Mon. May 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।বৃহস্পতিবার,৮ মার্চ, ২০১৮:  সুপ্রিয় পাঠকগণ, শিরোনাম দেখেই হয়তো মনে ধাঁ ধাঁ লেগে গেল। হ্যাঁ এখানে এমন এক নেত্রীর বা দেশমাতৃর কথা বলা হচ্ছে যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী, যিনি এখনো পর্যন্ত জাতীয় সংসদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিরোধীদলীয় নেত্রী-যিনি এ পর্যন্ত যতগুলো সংসদীয় নির্বাচনী আসনে নির্বাচন করেছেন সবগুলোতে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন-(তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র সেই নেত্রী-যার একাধিক সংসদীয় আসনে একসাথে নির্বাচন করেও কোন পরাজয় নেই,) তিনি সংসদীয় নির্বাচনে সবচেয়ে বেশী ভোট পেয়েও নির্বাচিত হয়েছেন (বগুড়া-৬ থেকে ২০০১ এর নির্বাচনে), তিনি এতটাই নন্দিত নেত্রী যে তার নামের পূর্বে থাকে দেশনেত্রী-দেশমাতৃ। যার স্বামী এই দেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ এবং নিজে (জিয়াউর রহমান) এক নং সেক্টর কমান্ডরের কমান্ডার ও সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা-পরে জেড ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়ে যুদ্ধকে আরো বেগমান করে দেশের স্বাধীনতা আনেন, যার স্বামী দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশের বৃহত্তম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা, যার স্বামী স্ব-নির্ভর ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি। এবং তিনি নিজেও (বেগম খালেদা জিয়া) বাংলাদেশে ক্ষমতায় থেকে নারী শিক্ষার ভূমিকায় অগ্রগামীর ভূমিকা পালন করছেন এবং দেশ স্বাধীনে তার নিজেরও ভূমিকা আছে- তিনি বাংলাদেশের আপোসহীন এক নেত্রী দেশনেত্রী-দেশমাতৃ বেগম খালেদা জিয়া। যিনি তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে আজ অবধি মিথ্যা-হয়রানীমূলক মামলা-হামলা, হুলিয়া, জেল-জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন, অন্যায়, অনিয়ম, অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কাছে কখনো মাথা নত করেন নি বা আপেস করে চলেননি। তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে ঔসবের সাথে সর্বদাই ছিলেন আপোসহীন-খাঁটি দেশপ্রেমিক এক নেত্রী। তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন-তখন তিনি তার স্বামীর পাশে থেকে মনোবল ও শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশকে বিশ্বে আলাদা একটা ভাব-মর্যাদায় নিয়ে গিয়েছিল এবং পরবর্তীতে তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) ক্ষমতায় এসে সে ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন।
তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ শে মে মৃত্যুর পর জাতীয়তাবাদী দলের হাল ধরেন তিনি। তিনি যখন দলের হাল ধরেন তখন ক্ষমতায় থাকেন স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদ। তখন গণতন্ত্র ছিল না। স্বৈারচারের বিরুদ্ধে জেল-জুলুম উপেক্ষা করে দীর্ঘ নয় বছর আন্দোলন সংগ্রাম করে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনেন নব্বই এর দশকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি হন প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। অপরদিকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ স্বৈরাচার এরশাদের সাথে আতাত করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে বিরোধী দলে ছিলেন-যা মনেহয় বর্তমানেরই এপিঠ-ওপিঠ। কেননা বর্তমানে পাতানো-সাজানো, ভোটারবিহীন-প্রার্থীবিহীন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আর এরশাদ এর দল জাতীয় পার্টি অদ্ভূত এক বিরোধী দলে। অদ্ভূত এই কারণে যে, তার দলের কয়েকজন মন্ত্রীও রয়েছেন বর্তমান সরকারে।
[[বি.দ্র. আগের একটি লেখায় লেখকের এরশাদ বিরোধী আন্দোলন বিস্তারিত লেখা আছে, তাই এখানে আর তুলে ধরা হয় নি।]]]

বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসলে আওয়ামীলীগ জামায়াতকে সাথে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর জন্য আন্দোলন করে এবং লাগাতর ১৭৩ দিন হরতাল করেন এবং জান-মালের ক্ষতি করতে থাকেন। তখন সরকার প্রধান বেগম খালেদা জিয়া মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য গণমানুষকে সম্মান জানিয়ে দেশ-জাতির কল্যাণে সংসদে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ বিল পাশ করে নির্বাচন দেন। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় আসে। বিএনপি যখন সংবিধান অনুয়ায়ী সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের কাছে ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার প্রস্তুতি নেয় তখন আওয়ামীলীগ তালবাহানা করতে থাকে। ফলে সংবিধানের অন্য অপশন অনুযায়ী ক্ষমতা ছাড়েন রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে। আওয়ামীলীগ এতেও তাল-বাহানা করেন এবং ১/১১ সরকার নিয়ে আসেন ও এ প্রসঙ্গে বলেন ‘এ সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল’। আওয়ামীলীগের সেই ফসল শেখ হাসিনার নামে যুক্তিযুক্তভাবে একাধিক দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন। তখন আওয়ামীলীগ থেকে জোরালো ভাবে বলা হয় বেগম খালেদা জিযার নামে মামলা হয় না কেন ? এমন অবস্থায় কোন অপরাধ না পেয়েও বেগম খালেদা জিয়ার নামে (কথিত আছে) সমতা রক্ষার্থে ৫ টি মামলা দেওয়া হয়। সে সময় শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া উভয়েই সাবজেলে বন্দী ছিলেন। শেখ হাসিনা ছাড়া সেময় তার কোন আত্মীয় অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে, বোন বা বোনের ছেলে-মেয়ে কেউ জেলে ছিলেন না কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার দুই ছেলেকে বিনা অপরাধে আটক করে জেলে রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন-“তিনি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার আহবান জানিয়ে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে বলেন, “আমার প্রিয় দেশবাসিকে বিনীতভাবে জানাতে চাই, আমি ও আমার পরিবার সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। মহামান্য আদালতকে সবিনয়ে জানাতে চাই, আমরা সর্ম্পূণ নির্দোষ। তাই মিথ্যা মামলা থেকে সুবিচার চাই। শুধু আমি নই, যে কোন নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক।”
 
এরপর শেখ হাসিনা ১/১১ সরকারের সময় বন্দী থেকে চিকিৎসার নামে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে লন্ডনে যান (অনেকটা ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন দ্বয়ের সাথে আতাত করে)। তখন দেশে আওয়ামীলীগ থেকে ধোঁয়া তোলা হয় আমাদের নেত্রীকে পাঠানো হলো এবার বিএনপি নেত্রীকেও বিদেশে পাঠাতে হবে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ় মনোভাবের কারণে ভিসা-পার্সপোর্ট রেডি থাকা সত্ত্বেও সেদিন তাকে বিদেশে পাঠাতে পারেন নাই তৎকালীন শাসক। এতে তার প্রিয় সন্তানদের উপর নেমে আসে অমানবিক-অমানুষিক নির্যাতন, যা জীবনহরণকারী। সে দিনের সেই নির্যাতনে অনেকেই ধরে নিয়েছিল জনাব তারেক রহমান বুঝি আর বাঁচবেন না।…..এ রকম বর্বরতম নির্যাতন সত্ত্বেও তখনও স্নেহময়ী-মমতাময়ী এক মা বেগম খালেদা জিয়া দেশমাতৃকায় প্রবল প্রেমে কোন আপোস না করে দৃঢ় মনোভাব নিয়ে খাঁটি দেশ প্রেমিকের মতো বলেন “আমি দেশ চাই। এ দেশ আমার মা। এ দেশে আমার স্বামীর ঘর। আমার মা আর এ ঘর ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। এ দেশের জনগণের মাঝে থেকে সুযোগ পেলে তাদের সেবা করে যেতে চাই। দেশের বাহিরে আমার কোন ঠিকানা নাই”।
