খোলাবাজার২৪ঃ মঙ্গলবার, ১৫মে, ২০১৮ঃ ভারতের চলচ্চিত্র অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী অনেক দিন ধরেই পিঠের ব্যথায় ভুগছেন। ২০০৯ সালে ‘লাক’ ছবির একটি অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে পিঠে মারাত্মক ব্যথা পান তিনি। সেই দৃশ্যে মোটরসাইকেল থেকে মিঠুনের লাফ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময়ের একটু এদিক-ওদিক হওয়ায় তিনি লাফ দিতে গিয়ে পড়ে যান। এরপর থেকে পিঠে প্রচণ্ড ব্যথায় যন্ত্রণা পাচ্ছেন বলিউড ও টালিউডের প্রিয় ‘মিঠুনদা’। মাঝে অবশ্য কিছুটা সুস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু ইদানীং পিঠের ব্যথা তাঁকে খুবই ভোগাচ্ছে।
বড় পর্দায় আর আগের মতো সময় দিতে পারেন না মিঠুন। তবে ছোট পর্দার কয়েকটি অনুষ্ঠানে নিয়মিত বিচারক ও উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেক বছর ধরে তিনি ভারতের জি নেটওয়ার্কের জনপ্রিয় নাচের অনুষ্ঠান ‘ড্যান্স ইন্ডিয়া ড্যান্স’-এর গ্র্যান্ড মাস্টার হয়ে আসছেন। এ ছাড়া কলকাতার চ্যানেল জি বাংলায় ‘দাদাগিরি’ উপস্থাপনা করেছেন মিঠুন। কিন্তু পিঠের চোটে কাবু হওয়ায় কাজ থেকে সাময়িক বিরতি নেন। রাজ্যসভা থেকেও বিরতি নিতে হয়। বছর খানেক গণমাধ্যমে কোনো কাজ করেননি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে চিকিৎসা করতে যান এই অভিনেতা। সেখান থেকে ফিরে আবার ভারতের উটিতে তাঁর বাড়ি পুনরুদ্ধারে নেমে পড়েন। মিঠুনের এই বাড়ি নিয়ে অনেক দিন ধরেই ঝামেলা চলছিল।
এরপর সুস্থ হয়ে আবার কাজে যোগ দেন মিঠুন চক্রবর্তী। গত বছর ভারতের টিভি চ্যানেল সনিতে ‘দ্য ড্রামা কোম্পানি’ নামে একটি কমেডি অনুষ্ঠান শুরু করেন। তখন বলিউডে জোর গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল যে চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক রাম গোপাল ভর্মার ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় ফিরবেন ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ ছবির এই অভিনেতা। আরও শোনা গিয়েছিল, রাম গোপাল ভর্মার এই ভৌতিক ছবিতে সম্ভবত তিনি প্রধান চরিত্রে থাকবেন। ছেলে মিমোকে নিয়ে রাম গোপালের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁর বড় পর্দায় ফেরার কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম জানাচ্ছে, পিঠের ব্যথার চিকিৎসা করতে মিঠুন এখন দিল্লিতে আছেন। অবস্থার উন্নতি না হলে আবারও দেশের বাইরে যেতে হতে পারে।
মিঠুনের আসল নাম গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী। চলচ্চিত্রে এসে তিনি মিঠুন চক্রবর্তী নামে পরিচিতি পান। তাঁকে কলেজে সবাই ডাকতেন মিষ্টিদা বলে। কিন্তু মিষ্টি হাসির এই ছেলেকে বলিউডের অনেক পরিচালকের দরজা থেকে ফেরত আসতে হয়েছে তাঁর কৃষ্ণবর্ণের কারণে। দারোয়ানের ঘাড়ধাক্কা খাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা পর্যন্ত আছে তাঁর। অথচ গত শতকের আশির দশকে সবচেয়ে বেশি ছবিতে অভিনয় করার রেকর্ড এই মিঠুন চক্রবর্তীর দখলে। বাঙালি পরিচালক মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র ‘মৃগয়া’তে প্রথম অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান মিঠুন। এরপর বলিউডের নির্মাতারাও তাঁকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। এখন তিনি সবার প্রিয় দাদা। তবে এই পর্যায়ে আসতে মিঠুনকে অনেক চড়াই-উতরাই আর অবজ্ঞার শিকার হতে হয়েছে।
তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই অভিনেতা ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, ‘হাম সে হ্যাঁয় জমানা’, ‘গুলামি’, ‘বাদল’, ‘আম্মা’, ‘গুরু’, ‘গোলমাল থ্রি’, ‘অগ্নিপথ’, ‘বাঙালি বাবু’, ‘রাস্তা’, ‘নোবেল চোর’, ‘লে হালুয়া’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ৬৫ বছর বয়সী এই অভিনেতাকে সর্বশেষ দেখা গেছে বলিউডের ‘হাওয়াইজাদা’ ছবিতে। এই ছবিতে আরও ছিলেন আয়ুষ্মান খুরানা ও পল্লবী শ্রদ্ধা।