Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ : নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি বা সহায়ক সরকার ইস্যু থেকে সরে আসছে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অনেকটাই রাজি দলটি। তারপরও নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি না পেলে এবং তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ না পেলে দলটি নির্বাচনে যাবে কি না? এই নিয়ে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত আলোচনা হচ্ছে। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছোট এক অংশ বাদ দিয়ে বেশির ভাগ নেতাকর্মীই নির্বাচনের পক্ষে রয়েছেন।

বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সহায়ক সরকারের দাবি এখন আর দলের প্রধান বিষয় নয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনে যেতে চায়। তবে এক্ষেত্রে দলটির ত্যাগী নেতারা চান, খালেদা জিয়ার জামিন এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা। এছাড়া সংসদে অন্তত পক্ষে প্রধান বিরোধী দলের অবস্থানে যেনো যেতে পারে সেই নিশ্চয়তাও চায় দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, দলের ভেতরের সুবিধাবাদী একটি অংশ চায় না খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিক। অন্যরা চায়, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচন এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব। ওই নেতা বলেন, বিএনপির এই দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও দৃঢ়ভাবে চান, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক এবং সবার অংশগ্রহণের একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান প্রধানমন্ত্রী। তবে আওয়ামী লীগের মধ্য থেকে একটি কুচক্রী মহল নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন চায়।

বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের অনেকের সাথে বিএনপির সিনিয়রদের নেতাদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপির নেতারা আসনের বিষয়ে এসব নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনাও করছেন। খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপিতে দ্বিধা কাজ করছে। তবে সবকিছুর পরেও এবার বিএনপির নেতাকর্মীদের আকুণ্ঠ সমর্থন নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষেই। প্রকাশ্যে দলের শীর্ষ নেতারা খালেদাকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না দাবি তুললেও শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়া না পান তাহলেও দল নির্বাচনে যাবে।

বিএনপির একজন আইনজীবী বলেছেন, গত বুধবার খালেদা জিয়াও কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া নেতাকর্মীদের বলেছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে। তিনি সংঘাতপূর্ণ কর্মসূচি না দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়েও কাজ করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। জোটের বাইরের কয়েকটি দলকেও আসন বাছাই করার তাগিদ দিয়েছে বিএনপি। রাজনৈতিক হিসাব বা সমীকরণ মিললে সংশ্লিষ্ট ওই দলগুলোর সঙ্গেও নির্বাচনী জোট গড়ার আগ্রহ রয়েছে বিএনপির।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছে। কিন্তু সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে। কারণ সরকার জানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে। তিনি বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি দুটোই বিএনপির রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে নির্বাচনে বিএনপিকে দূর্বল করতে। চেয়ারপারসনের নির্দেশ, আমরা আন্দোলন ও নির্বাচন একসঙ্গে চালিয়ে যাব। আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে, জনগণের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কোনো নির্বাচন গ্রহনযোগ্য হবে না।

শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, আন্তর্জাতিক বা যেকোনো চাপের কারণেই হোক শেষ পর্যন্ত সরকার কিছু ছাড় দেবে। জনগণও চায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকার সহনশীল ভূমিকায় থাকবে। এই বার্তা বিএনপির কাছে রয়েছে। ফলে দলটি গতবারের মতো কঠোর অবস্থানে নেই। তারাও এবার নির্বাচনে যেতেই চায়।