খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার , ২০ মার্চ ২০১৮ : গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ সংসদীয় আসনে মনোনয়ন পেতে শক্তিশালী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি ভাবাচ্ছে সব দলকেই। বিগত নির্বাচনগুলোর বিবেচনায় বলা চলে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বামদল বা জামায়াত সবারই এখানে সমান সম্ভাবনা। গত দুই টার্মে আওয়ামী লীগ যেমন এখানে প্রতিনিধিত্ব করছে, একাধিকবার বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়লাভের রেকর্ডও রয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টির পাশাপাশি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও জাসদের রাজনৈতিক কর্মকা-ও বেশ সক্রিয় এখানে। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও বামদলগুলোর নজর জোটবদ্ধ নির্বাচনী কৌশলে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়েছে একাধিক প্রবাসী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারা প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম্য মোড়লদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হলে এ আসনে আওয়ামী লীগ চাইবে হ্যাটট্রিক জয়, বিএনপি চাইবে পুনরুদ্ধার। পাশাপাশি একাধিকবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন চাইবেন ফাঁক দিয়ে গোল দিতে।
প্রবাসী অধ্যুষিত এ আসনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মো. সেলিমউদ্দিন মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে কেন্দ্রের নির্দেশে সেলিমউদ্দিন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলে নাহিদ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে আগামী নির্বাচনে দলীয় কোন্দল বিপদে ফেলতে পারে আওয়ামী লীগকে। প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে এরই মধ্যে শামিল হয়েছেন একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী। তাদের অনেকে প্রয়োজনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ারও আভাস দিয়েছেন।
নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে দুই উপজেলায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছের লোক হিসেবে পরিচিত মো. সরওয়ার হোসেন। প্রচার শুরু করেছেন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ পাপলু। বিগত পৌর নির্বাচনে পরাজিত পাপলু সম্প্রতি এক সভায় যে কোনো মূল্যে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসিরউদ্দিন খানকেও নির্বাচন করার জন্য তার আদর্শিক নেতাকর্মীরা চাপ প্রয়োগ করছেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচন করলে তিনি প্রার্থী না হয়ে কর্মীদের নিয়ে তাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
বিএনপির হয়ে মনোনয়ন দৌড়ে যে চার সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম এখন পর্যন্ত আলোচিত হচ্ছে, তাদের কেউই আগে কখনো সংসদ নির্বাচন করেননি। তবে নেতাকর্মীদের ঐক্যের মাধ্যমে তারা যে কোনো মূল্যে হারানো এ আসন পুনরুদ্ধার করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সেক্ষেত্রে দলীয়ভাবে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষেই কাজ করার কথা জানিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ আসনে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করতে দুই উপজেলায় প্রচার চালাচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, জাসাসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খান, শিল্পপতি ফয়সল আহমদ চৌধুরী ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাওলানা রশীদ আহমদ। প্রত্যেকেই মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী উল্লেখ করে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যাকে নমিনেশন দেবেন তার পেছনে কাজ করবেন সবাই।
বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরীর নামও আছে আলোচনায়। তবে এখন পর্যন্ত তাকে এলাকার কোনো কর্মকা-ে দেখা যায়নি।
দলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুবার নির্বাচিত সাবেক এমপি ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন এ আসনে একটি ফ্যাক্টর হতে পারেন। বিএনপি ঘরানার এ শিল্পপতি ব্যবসায়ী গত বছর এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন থেকে ইস্তফার ঘোষণা দেন। কিন্তু একাদশ নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় আবারও প্রাক্তন অনুসারীদের টেলিফোনে প্রস্তুত করছেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক হলে তিনি নির্বাচন করবেন। বিএনপি নয়, আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হবেন।
এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী সিলেট জেলা দক্ষিণের আমির মাওলানা হাবীবুর রহমান। তিনি বিগত দুটি নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। জামায়াতের এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ’৭১ সালে মানবতাবাদী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে প্রতিনিয়ত তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। যদিও এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে হাবীবুর রহমান বলেছেন, জামায়াত করার কারণেই আমার শরীরে এ কালিমালেপন। তিনি বলেন, জোটগত নির্বাচন হলে এবারও জামায়াত এ আসন পাবে এবং বিজয়ী হব ইনশাল্লাহ।
জাতীয় পার্টির জৌলুস আগের মতো নেই। নেতাকর্মী হাতেগোনা, এর মধ্যে গ্রুপিং, দুই উপজেলায় পাল্টাপাল্টি কমিটি রয়েছে। এ আসনে নির্বাচন করার লক্ষ্যে কাজ করছেন পার্টির চেয়ারম্যানের বৈদেশিক বিষয়ক উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ মো. সেলিমউদ্দিন এমপি। বিগত নির্বাচনে এ আসনটি আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দিয়ে তিনি সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসন থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এবারও তিনি সিলেট-৫ এবং সিলেট-৬ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তা ছাড়া এ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী অ্যাডভোকেট এবাদ হোসেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা সভাপতি লোকমান আহমদের। ’৯১ সালে তিনি এ আসনে মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী মো. শামসুদ্দীন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগীয় কর্মিসমাবেশে তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি এর আগেও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আশানুরূপ ভোট পেয়েছিলেন। সূত্র : আমাদের সময়