শুধু তাই নয় তারপর ১/১১ সরকার এর মাইনাস টু ফর্মূলা শেষ পর্যন্ত আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে না যাওয়ার কারণে সফল হয় না। প্রিয় পাঠক একবার ভাবুনতো নিজের পেটের সন্তানদের উপর অমানবিক, জীবন হরণকারী নির্যাতন সত্বেও দেশমাতৃকায় দেশ ও দেশের জনগণের প্রতি কতো দেশপ্রেম ও মাতৃকল্যাণকামী হলে এমন কথা বলতে পারেন। এমন নিষ্ঠুর নির্যাতন সত্ত্বেও সে সময় তিনি অন্যায়, অনিয়ম, অগণতন্ত্রের কাছে মাথা নত না করে-কোন আপোস না করে একটা অগণতান্ত্রিক সরকারের চেয়ে নিম্নমানের হলেও একটি গণতান্ত্রিক সরকার চেয়েছিলেন। আর তাই ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অনেকের মতে সে নির্বাচনে গোপন আতাতের কারণে তৎকালীন বিজয়ী দল নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছিলেন। অতঃপর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় বসে একর পর এক বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দলের নেতৃবৃন্দের উপর নির্যাতন-অত্যাচার চালায়। বেগম খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ী থেকে এক কাপড়ে বের করে দেয় আওয়ামীজোট সরকার-যে বাড়ীটি ছিল বেগম খালেদা জিয়ার ৪০ বছরের সংসার জীবনের বহু স্মৃতি বিজরিত। 
আওয়ামী জোট সরকারের সময় বিডিআর হত্যাকা-, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, হলর্মাক-সোনালী ব্যাংক কেলেংকারী, ধর্ষণ, অপহরণ, গুম, নারায়ণগঞ্জে সাতখুনসহ একরে পর এক যখন অঘটন ঘটে তখন বেগম খালেদা জিয়া দেশমাতৃকার জনগণের জন্য তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে থাকেন এবং তার জনপ্রিয়তা দেশে ও দেশের বাহিরে প্রবল বেগে বেড়ে যেতে থাকে। এতে শাসকগোষ্ঠী ভীত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া যেন নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আর আসতে না পারেন তার জন্য আওয়ামী জোট সরকার সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেন-যদিও সেখানে এক বিধান ছিল যে পরপর দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যায়। এ বিষয়ে আন্দোলন সংগ্রাম যখন তুঙ্গে তখন আওয়ামী সরকারের সময় রাজনীতিতে চালু হলো নতুন সংস্কৃতি-গুম, অপহরণ সংস্কৃতি। যা শুধু বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী বা মতাদর্শের লোকজনই হতে থাকে। এখনও পর্যন্ত সরকারী জোটের কেউ গুম বা অপহরেণের শিকার হননি-এতে জনগণের কাছে অনেকটাই পরিস্কার যে, সরকার বা শাসক যদি না-ই বা জড়িত থাকতো তাহলে শুধু বিরোধী দল বা মতাদর্শের লোকজন কেন গুম-অপহরণ হবে। গুম-অপহরণকারীরা নিশ্চয় কোন ভিন গ্রহের এ্যালিয়েন বাহিনী নয়, অবশ্যই তারা এদেশীয় শাসকের দোসর। তা না হলে কেন শুধু বিরোধী দলের বা মতাদর্শের লোকজন শুধু গুম-অপহরণ হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের কাছে উদাহরণ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন এর সাথে কোন দলের লোকজন ও আত্মীয় জড়িত তা প্রকাশ পেয়েছে। তারপরও বিরোধী দলের বা মতাদর্শদের উপর গুম অপহরেণ বা ক্রসফায়ারের নাটক এদেশে অজো চলছে। অথচ সরকারী জোটের শীর্ষ থেকে ফুটপাতের চ্যালা-চামুন্ডরা ‘গড়ার নামে ডিজিটাল বাংলাদেশ-লুটপাট, দুর্নীতি করে করছে শেষ’-তাদের কিছুই হয় না। সাধারণ জনগণ এগুলো দেখে ভয়ে চুপচাপ। এসব বিষয় নিয়ে যখন দেশনেত্রী দেশমাতৃকার টানে সাধারণ জনগণের মাঝে যাচ্ছিলেন তখনই শুরু হয় তার বিরোদ্ধে একর পর এক মামলা ও অত্যাচার নির্যাতন। দেশবাসীর নিশ্চয় মনে আছে ২০১৪ সালের ০৫ ই জানুয়ারীর নির্বাচন-যেখানে জনগণ ভোট দিতে পারেননি-ঘর থেকে সেদিন বের হতে পারেননি আওয়ামী ত্রাসের কারণে। ভোটারবিহীন সে নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে কন্দ্রে কুকুর ঘুমাতে দেখা যায়। সে নির্বাচনে ০৫% ভোটও পরেনি-১৫৪ আসন আগেই কালা-কানুনের মাধ্যমে নেওয়া হয়-যেখানে ১৫০ আসন হলেই ক্ষমতায় যাওয়া যায়;যা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। সেই ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারীতে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বেগম খালেদা জিয়া ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র ডাক দিয়ে যখন তার গুলশানের বাসা থেকে বের হয়ে আসতে থাকেন তখন তার বাসভবনেই একান্ত অনুগ্রহ বিবেকবর্জিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিয়ে পথ রোধ করে দিয়ে আটকে রাখা হয় এবং রাস্তা বালি ও ইটের ট্রাক দিয়ে আটকে রাখা হয়-যা বাংলার ইতিহাসে ভয়াবহ নজিরবিহীন। সাধারণ জনগণ সেই কর্মকা-কে বৃটিশ এর চেয়েও খারাপ বলে অভিহিত করেছেন। 

