশ করেছিলেন, এই বছর প্রথম ভাঙড় বইমেলা সবার মনে দাগ কাটবেই। এই আশা পূর্ণ হল।
ভাঙড়ে বইমেলাতে, লোক হবে তো? বই বিক্রি হবে তো? চার দিনের বইমেলার উদ্বোধন করার আগ পর্যন্ত এমনই প্রশ্ন শোনা যাচ্ছিল আয়োজনকারীদের মধ্যে এবং প্রকাশক ও ষ্টলের কর্মীদের একাংশের মধ্যে। বুধবার সেই ভাঙড় বইমেলায় গিয়ে দেখা গেলো কথা বলার সময় নেই বিক্রেতাদের। সকলেই ব্যস্ত ছিলেন ক্রেতাদের চাহিদা মতন বই দেখাতে। তিল ধারনের জায়গা ছিল না মেলা প্রাঙ্গণে। বইমেলা উপলক্ষে ভিড়ে জমজমাট ভাঙড় কলেজ রোড থেকে কলেজ ময়দান।
বুধবার ভাঙড় বইমেলার সমাপ্তি হয়। সমাপ্তির দিনে উপচে পড়া ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে বইমেলার ময়দান। তার উপর কচিকাচাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আগত বইপ্রেমীদের মন ছুঁয়ে যায়। ভাঙড় বইমেলা কমিটির প্রথম বইমেলা সফল বলে দাবি করেছেন উদ্যোক্তরা। বিক্রেতাদের অধিকাংশের বক্তব্য, বইমেলার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনের পর্যাপ্ত ভিড় সব আক্ষেপ মুছে গিয়েছে।
২৫ তারিখ মেলার উদ্বোধন করেছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন, নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ি, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান, জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও।
মেলা কমিটির সভাপতি তথা ভাঙড় কলেজের অধ্যক্ষ ড.বীরবিক্রম রায়, সহ সভাপতি দিনোবন্ধু পাল, সম্পাদক ইউসুফ আলী, আহ্বায়ক ভাঙড় ১ নং ব্লকের বিডিও সৌগত পাত্র, ভাঙড় থানার আধিকারিক ও ভাঙড় বইমেলার সচিব অশোকতরু মুখার্জি, বইমেলা কমিটির সহ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক ফিরোজ আহমেদ ও মুন্সি আনসারুজ্জামান প্রমুখ।
দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, ভাঙড়ের বিধায়ক তথা মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের সদস্য কাইজার আহমেদ, বিধায়ক প্রতিনিধি নান্নু হোসেন, পূর্তের কর্মাধ্যক্ষ আবু তাহের সর্দার, অহিদুল ইসলাম ও ছাত্র নেতা বাহারুল ইসলাম প্রমুখ।
বইমেলা প্রাঙ্গণ এদিন ঘুরে দেখা গেলো ভাঙড় বইমেলায় বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভীড়, আড্ডা, সেলফি তোলার হিড়িক এবং চার দিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে সাহিত্যিক, কবিদের পাশাপাশি মন্ত্রী ও গুনিজনদের উপস্থিতি বিশেষ লক্ষ্য করা গিয়েছিল।
কৌশিক সর্দার বইমেলা কমিটির কার্য়কারী সাধারণ সম্পাদক বলছিলেন, দ্বিতীয় দিন নাঠ্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্র এসেছিলেন।
ফিল্ম আর ড্যান্স ডিরেক্টর সুমন দাস এর কলামন্থন একাডেমী অফ ফাইন আর্টসের টিম বইমেলা নিয়ে একটি থিম সং তেরী করে। ভাঙড় হাইস্কুলে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের দিন থিম সং এর উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেছিলেন এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা।
বইমেলা উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়। বইমেলা কমিটির পরিচালনায় এবং ভাঙড়ের বিশিষ্ট সাংবাদিক ফিরোজ আহমেদ-এর দক্ষতায় স্মরণিকা টি নিপুণ ভাবে প্রকাশিত হয়।
এলাকার বিশিষ্টদের মধ্যে স্মরণিকায় একটি সম্প্রীতির উপর নিবন্ধ লিখেছেন ফারুক আহমেদ। যা দাগ কাটল সবার মনে।
দূরদর্শন খ্যাত বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী সুপর্ণা মজুমদার তিনদিন ব্যাপী ভাঙড় বইমেলার মঞ্চে সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন। ২৫-২৮ তারিখ পর্য়ন্ত ভাঙড় কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নিরুপম আচার্য ও অভিক পালও সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন। প্রচারে ছিলেন মানস সর্দার।
ভাঙড় বইমেলাকে সফল করতে অনেকেই অফুরন্ত সময় দিয়ে বইমেলার আয়োজন সার্থক করেছেন। কয়েকজনের নাম করতেই হয় তাঁরা হলেন ভাঙড়ের বিশিষ্ট সমাজসেবী জাহাঙ্গীর আলম। ভাঙড়ের ছেলেদের মধ্যে কুন্তল পাল, কৃষ্ণ কর্মকার, শুভেন্দু পাল, মাসুম বিল্লা, পিন্টু প্রামাণিক, সত্যজিৎ মহালনবিশ ও আরও অনেকই আছেন। আমিরুল ইসলাম সোশ্যাল মিডিয়াতে জোরদার প্রচার চালান তিনি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের গুরুদায়িত্ব সামলেছেন ভাঙড় মুন্সী আনসাররুল জামান।
স্কুল শিক্ষিকা তুহিনা পারভিন বলছিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাতের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলটায় খুবই ভিড় হয়েছে।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা একটি ষ্টল দেয় সেখানে হাতের কাজ করা বিভিন্ন জিনিসপত্র বিশেষ নজর কাড়ে। এছাড়াও কিছু খাবারের স্টল হয়েছিল। সব মিলে ভাঙড় বইমেলাকে সার্থক করল ভাঙড়ের বিডিও, ভাঙড় কলেজের অধ্যক্ষ, ভাঙড় থানার ওসি সহ ভাঙড় হাই স্কুল, ভাঙড় কলেজ ও ভাঙড়ের আাসেপাসে সমস্ত স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবার নজর কাড়ে।