Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। সোমবার, ০৫ মার্চ, ২০১৮ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাৎ পেতে সমগ্র বিশ্ব উদগ্রীব থাকে। অথচ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ ছাড়াই খোদ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা দেশে ফিরলেন! এ কেমন আভাস দিয়ে গেলেন ট্রাম্প উপদেষ্টা লিসা কার্টিস? এ লজ্জা কাঁদের? অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে কি এভাবেই প্রত্যাখ্যান করলো লিসা কার্টিস কিংবা আগামীর নির্বাচনের আগে কিসের পূর্বাভাস দিলেন? প্রশ্ন জনতার!

দৈনিক মানবজমিনঃ অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে জানালেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ট্রাম্পের উপদেষ্টা লিসা কার্টিসের জিজ্ঞাসার জবাবে এভাবেই তাকে আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী। মার্কিন উপদেষ্টার সঙ্গে সহমত পোষণ করে মাহমুদ আলী এ-ও জানান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে হবে আগামী নির্বাচন এবং সেটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে আগাম আমন্ত্রণও জানান।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বার্র্তা দিয়ে সন্ধ্যায় লিসা কার্টিস ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে তার সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। সেখানে নির্বাচন নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, ঢাকা সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও লিসা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এদিকে কূটনৈতিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় বিএনপি মহাসচিবসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠক করেছেন তিনি। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাবাসসহ সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র মতে, লিসা ঢাকায় আসার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের আকাঙক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন। দূতাবাসের তরফে তার অ্যাপয়েন্টও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই বৈঠক হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া যায়নি বলে বৈঠকটি হয়নি। কিন্তু তার দুজন উপদেষ্টা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আমার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সফরটি খুব ভালো হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, দুই দেশের সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই আমাদের আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শনিবার রাতে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে সব দলের অংশগ্রহণে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা লিসা কার্টিস।

রাতে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলের ওই বৈঠকে উপদেষ্টা লিসা কার্টিস নিজে থেকেই নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলেন। বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং সহিংসতামুক্ত নির্বাচন দেখতে চায়। বাংলাদেশের স্বার্থেই এমন নির্বাচন হতে হবে। বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটও এ নিয়ে কথা বলেন। রোববার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু।

এ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনাও হয়। এর পরপরই লিসা কার্টিস বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ তোলেন। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ নিয়েই ছিল তার যত জিজ্ঞাসা। তিনি সব দলের অংশগ্রহণসহ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কথা জানান। আগামী নির্বাচন অবাধ পরিবেশে অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়েও তাগিদ দেন। জবাবে মন্ত্রী এ নিয়ে সরকারের ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়ে তাকে আশ্বস্ত করেন। রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের আরো জোরালো ভূমিকা চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী: এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরো জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সিনিয়র ডিরেক্টর লিসা কার্টিসের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ আহ্বান জানান। মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার ওপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দেন। এ সময় লিসা কার্টিস জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি আলোচনার অংশ।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের ওপর তারা চাপ অব্যাহত রাখবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল বিষয়ে লিসা কার্টিস পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, তারা এই অঞ্চলের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আরো গভীর সম্পর্ক রাখতে চায়। বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসন বিষয়ে লিসা জানান, তিনি ওয়াশিংটনের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি জানাবেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক: ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা লিসা কার্টিস।

গতকাল বিকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে ওই বৈঠক হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন ওই বৈঠকে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। বিএনপি এবং মার্কিন দূতাবাস সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ওই বৈঠকটি ছিল পূর্ব-নির্ধারিত। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাবাসসহ সম-সাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপির তরফে বেগম খালেদা জিয়াসহ সারা দেশে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান ‘হয়রানিমূলক’ মামলা সংক্রান্ত ৪টি ডকুমেন্ট বই হস্তান্তর করা হয়। স্মরণ করা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন জেলে যাওয়ার পরপর দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা।

সেখানে দলের যুগ্ম মাহসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক হয় তার। গত শুক্রবার তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসেন লিসা কার্টিস। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিসা কার্টিস সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা। সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক হয় তার। মন্ত্রী-সচিবের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের তাগিদ দেন তিনি। উল্লেখ্য, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির নেতারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্ববর্তী পরিবেশ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কূটনীতিক তথা বিশ্বসম্প্রদায়কে অবহিত করছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে সরকারি দলের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র সঙ্কুচিত করা এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে দলটির। সংবাদ উৎসঃ দৈনিক মানবজমিন