এরপরও বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার কথায় কিছুটা ছাড় দিয়েছিলেন-কেননা শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন’-কিছুদিনের মধ্যেই সবাইকে নিয়ে সংলাপের মাধ্যমে আরো একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা হবে’। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার সে পথে তো যান নাই-ই বরং বিরোধী দলের উপর দমন-পীড়নের আরো স্ট্রীম রোলার চালান। অপরদিকে বেগম খালেদা জিয়া কোন আপোস না করে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ২০১৫ সালে ০৫ জানুয়ারী গণতন্ত্র হত্যায় ‘কালো দিবস’ এর ডাক দিলে তাকে নেতাকর্মীসহ গুলশান কার্যালয়ে তিন মাস আটকে রাখা হয় এবং বের হয়ে আসতে চাইলে তার উপর পেপার স্প্রে করা হয়-যার মধ্যে মরিচের গুড়াও ছিল। চারপাশের রাস্তা মাটি, বালি, ইটের ১৩ টি ট্রাক দিয়ে আটকে অবরোধ করা হয়, সেখানে কোন নেতাকর্মীরা গেলে আটক করা হয়। এমন সময় এক মর্মান্তিক পাথরসম শোক আসে বেগম খালেদা জিয়া উপর ও বিএনপি’র উপর। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ট পুত্র আরাফাত রহমান কোকো মারা যান শাসকের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মালয়েশিয়াতে। এতবড় শোক সত্ত্বেও দেশমাতৃকায় জনগণের ভোটাধিকার আদায়ে বেগম খালেদা জিয়া কোন আপোস না করলেও তার সেই গুলশান কার্যালয়ে গ্যাস, বিদ্যুত, পানি, নেট লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার খাবারও বন্ধ করে দিয়ে অন্ধকারে বন্দী করে রাখা হয়। ভাবা যায় ডিজিটাল দেশ গড়ার নামে এটা কোন ধরেনের বর্বরতা-যা মধ্যযুগীয় নিষ্ঠুর বর্বরতাকেও হার মানায়। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় বেগম খালেদা জিয়া ভোটারবিহীন, প্রার্থীবিহীন সরকারের সাথে কোন আপোস না করে প্রায় তিনমাস গৃহবন্দীদশা থেকে বের হয়ে এসে জনগণের অধিকার আদায়ে নতুন নতুন কর্মসূচি দিয়ে সোচ্চার হতে থাকেন। অপরদিকে সরকার স্থানীয়সহ সকল নির্বাচনে জবর-দখল, ভয়-ভীতি দেখানো, গোপনে ব্যালট বাক্স ভরানো, জোর করে নিজেদের নির্বাচিত করে নেওয়া অব্যহত রাখেন এবং একের পর এক বেগম খালেদা জিয়াসহ তার দলের নেতাকর্মীদের উপর মামলা-হামলা, জেল-জুলুম-রিমান্ড অব্যহত রাখেন। শাসকের প্রতিহিংসায় বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা, ভূয়া মামলায় সপ্তাহে ৩ দিন করে এমনকি লাগাতর পাঁচ কার্যদিবস তারিখেও মামলায় হাজিরা দিতে হয়। অথচ বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নামে একটি হত্যামামলাসহ ১৫ টি দুর্নীতি-চাঁদাবাজির মামলা ছিল-যা তার অনুগত বিচারপতিদের দ্বারা হাইকোর্টের মাধ্যমে ৯ টি মামলা খারিজ করে নেওয়া হয় আর ৬ টি মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় তুলে নেওয়া হয়। আর বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার শুধু দুর্নীতির মামলায় টাকার পরিমান ছিল প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। 
বিপরীতে সেখানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় করা বেগম খালেদা জিয়ার মিথ্যা, ভূয়া মামলা তুলে নেওয়া তো দুরের কথা বরং তার নামে মিথ্যা অযুহাতে আরো মামলা দিয়ে সংখ্যা ৩৫ টি করা হয়েছে। এবং বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভয়ে শাসক প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তারিখে মিথ্যা-ভূয়া জালনথি ও নীলনক্সায় ভর করে আদালতের মাধ্যমে প্রহসনের রায় দিয়ে সরকার তাকে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো, পরিত্যাক্ত এক কারাগারে রেখেছে-যদিও সেখানে প্রথম কয়েকদিন তিনবারের সাবেক প্রধান মন্ত্রী, ২৩ সংসদীয় আসনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বেগম খালেদা জিয়ার ডিভিশন নিয়ে তালবাহনা করেছে সরকার। আর এখন নি¤œ আদালতে প্রহসনের রায়ের জামিন উচ্চ আদালতে নিতে গেলেও আইন-আদালতের বিভিন্ন খোড়া অযুহাত দেখিয়ে বিলম্বিত করা হচ্ছে।
আর এতে জনগণের কাছে দিবালোকের মতো পরিস্কার যে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, জিঘাংসা ও বেগম খালেদা জিয়ার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার ভয়ে ভীত হয়ে সরকার আদালতের কল-কাঠি নাড়িয়ে প্রহসনের এ রায়ের মাধ্যমে সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখছে। অথচ যে মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে সে মামলার প্রায় দুই কোাটি টাকা আজ ব্যাংকে থেকে থেকে সুদে বেড়ে গিয়ে প্রায় ৬ কোটি টাকা হয়েছে। যেখানে প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনার ১৫ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির কাছে ২ কোটি টাকা(যদিও এ মামলা মিথ্যা,ভূয়া নীল নক্সার অংশ) নগন্য মাত্র। এ টাকা এখনও পর্যন্ত কোন তছরুপ-ই করা হয়নি-কোন খরচও করা হয়নি। এ টাকা আত্মসাৎ তো দুরের কথা বেগম খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কেউ এ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনও করেন নি। এ টাকার সাথে তিনি কোনভাবেই জড়িত ছিলেন না। অথচ ভূয়া, জালনথি ও নীল নক্সার কালো থাবায় বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছ। জনগণ আজ ভাবছে একই বিষয় নিয়ে এই দেশে আজ দুই নীতি। একজনের অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়ার মাত্র ২ কোটি টাকা-যার সাথে তিনি জড়িত নন তবুও তার প্রহসনের বিচারে সাজা হয় আর সেখানে অন্যজনের অর্থাৎ বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার ১৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি-ক্ষমতার প্রকট প্রভাবে খারিজ করে নেওয়া হয়। জনগণের কাছে আজ যেন আশ্চর্য এক সেলুকাস। কেননা জনগণের আজ আর কষ্ট করে ভোট দেওয়া লাগেনা, জানেই না জনগণ যে তার এলাকার প্রার্থী কে-অথচ বিনাভোটে নির্বাচিত হয়ে এমপি হয়ে সরকার গঠন করেছে ক্ষমতাসীনরা। অথচ যিনি দেশমাতৃকার টানে জনগণের ভোটাধিকার, নিরাপত্তা তথা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কোন আপোস না করে অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছেন-তিনি আজ নানাভাবে নির্যাতিত, অত্যাচারিত হয়ে মিথ্যা, ভূয়া মামলায় জাল নথি আর নীল নক্সার মাধ্যমে বহুমূখী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নি¤œ আদালতের প্রহসনের রায়ে সাজাভোগ করছেন-উচ্চ আদালতে যার জামিন বিষয়ে নাটকের মঞ্চায়নের যবনিকা হচ্ছে না। 

……….এতসব নির্যাতন-অত্যাচারের ফলে আজ বেগম খালেদা জিয়া দেশনেত্রী থেকে আপামর জনসাধরণের মা তথা দেশমাতায় পরিণত হয়েছেন। তিনি আজ জনগণের মনের মণিকোঠায় “আপোসহীন নেত্রী, আপোসহীন মা, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মা”য় রূপান্তরিত হয়েছেন। দেশমাতৃকায় জনকল্যাণে গণতন্ত্রের জন্য আপোসহীনভাবে সংগ্রাম করে যাওয়ায় জনগণের কাছে থেকে পাওয়া এ সম্মান, এ রুচিবোধ বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিরল, নজিরবিহীন-যা দেশে এবং বর্হিবিশ্বে জনকল্যাণে গণতন্ত্রের জন্য আপোসহীনতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত এবং আর্দশও বটে, হয়তো ইতিহাসে গণতন্ত্রের জন্য এ সংগ্রাম হবে একদিন আর্দশ মডেল। যেখানে জনগণের কাছ থেকে অন্যরা পায় স্বৈরাচার, রং হেডেট ম্যান-জাতীয় বেঈমান ইত্যাদি খেতাব-সেখানে বেগম খালেদা জিয়া বহুমুখী ষড়যন্ত্র ও নির্যাতন সত্ত্বেও ছিলেন আপোসহীন অনন্য এক নেত্রী বা জননী। তাই তো জনগণ আজ ভাবছে-বেগম খালেদা জিয়া দেশমাতৃকার টানে জনকল্যাণে গণতন্ত্রের জন্য………. আপোসহীন দেশমাতৃ।
মোঃ মিজানুর রহমান-লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।